ক্যাম্পাস খোলা নিয়ে যা ভাবছেন রাবি শিক্ষার্থীরা

  © টিডিসি ফটো

করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এরপর কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। এদিকে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস বাড়িতে অলস ও বিষন্ন সময় পার করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে অনেক শিক্ষার্থী।

এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক অনেকেই স্বাস্থবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ঝুঁকির আশঙ্কায় খোলার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। ক্যাম্পাস খোলা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা কি ভাবছেন, বিষয়টি জানার চেষ্টা করছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরছেন রাবি প্রতিনিধি রায়হান ইসলাম- 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র সাদমান সাকিব নিলয় বলেন, করোনার এই  দুঃসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত দিয়েছেন। সেটা ব্যক্তি বিশেষে বেশিরভাগই যৌক্তিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অস্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা। করোনাকালে যাদের অনেকেরই আর্থিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি কিংবা ছোটখাটো কাজের মাধ্যমে সংসারের চাপ কমাতে সাহায্য করত। তাই আমি মনে করি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত হবে।

ইনফরমেশন এন্ড কমিনিউকেশন ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া নাজনীন বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের পদচারণার জায়গা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাই হল ও মেসে প্রতিনিয়ত জটলাবেঁধে অবস্থান করতে হয়। ক্লাসে নেই নিরাপদ দূরত্বের ব্যবস্থা। খাবার হোটেল, ফুটপাতের মতো ঝুঁকিপুর্ণ দোকানপাটে চলবে আড্ডা। অনেক ক্যাম্পাসে নেই কোয়ারান্টাইন ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে সামাজিক দূরত্ব মেনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এত ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাস না খোলাটাই হবে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।

অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আব্দুল আলিম বলেন, করোনাকালে ঘরবন্দী থেকে থেকে অনেকটা অলস হয়ে যাচ্ছি। হাট-বাজার, দোকানপাট,গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুই চলমান, চালু নেই শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা যেন শুধু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমি মনে করি।

দর্শন বিভাগের ছাত্র মাহাদী হোসাইন বলেন, করোনা আক্রান্তের হার দেশে এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তার মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আবাসন সংকট। মেসগুলোর অবস্থাও একই রকম। তাই এই মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমি মনে করি, এ ব্যাপারে আমাদের আরো বিবেচনা করা দরকার।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নবনীতা রায় বলেন, করোনা এখন শুধু ঢাকা শহরেই আবদ্ধ নয়। গ্রাম পর্যায়েও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অনেকেই মাস্ক পড়তেও অভ্যস্থ হতে পারছেনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক সার্বিক স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারে।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও চরম অবনতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তাই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ক্যাম্পাস খোলার কোন বিকল্প দেখছি না। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে  প্রশাসন কর্তৃক কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনার এই দুর্যোগকালে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাস খোলা কতটা নিরাপদ এবং সকলের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করাই বা কতটা সম্ভব হবে সেই বিষয়গুলো আমাদের সর্বদা ভাবায়। কারণ সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা এবং ভাইভা নেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা দায় মুক্ত হবে বলে আশা করি।

দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সমস্ত ক্যাম্পাস খোলা মনে হয় না খুব ভাল কিছু বয়ে আনবে। কারণ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আর একটু সময় পর্যবেক্ষণ করাই মনে হয় যুক্তিযুক্ত হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যদি মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে। তাহলে তো আমাদের সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিষয়টি যথাযথ পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করবে।


সর্বশেষ সংবাদ