পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ পরামর্শ

২০১৯-২০ সেশন

উচ্চ মাধ্যমিক আর ভর্তি পরীক্ষার মাঝের চার-পাঁচ মাস লাইফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই কয়েকটা মাসের সঠিক ব্যবহার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। অনেকে সফল হয়েছেন এ যাত্রায়, তবে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনার ঝুঁকিটা বরাবরই বেশি। কারণ এ পথটা খুব একটা প্রশস্ত নয়। এ যাত্রায় ব্যর্থতার সংখ্যা বেশি হলেও ভেঙে পড়লে চলবে না। কারণ এখানে মোটামুটি সবার সুযোগ-সুবিধাই থাকে। তবে যারা সফল হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের আলাদা গল্প রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়াকে ভর্তিযুদ্ধ বলেন সিনিয়ররা। তবে এ যুদ্ধকেই কৌশল দিয়ে জয় করতে হবে।

যাইহোক, এইচএসসি শেষ হওয়ার পর প্রতিটি দিন কাজে লাগাতে পারলে সময় কিন্তু নেহায়েতই কম নয়। অনেকে তো আবার আগ থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। এইচএসসি শেষ করে যে চার-পাঁচ বাকি থাকে এ সময়টাতে কোচিং আর বাসায় হালকা ঘোরাঘুরিতে পার হয় তাদের। অন্যদিকে আবার কেউ কেউ হালকা ঢিলামি বা ভুল পথে গিয়ে স্বপ্ন চুরমার করে খালি হাতে বাড়ি ফিরে। একটি কথা প্রচলিত আছে, যেমন কর্ম তেমন ফল। জুন মাস থেকে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আপনারা যেমন কর্ম করবেন সেই অনুযায়ী ফল পাবেন।

মাধ্যমিক আর উচ্চ-মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট আপনাকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে ঠিকই কিন্তু খারাপ রেজাল্ট আপনাকে কখনো দমিয়ে রাখতে পারবে না। চাইলেই মেধার ঘাটতি পরিশ্রম দিয়ে পুষিয়ে দেয়া যায়। অনেকে তো এমন দেখবেন, ডাবল জিপিএ-৫ নিয়েও কোন পাবলিকে চান্স হবে না। কারণ একটাই, মেধাবী ঠিকি ছিলো অলসতায় তিনি আগাতে পারেননি। মনে রাখতে হবে, আজকের একটু আরাম বাকি জীবনের জন্য আফসোসের কারণ হয়ে যে না দাঁড়ায়। স্বপ্নকে জয় করতে হলে অবশ্যই পরিশ্রমের বিকল্প নেই। ভালো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারলেই যে আপনি চান্স পেয়ে যাবেন তা কিন্তু নয়। কোচিং সেন্টার আপনাকে ভার্সিটিতে চান্স পাইয়ে দিবে না, কিংবা আপনার ভর্তি পরীক্ষাও দিয়ে দিবে না। ভর্তি কোচিং সহায়ক মাত্র, সফল হতে হলে পরিশ্রম আপনাকে করতেই হবে।

জীবনে হতাশা, ব্যর্থতা, চাপ থাকবেই। তবে সেই চাপে গা বাসিয়ে দেয়া যাবে না, অন্তত এ সময়টায় না। সঠিক প্রস্তুতি না থাকলে অন্ধকারে ঢিল মেরে অনেক পাবলিকে চান্স পাওয়ার আশা করা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছু না। কেননা এ ধরনের পরীক্ষায় থাকে না কোন সুনির্দিষ্ট সিলেবাস। কোচিং সেন্টারের বিভিন্ন সীট, বই কিংবা সাজেশন কেবল একটা নিয়ম। সফলতার মূলমন্ত্র হচ্ছে পরিচ্ছন্ন পরিশ্রম। তাই এই দিনগুলোতে আপনাদের কাজ হল সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ পরিশ্রমের মানসিকতা তৈরি করা। কোন এক মনীষী মোটামুটি এভাবে বলেছিলেন- স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।

স্বপ্ন দেখা এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরিকল্পনা। আমরা অধিকাংশই পরিকল্পনা ছাড়াই মাঠে নেমে পড়ি। কি, কেন, কোথায়, কখন, কিভাবে ইত্যাদি বিষয়ের উত্তর না খুঁজেই আমরা পরিশ্রম করতে করতে গায়ের ঘাম ছুটিয়ে ফেলি। মনে রাখবে- পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি নয় বরং কৌশলগত পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।

তাহলে এ সফলতা ঠিক আসলে কিভাবে পরিশ্রম করলে পাওয়া যাবে? বা দৈনিক কত সময় পড়তে হবে? আসলে পড়ার সময় নির্ধারণ করাটা যার যার নিজের উপর নির্ভর করে। তবে আমি বলবো, যতক্ষণ ঘুমবেন না ততক্ষণ পড়বেন। তবে কোন ভাবেই ১২-১৪ ঘণ্টার কম পড়লে হবে না। সারাদিনের জন্য একটা রুটিন বানিয়ে ফেললে সব থেকে ভালো। রুটিন শুধু তৈরি করলেই হবে না, সেটা মেনে চলতেও হবে। ল্যাপটপ, ফেসবুক, ফ্রেন্ডশিপ, বার্থডে, মোবাইলের ফিস-ফিস ফোনালাপ সব বন্ধ। পড়ার প্রতি আপনাকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা থাকতে হবে। যা পড়ছেন তা যেন ফলপ্রসূ হয়।

বিশেষ করে মনোবল ঠিক রাখতে হবে। আর বেশি কিছু না, বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গুলোতে বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান মানবিক বিভাগে; বিজ্ঞান আর ব্যবসা শাখাতে তাদের বিভাগ ভিত্তিক কোশ্চেন হয়ে থাকে। এইচএসসির মূল সিলেবাস বেসিক ধরে কোচিংকে গাইডলাইন হিসেবে নিতে পারলে সফলতা সহজ হবে।

মনে রাখবেন ভর্তি পরীক্ষায় সব সময়, ‘Quality demands, not quantity’। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেন, পরীক্ষার পরে যাতে আপনার নিজেকে নিয়ে কোনো আফসোস না হয়। আপনার যাতে এমন মনে না হয়, যে প্রিপারেশন কম ছিলো, আরেকটু পড়লেই হয়তো চান্সটা পেয়ে যেতে ইত্যাদি। তাই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যে সময়টা হাতে থাকে, চেষ্টার কোন কমতি যেন না থাকে। অবশ্যই সকলের দোয়া ও তোমার আন্তরিক প্রচেষ্টায় যথাসময়ে তুমি নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।

লেখক: মারুফুল ইসলাম ফারাভী
রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়