ছাত্রলীগ নেতাদের বিয়ে, চাকরির দালিলিক প্রমাণ প্রকাশ্যে

সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলেও তা নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে কমিটিতে অনেকেই চাকরিজীবী, নিষ্ক্রিয়, বিবাহিত, অছাত্র, মাদক মামলার আসামি, হত্যা মামলার আসামিসহ বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এসব অভিযোগের দালিলিক প্রমাণও ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

জানা গেছে, এসব দালিলিক প্রমাণ ছাত্রলীগেরই অনেক নেতা ফেসবুকে তুলে ধরছেন। তাদের অধিকাংশই পদ না পাওয়ায় ক্ষোভ থেকে এবং কমিটি নিয়ে অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে এ পন্থার আশ্রয় নিয়েছেন। এসব প্রমাণ তুলে ধরার পাশাপাশি তারা কমিটি নিয়ে নানা ধরণের সমালোচনাও অব্যাহত রেখেছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতার স্থান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এরমধ্যে সহ-সভাপতি আবু সাঈদের নাম উল্লেখ করে দাবি করেছেন, সাঈদ বিবাহিত এবং বয়স নেই। এছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে আজীবন বহিষ্কারে ছাত্রলীগের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিও তুলে ধরেছেন তিনি।

এছাড়া আরেক সহ সভাপতি এস এম হাসান আতিকের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, হাসান আতিক ৩৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম সোহাগ এক নেত্রীর নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পদ পাওয়ার পর পরই বিএনপি নেতার মেয়ের আমাকে হুমকি দেওয়া দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি। সেদিন যেমন বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই আওয়ামী লীগ সভাপতির মাথা ফাটিয়েছিল। বিষয়টা অনেকটা তেমনই। আমার দাদা-নানাকে গালি দিতে ইচ্ছে করছে, কেন তারা এলাকায় আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা না করলে তো আজ হয়তো এই পথে আসা হতো না।’

এছাড়া একটি ছবি দিয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের বিবাহিত সেই লাবণী।’ কমিটিতে উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে অংশ নেয়া আলোচিত আফরিন লাবণী। অপর এক স্ট্যাটাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর জেলায় ২২টি পদ পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এনায়েত হোসেন রেজা অনেকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ছেলের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘একভাগ শিবির-একভাগ ছাত্রদল-একভাগ বিবাহিত-একভাগ বয়সোত্তীর্ণ (২৯+), একভাগ বউ পিটিয়ে মারা সৈনিকরা পোস্ট পাইছে সেটা সমস্যা নয়; সমস্যা হলো আশিক নামে চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখার পদধারী একটা কর্মী পোস্ট পাইছে। ভিসির ছেলে বলে কি এলিয়েন জাদু হয়ে গেছে ?’

এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক রকিবুল ইসলাম সাকিবের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং এ সংক্রান্ত ছবি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন লিখেছেন, ‘ভাই আপনি জিতছেন। এই ছেলে বিবাহিত এর নাম রকিবুল ইসলাম সাকিব। সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোভন ও রাব্বানীর কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক হয়েছে।’

ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন দাবি করে ফেসবুকে প্রমাণ দিয়ে লিখেছেন, ‘চাকুরীজীবী! সৃজন ভুঁইয়া, সহ-সভাপতি। ভালোতো ভালো না...।’

তবে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বিরুদ্ধে। তিনি বিয়ে করেছেন বলে খোদ ছাত্রলীগেরই অনেক নেতা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করেছেন, গত বছর সম্মেলনের আগেই বিয়ে করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি।

এ ব্যাপারে জানতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আরো পড়ুন: নিজ ভাইকে বড় পদে বসালেন সভাপতি শোভন

আরো পড়ুন:ভাইয়ের পাঞ্জাবী ধরে বলেছি ‘আমাকে বাঁচান’