অস্থির বরিশাল পলিটেকনিক, নেপথ্যে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার

বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গত কয়েক দিন ধরে হামলা, পাল্টা হামলা এমনকি ছাত্র-শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। আর এসব ঘটনার নেপথ্যে ছাত্রলীগ নামধারী দুটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে।

যদিও ২০১০ সাল থেকে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, এমন সংঘাত চলতে থাকলে ছাত্রলীগ কর্মী রেজা হত্যাকান্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৭ মে রাত সাড়ে ৯টায় বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকের সামনে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করা হয় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী রেজাউল ইসলাম রেজাকে। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘবছর ছাত্রাবাসে থেকে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতৃত্ব দিতেন তিনি। রেজা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিমউদ্দিনসহ (পরে চার্জশিট থেকে বাদ) তার অনুসারীরা। এর আগে পলিটেকনিকে এক ছাত্রকে গলা কেটে হত্যা চেষ্টার ঘটনাও সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি ফের ছাত্রলীগের নামে আধিপত্যের লড়াই চলছে। গত এক সপ্তাহে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী দুটি পক্ষ নিজেদের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা ছাড়াও মারধর করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতাকর্মীদের। এমনকি ইনস্টিটিউশনের শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করা হয়। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নামধারী দুটি পক্ষের একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কম্পিউটার বিভাগের ইন্টার্ন ছাত্র (অষ্টম পর্ব) হাসিবুল ইসলাম শান্ত, অপরটির নেতৃত্বে এক বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া সাজ্জাতুল ইসলাম শান্ত। সাজ্জাতুল মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রাবাস এবং হাসিবুল একুশে ছাত্রাবাস নিয়ন্ত্রণ করছেন কয়েক বছর ধরে। সূত্র জানায়, পুরো ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া দুজনই বহিরগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে।

জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিমউদ্দিন বলেন, পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছে ২০০৩ সালে। ২০১০ সালে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হলে এ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী হাসিবুল ও সাজ্জাতুল ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করছে। তারা আসলে ছাত্রলীগের কেউ নন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের পলিটেকনিক শাখার সভাপতি নাসরিন আক্তার টুম্পা বলেন, গত বুধবার ক্যাম্পাাসে ছাত্রফ্রন্টের পাঠচক্র সভা চলাকালে সেখানে হামলা ও মারধর করে সাজ্জাতুল আহম্মেদ শান্তর অনুসারীরা। পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে সাজ্জাতুল ও হাসিবুল ইসলামের অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি হামলা করে ক্যাম্পাসে অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। ইলেকট্রমেডিকেল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিফ ইন্সপেক্টর মো. আনিচুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেছে সাজ্জাতুলের অনুসারীরা। টুম্পা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ নামধারীরা তাদের সাংগঠনিক কাজ চালাতে দেয় না। 

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সাজ্জাতুল আহম্মেদ শান্ত বলেন, আমি ৩ থেকে ৪ বছর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করি। সংগঠনের ব্যানার ফেস্টুন ব্যবহার করি। কমিটি নেই এসব নিয়ে কে কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না’। ক্যাম্পাসে অস্থিরতার জন্য সাজ্জাতুল অপর গ্রুপের হাসিবুলকে দায়ী করেন।

অপরদিকে হাসিবুল হাসান শান্ত বলেন, পলিকেটনিক ছাত্রলীগ তার নেতৃত্বে চলছে। সব ছাত্র তাকে নেতা মানে। অন্যরা অন্যায়ভাবে ছাত্রলীগ দাবি করছে। ছাত্রলীগ নাম ব্যবহারের বৈধতা প্রসঙ্গে বলেন, মহানগর ছাত্রলীগই অবৈধ। তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা নেই বিধায় আমরা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছি।

এ ব্যাপারে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ রূহুল আমিন বলেন, পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। সাবেক ছাত্ররা ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে। পরিবেশ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।