একাদশে ভর্তিতে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ হচ্ছে কলেজ

একাদশে ভর্তিতে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে সরকারি কলেজগুলোকে। গত বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে উপর ভিত্তি করে এ, বি ও সি- এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেন কোনও বিভ্রান্ত ও প্রতারণার শিকার না হয় এ কারণে কোন কলেজ কোন শ্রেণিতে তা নির্ধারণ করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের সূত্রের বরাত জানা যয়,৬৫০ শিক্ষার্থী এবং পাসের হার যদি ৭০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে সেই কলেজ হবে ‘এ’ ক্যাটাগরির। ৬০০ শিক্ষার্থী এবং পাসের হার যদি ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ থাকলে তা হবে ‘বি’ ক্যাটাগরির। আর ৬০০ এর কম শিক্ষার্থী এবং পাসের হার ৫০ শতাংশের নিচে থাকা কলেজগুলো হবে ‘সি’ ক্যাটাগরির।

আন্ত শিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ক্যাটাগরি করার মাধ্যমে আমরা কলেজগুলোকে মূল্যায়ন করতে পারব। পরে আমরা দেখতে পারব, কারা নিচ থেকে ওপরে উঠে এসেছে। আবার কারা ওপর থেকে নিচে নেমে গেছে। যারা ভালো করতে পারছে না তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারব। আবার নিজের প্রয়োজনেই অনেকে মানের উন্নয়ন ঘটাবে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত ‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকলে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে চাইবে না। আর ৬০০ শিক্ষার্থীকে আমরা স্ট্যান্ডার্ড ধরেছি। কারণ এর কম শিক্ষার্থী থাকলে সেই কলেজ চালানো কষ্টকর।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি উপযোগী কলেজের সংখ্যা চার হাজার ৬০০-এর বেশি। এতে আসনসংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। রাজধানীতে দেড় শতাধিক কলেজ রয়েছে, যাদের আসনসংখ্যা ৫০ হাজারের ওপরে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০, যাদের আসন ২০ হাজারের বেশি হবে না।

আগের বছরগুলোর ভর্তির তথ্যানুযায়ী, বেশি আবেদন পড়া কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আছে ৭৫টি, রংপুর বিভাগে ৩২টি, বরিশালে ১৪টি, রাজশাহীতে সাতটি, চট্টগ্রামে ১৯টি, খুলনা বিভাগে ১৩টি এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি। সব কলেজ মিলিয়ে আসনসংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি হবে না। ফলে জিপিএ-৫ পেয়েও সবার পক্ষে মানসম্মত কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই।

এসএসসির ফল অনুযায়ী, এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৪ জন। জিপিএ ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে আছে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৮১৮ জন। জিপিএ ৪ থেকে ৩.৫-এর মধ্যে আছে চার লাখ আট হাজার ৬৭৯ জন। জিপিএ ৩ থেকে ৩.৫-এর মধ্যে আছে চার লাখ আট হাজার ৯৭১ জন।

জানা যায়, গত দুই বছর নতুন কলেজ অনুমোদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে মূলত দেদার অনুমোদন দেওয়া হয়। অনেক সময় যথাযথভাবে নীতিমালা মানা হয়নি। আবার রাজনৈতিক প্রভাবেও অনেক কলেজের অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়েছে বোর্ডগুলো। মূলত এসবের বেশির ভাগই এখন শিক্ষার্থী পাচ্ছে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অবশ্য বলেন, নীতিমালা মেনেই কলেজ অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে অনেক কলেজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসন নিয়ে রেখেছে, যাতে আসনসংখ্যা অনেক বেশি মনে হয়। আবার কিছু কলেজ আছে যারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এসবের বেশির ভাগই মফস্বলে অথবা রাজধানীর ভাড়া বাড়িতে চলছে। তবে যারা একেবারেই শিক্ষার্থী পাচ্ছে না তাদের ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ভর্তির আবেদন গ্রহণের জন্য বুয়েটের সহযোগিতায় আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। তবে শিক্ষার্থীদের মেধা ও প্রাপ্যতা অনুযায়ী কলেজ পছন্দ করা উচিত। অনেকেই আছে যারা চার-পাঁচটি কলেজ পছন্দ করে, সেটা ঠিক নয়। সবাই যদি ১০টা কলেজ পছন্দ করে তাহলে আমরা সকলকেই কলেজ পছন্দ করে দিতে পারব।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবারও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। অনলাইন বা এসএমএসের মাধ্যমে আগামী ১২ মে থেকে আবেদন নেওয়া শুরু হবে। অনলাইনে আবেদন ফি ১৫০ টাকা। তবে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে প্রতি কলেজের জন্য ১২০ টাকা ফি দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।