কে এই মাহবুব কবির মিলন, ওএসডি কেন?

মাহবুব কবীর মিলন
মাহবুব কবীর মিলন

অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করায় সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। মাহবুব কবির মিলন তার ভেরিফাইড ফেসবুকে 'ওএসডি হলাম' লিখে আদেশের কপিটি শেয়ারের মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে ১১ হাজারের অধিক মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ সময় ২ হাজার ৬০০টি মন্তব্য ও ২ হাজার ২০০ জন শেয়ার করে। অধিকাংশ পাঠকই ওএসডির আদেশে ক্ষোভ, হতাশা প্রকাশ করে ওএসডির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

কিন্তু কে এই মাহবুব কবির মিলন। কেনই বা তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হলো।

এর আগে ১০ জন ‘সৎ  কর্মকর্তাকে’ নিয়ে দেশে সকল খাতে দুর্নীতি নিরসনের একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন সময়ের আলোচিত সরকারি কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবির মিলন। একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতাম তবে বলতাম, স্যার আমাকে ১০ জন অফিসার দিন। এদের আমি চুজ করব, এদের নিয়ে আমি একটা উইং করব। মানুষের চোখের পানি দূর করার জন্য সব মন্ত্রণালয়, সব দফতর, সব অধিদফতরের বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করব আমরা এই ১০ জন।’’ তথ্যমতে, সর্বশেষ ‘জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ট্রেনের টিকিট কেনা যাবে না,’-এমন একটি নিয়মের প্রবর্তন করতে যাচ্ছিলেন তিনি।

গত মার্চ মাসে যশোরের মণিরামপুরে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে লাঞ্ছিত করেন এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মাহবুব কবির মিলন। তিনি বলেন— ‘আমি অনুতপ্ত, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের মেয়েটির ভুলের দায় আমার, আমাদের। আমরা হয়ত পারিনি, আমাদের সন্তানদের অন্তরের গভীরে ঢুকে মানবিক মূল্যবোধ জাগাতে। আমরা পারিনি যথাযথ আদব কায়দা শেখাতে। আমরা পারিনি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সেবক হতে। আমরা পারিনি আমাদের সন্তানদের নৈতিক অবক্ষয় আর মূল্যবধের পতন ঠেকাতে। আমরা পারিনি তাঁদের সত্যবাদী হয়ে গড়ে তুলতে। এ দায় একান্ত আমার’।

পুরো স্ট্যাটাসটি পড়তে ক্লিক করুন: প্লিজ আমার মেয়েটিকে আর লজ্জিত করবেন না

মাহবুব কবীর এর আগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিছু সময়ের জন্য ছিলেন কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও। এ সময় তিনি ভেজাল ও নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে আলোচিত হন।

মাহবুব কবির নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব পালনকালে বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির ভেজাল ও ক্ষতিকর কোম্পানির পণ্য আটকে দেন। তার প্রচেষ্টায় বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার এমবিএম আটক রয়েছে। সম্প্রতি তিনি কৃষিপণ্যের জন্য আমদানিকারক ৪১টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিকর পণ্য শনাক্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

এর আগে রেলওয়ের যাত্রীসাধারণের কাছে মাহবুব কবির মিলন বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। রেলকে জনবান্ধব করতে তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে আছে, টিকিট কাটতে এনআইডি বাধ্যতামূলক করা, অনলাইনে টিকিটের টাকা রিফান্ড করা, রেলসেবা অ্যাপের মাধ্যমে ফটো/ভিডিও যুক্ত করে তাৎক্ষণিত অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

এছাড়া মাহবুব কবির মিলনের প্রচেষ্টার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা বিকাশ তাদের নিরাপত্তায় ব্যাপক পরবর্তন এনেছে। এর ফলে প্রতারকেরা আর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরির সুযোগ পাবে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তবে হতাশা হচ্ছে ওই জায়গায়, আমরা পারা জিনিস অনেক সময় করি না। পারা জিনিসও অনেক সময় পারব না মনে করে বসে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বলে আমরা দুর্নীতি দূর করতে পারব না, কেউ যদি বলে সিন্ডিকেট ভাঙা যায় না, আমি ওটারই চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, আমার তিন মাস সময়ই যথেষ্ট, যেকোনো ডিপার্টমেন্টের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য। এনাফ টাইম।

ফেসবুকাররা যা বলছেন: ড. কিবরিয়া খন্দকার লিখেছেন, আমরা কি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারিনা। ফেসবুকের তুমুল শেয়ার করুন আর সবাই প্রতিবাদ করুন এটা অন্যায় এটা অন্যায় দেশের সাথে অন্যায়। আমাদের রেলওয়েকে বাঁচাতে হবে আমাদের দেশকে বাঁচাতে হবে। চলুন সবাই মিলে আমরা আন্দোলন করি। অবশ্যই এটা বাতিল করতে হবে।

মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন লিখেছেন, খুবই দুঃখজনক। আল্লাহ আপনার সহায় হোক। ৩ মাস সময় চেয়েছিলেন দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে, অথচ আপনাকেই সরিয়ে দিলো। আর এটা করে কর্মকর্তাদের একটা মেসেজ দিলো!

আহসানুল আলম সজীব লিখেছেন, মিলন স্যারের পোস্টটা কপি করে রেখেছিলাম মার্চ মাসে। আমরা এই মুজিব বর্ষেই ফুড সেইফটি রিলেটেড অনেক বিষয় সমাধান করব ইনশাআল্লাহ। ভোজ্যতেল এবং ডাল্ডা ও বনস্পতির ট্রান্স ফ্যাটি এসিডের সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ, কীটনাশকের হেভি মেটাল, ট্যানারি বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, লেড মুক্ত ব্যাটারি প্রবর্তন সহ খাদ্য শৃঙ্খলের সব ধরণের হ্যাজার্ড দূর করা সহ একটি ভাল অবস্থানে যেতে পারব ইনশাআল্লাহ।

বোরো সিজন এবং কৃষি উতপাদন যাতে ব্যহত না হয়, সেজন্য সময় দিয়ে আগামি ১ জুলাই থেকে কীটনাশকের সব চালান পোর্টে আসার পর হেভি মেটাল পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই তারিখ আর পরিবর্তন করা হবে না। আমি কোথাও বদলি হইনি। এখনো আছি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে। যে কয়দিন আছি সন্তানদের জন্য যুদ্ধ করেই যাব।


সর্বশেষ সংবাদ