জেএসসি-জেডিসি

থামল না প্রশ্নফাঁস চক্রের দৌরাত্ম্য

ফাইল ছবি

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সকাল ১০টায় জেএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র এবং জেডিসিতে কুরআন মাজীদ ও তাজবিদের মাধ্যমে সারাদেশের ২ হাজার ৮৩৪টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয়েছে এই পরীক্ষা। যা আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। তথ্যমতে, এ বছর ২৯ হাজার ৬৭৭টি প্রতিষ্ঠানের ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে ক্ষুদেদের এই পরীক্ষা সুষ্ঠ করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের সকল কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা দিলেও অনলাইনকে ঘিরে চলছে প্রশ্নফাঁসের গুজব। খোঁজে জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবারের মত এবারও ফেসবুকে সক্রিয় হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রুপ। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনও সুযোগ নেই। তাদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করছে। কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আর ঢাকা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ জিয়াউল হক বলছেন, সম্পূর্ণ অনুকূল, ইতিবাচক ও শিশুতোষ পরিবেশে এবারের পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে পরীক্ষা সামনে রেখে গত কয়েক বছর ধরে নানা গুজব ছড়ানো হয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে ও সরকারকে বিব্রত করতে নানা গুজব ছড়ায়। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে অসাধু চক্রের প্রলোভন

 

তবে এতকিছুর পরও প্রশ্নফাঁসের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব মহলে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বলছেন, অতীতের পাবলিক পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঠেকানো না যাওয়ায় আসন্ন জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা। রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও জেএসসি পরীক্ষার্থীরা অভিভাবক নুরুল ইসলাম জানান, প্রশ্নফাঁস তো নিয়মে পরিণত হয়েছে। আশ্বস্ত হতে পারছি না। এবার দেখা যাক- কী হয়?

কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার লক্ষ্যে সারা বছর কঠোর অনুশীলন করতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করে পরীক্ষার আগের দিন কিংবা পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেলে তা আমাদের জন্য অভিশাপ। এতে সামান্য সংখ্যক পরীক্ষার্থীর লাভ হলেও অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।

জানা যায়, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেএসসি-জেডিসির ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬০১ জন ছাত্রী এবং ১২ লাখ ২৩ হাজার ৭৩২ জন ছাত্র। এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮৬৯ জন ছাত্রী বেশি। আট বোর্ডের অধীনে এবার জেএসসিতে ২২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৩ জন এবং মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ৪ লাখ ২ হাজার ৯৯০ জন পরীক্ষা দেবে। গত বছর এই পরীক্ষায় ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২০ জন অংশ নিয়েছিল। এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৫১৩ জন।

শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ অন্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা এবারও অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই তারা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। এছাড়া অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম এবং সেরিব্রাল পলসিজনিত প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক, অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেওয়া সুযোগ দেওয়া হবে।

পরীক্ষায় বিঘ্ন না ঘটানোর আবেদন: চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের আহবান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন কোন কর্মসূচী না দিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আবেদন জানিয়েছে ফ্রন্ট। বুধবার ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ পরীক্ষায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতি জাতীয় শিক্ষককর্মচারী ফ্রন্ট আহবান জানিয়ে তাদের যথাযথ নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে একথা উল্লেখ করে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন কোন কর্মসূচী না দিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে।

তাছাড়া পরীক্ষার দিনগুলোতে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে যথার্থ বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিনষ্টকারী প্রচলিত কোচিং ব্যবস্থা স্থায়ী ভাবে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফ্রন্ট।