স্কুল থেকে শান্তি কমিটি প্রধানের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ

স্কুল থেকে শান্তি কমিটি প্রধানের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ
লোগো

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন মাইজপাড়ায় অবস্থিত ‘মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়’ এর নাম থেকে মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। স্কুলটির প্রধান শিক্ষককে দেওয়া বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর চিঠিতে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতাকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পতেঙ্গা থানা কমান্ড ইউনিট ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ চট্টগ্রাম এর আবেদন এবং বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ জ্ঞানকোষে প্রাপ্ত তথ্য ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মাহমুদুন্নবী চৌধুরী শান্তি কমিটির প্রধান হিসেবে মুক্তিয্দ্ধুবিরোধী কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

ফলে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে বিদ্যালয়টি থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর নাম বাদ দিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে যৌক্তিক নাম প্রস্তাব করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

এর আগে ২০১২ সালের ১৪ মে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক, অবকাঠামো থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী ব্যক্তিদের নাম মুছে দেওয়ার আরজি জানিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন।

আরও পড়ুন: কুবির গেইট থেকে খালেদা জিয়ার নামফলক মুছে দিয়েছে ছাত্রলীগ

এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট ৬০ দিনের মধ্যে সকল স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নাম মুছে ফেলার আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে মাহমুদুন্নবী চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বিদ্যালয়ের নাম থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মাহমুদুন্নবী চৌধুরী নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী প্রেরিত এক চিঠিতে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়।

বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষের সূত্র ধরে পাঠানো চিঠিতে শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়টি যার নামে নামকরণ করা হয়েছে তার জীবনবৃত্তান্ত ও মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকার প্রামাণ্যপত্রসহ লিখিত বক্তব্য বোর্ডে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

জানা যায়, ২০০২ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পিতা মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে বাংলাপিডিয়ার যে সূত্র দেয়া হয়েছে সেখানে একটি অংশে উল্লেখ আছে, মাহমুদুন্নবী চৌধুরী ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)-এর চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটির (ডাক) মাধ্যমে তিনি আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। 

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পিডিপি’র প্রার্থী হিসেবে এমএনএ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। মাহমুদুন্নবী চৌধুরী অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। ১৯৯৫ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামে তার মৃত্যু হয়।