ফেসবুক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিন— মাহবুবকে সাবেক সচিব

ওএসডি হওয়া অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবিরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মস্থলে নানা উদ্যোগ নিয়ে সফল হওয়া মাহবুব কবিরকে সম্প্রতি বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করেছে সরকার। বিভিন্ন সময় ফেসবুকে করা তার নানা মন্তব্যই (স্ট্যাটাস) এর কারণ মনে করছেন অনেকেই।

সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবিরের বদলিকে ঘিরে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার এই লেখালেখিকে যৌক্তিক বলে মানছেন না সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি মনে করেন, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে মাহবুব কবিরের ফেসবুকে এমন লেখালেখি অনুচিত।

একটি শীর্ষ দৈনিকে মো. মাহবুব কবিরের সরকারি দায়িত্ব পালন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকার বিষয় বিশ্লেষণ করেন মুহাম্মদ ফাওজল কবির খান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘মাহবুব কবিরের আবেগকে আমি সমর্থন করি। দুর্নীতি আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তাঁর পদ্ধতি সম্পর্কে আমার দ্বিমত আছে। প্রথমত, তিনি ১০ জন বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা নিয়ে দুর্নীতি নির্মূল করবেন—এটা বাস্তবসম্মত নয়। কম দুর্নীতির জন্য প্রখ্যাত সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ একবার বলেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে যাঁরা সিঙ্গাপুর চালান, তাঁরা সবাই অনায়াসেই একটি মাঝারি আকারের বিমানের ধারণক্ষমতার মধ্যে আসন নিতে পারবেন। এ কথাটার মধ্যে মাহবুব কবিরের বক্তব্যের খানিকটা স্বীকৃতি আছে। তা হলো, ভালোভাবে দেশ চালাতে খুব বেশি লোকের প্রয়োজন হয় না।’

তিনি আরো লিখেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিন। অন্তত দপ্তরের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু না বলাই ভালো। আমি (মুহাম্মদ ফাওজল কবির খান) মাহবুব কবিরের ফেসবুক প্রোফাইল দেখেছি। সেখানে বলা আছে, তিনি একজন ‘পাবলিক ফিগার’। একজন সরকারি কর্মকর্তা ‘পাবলিক সারভেন্ট’, কোনো অবস্থাতেই ‘পাবলিক ফিগার’ নন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকুন দুর্নীতিপরায়ণ, অপদার্থ, চামচা, তেলমর্দনকারী ও আত্মজাহিরকারী কর্মকর্তারা। নিজেরা না পেটালে তাঁদের ঢোল পেটাবার কেউ নেই।’

মুহাম্মদ ফাওজল কবির খান মনে করেন, ভালো কাজ করা সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের দায়িত্ব। এটি আলাদা করে বলার বিষয় নয়। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের নামহীন ও গর্বহীন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে লেখেন, ‘মাহবুব কবিরসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তা যাঁরাই ভালো কাজ করতে চান, তাঁদের প্রতি আমার পরামর্শ হবে, নামহীন ও গর্বহীন হোন।’

রেলমন্ত্রণালয়ে মাহবুব কবিরের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করে মুহাম্মদ ফাওজল কবির লেখেন, “মাহবুব কবিরকে ওএসডি করায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পোশ্য সমিতির এক নেতা। তাঁর বক্তব্য, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধের নামে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীদের বিমুখ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ট্রেনের টিকিট ১০০ শতাংশ অনলাইনে দেওয়া, টিকিট কাটতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হলে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন, রেলওয়ের শ্রমিক কর্মচারীরা অধিকারবঞ্চিত হবে। কী অকাট্য যুক্তি! অনুমান করি, এটাই মাহবুব কবিরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেলের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের স্বার্থহানি করতে গিয়েই মাহবুব কবিরকে ওএসডি হতে হলো।”

শেষদিকে তিনি লেখেন, ‘ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্য থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, মাহবুব কবির যেসব সরকারি দপ্তরে কাজ করেছিলেন, সেসব দপ্তর সম্পর্কে তিনি একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এটা একটা বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। যেখানে যোগাযোগ, স্বাস্থ্য খাত, আইনশৃঙ্খলা, ব্যাংকসহ প্রায় সব সরকারি খাত; নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুদক সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে মাহবুব কবিরের মতো কয়েকজন আবেগপ্রবণ কর্মকর্তাকে জনস্বার্থে কাজ করতে দিলে ক্ষতি কী? এর ফলে অন্তত সরকারের তলানিতে থাকা ভাবমূর্তির খানিকটা হলেও চুনকাম হবে। এবং তা সরকারের জন্যই ভালো হবে।’

‘সরকারকে নিজের ভাবমূর্তি বনাম সিন্ডিকেট স্বার্থের ভারসাম্য বিষয়ে ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সুমতি আশা করছি। মাহবুব কবিরকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে তাঁর পূর্বতন পদে ফিরিয়ে নেওয়া হবে—এটাই নাগরিক প্রত্যাশা।’

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির কর্মজীবনের শুরুর দিক থেকেই সফল এবং পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। তিনি যখন যে মন্ত্রণালয়ের যে দফতরে কাজ করেছেন সেখানে দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে দুর্নীতির হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।


সর্বশেষ সংবাদ