উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন সংসদে পাসের অপেক্ষায়

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রণীত হচ্ছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪। ইতিমধ্যে এ আইনের চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনটি পাসের জন্য বর্তমানে বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অব্যাহত শিক্ষার আওতায় দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য এই আইন প্রণীত হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের সার্বিক সাক্ষরতার হার এবং জাতীয় আয়ও বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

প্রস্তাবিত আইনে দেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও প্রতিবন্ধীদের স্কুল সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। নতুন করে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে এই কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। এই কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা এসব স্কুলের শিক্ষা পাঠ্যক্রম নির্ধারণ ও শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করবে এবং তাদের দেয়া সার্টিফিকেট স্কুল-কলেজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই কর্তৃপক্ষই এসব ছাত্রের জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষার (জেএসসি) আয়োজন করবে এবং সার্টিফিকেট বিতরণ করবে।

প্রস্তাবিত আইনে প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে- উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা এবং উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা। উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার বয়সসীমা হবে ৮ থেকে ১৪ বছর এবং উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার বয়সসীমা হবে ১৫ ও তার বেশি। এসব স্কুলে একই ধরনের পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা হবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট দিলে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলো তা গ্রহণযোগ্য করতে বাধ্য থাকবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কাজী আখতার হোসেন জানিয়েছেন, দুটি কারণে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন করা হচ্ছে। এডুকেশন ফর অল (ইফা) স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ আইন করতে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। আর নতুন আইনের মাধ্যমে একটি সমন্বিত পদ্ধতি ও কারিকুলাম অনুসরণ করা হবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচাললক জহিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই আইন চালু হলে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপনকারীদের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মতো সনদ প্রদান করা হবে। এতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণীতেও ভর্তি হতে পারবে। এর আগে এ আইন গত ২৩ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়।

ওই সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, আইনটি বাস্তবায়ন করবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। তবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শিক্ষাক্রম তৈরি, মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে এর সামঞ্জস্য রাখা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড। আইনটি হলেই এই বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক হবেন বোডের চেয়ারম্যান।

কেউ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। তিনি আরও বলেন, যেসব শিশু মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উপযুক্ত কিন্তু বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, তাদের জন্যই এ আইন করা হচ্ছে। অনেক দিন ধরেই আইনটির কাজ হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ৬ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটি নিয়ে আলোচনা হয়। তখন কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছিল। অনুমোদনের আগে আইনের খসড়া সরকারের প্রায় ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা বসে তৈরি করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে এনজিও পরিচালিত স্কুলের সংখ্যা ১ হাজার ১৬৪টি। আর প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে ৯৬টি স্কুল।