ছাত্রীদের হিন্দি গানের তালে নাচিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার মন জয়!

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে ছাত্রীদের দিয়ে হিন্দি গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের রাতের এমন আয়োজনে ক্ষুদ্ধ অবিভাবকসহ এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে পটুয়াখালীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

স্থানীয়রা জানায়, সোমবার দুপুরে রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধান শিক্ষকদের ত্রৈমাসিক সভায় অংশ নিতে আসেন পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন। নৈশভোজসহ রাত্রি যাপনের জন্য তিনি উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান।

তাকে খুশি করতে রাতে বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় নাচ-গানের। একটি কক্ষে ওই কর্মকর্তার উপস্থিতিতে হিন্দি গানের নৃত্য পরিবেশন করে মেয়েরা। এসময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইনসহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন ও প্রস্তাবিত মৌডুবি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম টুকু।

এদিকে মুহুর্তের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউনিয়ন শেষে উপজেলায়। এরমধ্যে কয়েকজনে সেই নৃত্য ভিডিও ধারন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অবিভাবক জানান, ‘অফিসারকে খুশি করতে এভাবে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নাচ-গান করানো ঠিক হয়নি। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়।’ তাছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ এলাকায় এমনিতেই বিদ্যুৎ নাই তার উপর এ ধরনের অনুষ্ঠান মোটেও শোভনীয় নয়।

পুরো বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন খান জানান, ছেলেমেয়েরা নাচগান করলে বাংলা হিন্দি মিলিয়েই করে। এতে দোষের কিছু নাই। কেন বিকালে না করে আয়োজনটি রাতে করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যেহেতু জেলা কর্মকর্তা স্যার এখানে রাত্রিযাপন করবে তাই আয়োজনটি সন্ধ্যার পর করেছি। আর আয়োজন বলতে তেমন কিছুই না। ২৬ মার্চের রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ আর একটু নাচ-গান এই তো।

তিনি বলেন, স্কুলের পাশের একটি মাদ্রাসা পরিদর্শন করতে এসেছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। রাতে কোথায় থাকবেন সেই চিন্তা করে আমরাই এই স্কুলে তাকে রাখার ব্যবস্থা করেছি। বিষয়টি কেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করানো হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্যারকে বললে আসতো না, তাই বলি নাই। তিনি আরো জানান, অনুষ্ঠানের সময় ৫০ জন শিক্ষার্থীসহ সেখানে অনেক অবিভাবক উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘নতুন একটা মাদ্রাসা পরিদর্শনে শেষে রাতে মৌডুবি স্কুলে অবস্থান করছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েরা নাচ ও গান শুনাবে বলেছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। প্রতিবেদকের কাছে এ ঘটনার ভিডিও জানানো হলে তিনি বলেন, “ওখানকার স্থানীয় বাচ্চারা নিজেরা একটু করেছে। কোন সমস্যা আছে? রাতের বেলায় স্কুলে কক্ষের মধ্যে হলে সমস্যা কি?

বেআইনি কিছু হয়েছে কিনা? আয়োজন আমি করিনি। এটা প্রতিষ্ঠান করেছে। তাদেরকে জিজ্ঞস করেন। আমি ছেলেপেলেদের দুই একটা উপদেশ বাণী দিয়েছি।

রাঙ্গাাবালী থানার ওসি মিলন কৃষ্ণ মিত্র জানান, তিনি এ ধরনের কোন অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাননি। তবে রাতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নাচ-গান করাসহ এসব অনুষ্ঠান করা ঠিক হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান জানান, ওইদিন সেই স্কুলে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে কেন প্রধান শিক্ষক রাতে এরকম আয়োজন করলো তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, এমনিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালী তার উপর সেখানে বিদ্যুৎ নাই। এমন পরিবেশে তিনি (প্রধান শিক্ষক) কেন এ আয়োজন করলো জানি না।

তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে আমাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানালে আমি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আয়োজনটি বন্ধের নির্দেশ দেই এবং সাথে সাথে সেখানে আগত সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেই।