দুই শিক্ষার্থীর আবিষ্কার

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রতিরোধে ডিভাইস!

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রতিরোধে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মো. আলমাস হোসাইন শাজা ও মো. ইউসুফ জামিল রনি আবিষ্কার করেছেন এক অভিনব প্রযুক্তি। তাদের আবিষ্কৃত ‘বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ফর প্রিভেন্টিং ইলিগ্যাল ম্যারেজ’ যন্ত্রের  মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও প্রতারণার মাধ্যমে বহুবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। এই অভিনব আবিষ্কার নিয়ে কথা হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হাবিবুল্লাহ আল মারুফ-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডিভাইসটি তৈরি করার চিন্তা মাথায় আসলো কিভাবে?
আলমাস হোসেন: কোন কিছু তৈরির পিছনে কোন না কোন কারণ অবশ্যই থাকে। আমার দেখা বিবাহ নিয়ে প্রতারণার বাস্তব জীবনের অপ্রীতিকর ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকেই মূলত এটি আবিষ্কারের চিন্তা মাথায় আসে। এই ধারনাটা আমার বন্ধু রনি ইউসুফ জামিল সাথে শেয়ার করি। এখান থেকেই মূলত আমাদের আবিষ্কারের যাত্রা শুরু হয়।
রনি ইউসুফ জামিল: ধারণাটা মূলত আলমাসের মাথায় আসে। তারপর আমরা দু’জনে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এটা তৈরি করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডিভাইসটি আবিষ্কারের পেছনে কেউ কি সহযোগিতা করেছে ?
আলমাস ও রনি: ডিভাইসটি তৈরিতে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। তবে আমাদের বিভাগের সম্মানিত মোঃ মাইন উদ্দিন স্যার (সহকারী অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাইন উদ্দিন) আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। স্যারের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে কাজটি  আমরা শুরু করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডিভাইসটি কিভাবে কাজ করে?
আলমাস ও রনি: এই ডিভাইসের মাধ্যমে ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানের ভিত্তিতে বিবাহে ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রী সাক্ষীসহ অন্যান্য সকলের তথ্য  ডাটাবেজ সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে। এর মাধ্যমে বিয়ে নিবন্ধন, বর-কনের পূর্বোক্ত বৈবাহিক অবস্থা ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সহজেই জানা যাবে। পাশাপাশি জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী ছেলেদের ২১ এবং মেয়েদের ১৮ বছরের নিচে কেউ বিয়ে করার চেষ্টা করলে ডিভাইসের মাধ্যমে তা সনাক্ত করা যাবে। ডিভাইসটি ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য গোপন করে বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।  

 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস:  বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রতিরোধে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন?
আলমাস ও রনি: আমরা জানি, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ আমাদের বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যা। রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়তই প্রকাশ্যে বা গোপনে মিথ্যে তথ্যের মাধ্যমে শত-শত বহুবিবাহ বা বাল্যবিবাহ সংগঠিত হচ্ছে। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি সমাজ ও সভ্যতা নানাবিধ অপরাধে নিমজ্জিত হচ্ছে। এইসব অপরাধ রোধ ও সুষ্ঠু বৈবাহিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করাই আমাদের প্রাণপণ প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরে বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের অভিশাপমুক্ত সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডিভাইসটির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে কোনো ফি লাগবে কিনা?
আলমাস ও রনি: আমাদের সিস্টেমে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য একটি ফি নির্ধারণ করে দেয়া হবে। নিবন্ধন ফি সরাসরি কাজীর হাতে না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা চাকুরী আবেদনের সিস্টেম অনুযায়ী নির্ধারিত নিবন্ধন ফি রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর/মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করে বিবাহ নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে।  এর মাধ্যমে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ এবং বিবাহ সম্পর্কিত প্রতারণা দূর হবার পাশাপাশি রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতে পারে। এতে করে রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে সংযোগ সাধনসহ দায়িত্ববোধের সৃষ্টি হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডিভাইসটির বাজার মূল্য কেমন?
আলমাস ও রনি: আমরা ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানের জন্য যে ডিভাইসটি ব্যবহার করি তার মূল্য ১০ হাজার ২০০ টাকা। এর বাইরে ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ব্যবহারের বাইরে তেমন কোন খরচ নেই। এক্ষেত্রে ১০ হাজার ২০০ টাকাও যথেষ্ট বেশি। সেটা কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে এপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে যার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশনের ন্যায় নির্ধারিত ট্যাবে আমাদের সিস্টেমটি ব্যবহার করা যাবে। এতে ব্যক্তিগত ল্যাপটপের ঝামেলাও থাকবে না। প্রত্যেক কাজীর কাছে সরকারিভাবে নিবন্ধিত ট্যাব ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার থাকবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে ডিভাইসটি নিয়ে আপনাদের কিছু বলার আছে?
আলমাস ও রনি:  গ্রাম ও শহর অঞ্চলে বিয়ে নিয়ে অনেক প্রতারণার কথা প্রায়শই শোনা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, উক্ত ছেলে/মেয়ে পূর্বেই বিবাহিত থাকে এবং দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে তাদের স্ত্রী-সন্তানও থাকে। এভাবে প্রতারণার ফাঁদে অনেক মেয়ে/ছেলের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাবো, এ ডিভাইসটি যেন সার্বজনীন করে সাধারণ জনগণের কাছে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদেরকে ধন্যবাদ। 
আলমাস ও রনি:   আপনাকেও ধন্যবাদ।