হোস্টেল মালিকদের হঠকারি সিদ্ধান্তে বিপাকে ছাত্রীরা

  © প্রতীকী ছবি

রাজধানীতে এবার হোস্টেল মালিকদের হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীরা। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও টিউশন বন্ধ হওয়ায় গ্রামে চলে যান অনেক শিক্ষার্থী। এসময় ভাড়া বাড়িয়ে দিতে না পারলে সিট বা বাসা ছাড়ার জন্য চাপে পড়ে অনেকে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

অন্যদিকে মালিক হোস্টেল ছেড়ে দেয়ায় ভুক্তভোগীরা এতে কোনো উপায় না পেয়ে জিনিসপত্র রাখার জন্য আবার চড়া ভাড়াতেই নতুন বাসা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নির্মম এই করোনা পরিস্থিতিতে থেমে নেই তাদের পাশবিকতা। 

গত মার্চে বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেই স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় রাজধানীর বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানোর তাণ্ডবে একদিকে যেমন ভাড়াটিয়ারা হতাশায় দিন পার করছেন, অন্যদিকে আবাসিক হোস্টেলের ছাত্রী কিংবা কর্মজীবী নারীরাও পড়েছেন বিপাকে। নানা ভোগান্তির মুখোমুখি হয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীকে।

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া ইসলাম (ছদ্মনাম) থাকেন ফার্মগেটের তেজতুরি বাজারের নিবেদিকা (ভিআইপি) হোস্টেলে। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, সারাদেশে লকডাউনে যাবে, এই কথা শুনে মার্চের ২৪ তারিখে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ যান। তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে প্রতি মাসের ভাড়া বিকাশে হোস্টেল মালিককে পরিশোধ করেছি।

গত মাসে হোস্টেল মালিক জানান, হোস্টেল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। আমাকে নতুন বাসা দেখতে হবে। আমি একথা শুনে তড়িঘড়ি করে ঢাকায় চলে আসি। এসে শুনি বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় হোস্টেল মালিক বাসা ছেড়ে দিয়েছেন।’

রাজধানীর বাংলামটরের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সানজিদা সেজুতি (ছদ্মনাম)। অফিস লকডাউনের জন্য বেশিরভাগ সময়ই বাসায় থাকতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অফিসে কবে যেতে পারবেন, তারও কোনো ঠিক নেই। বাড়িতেও যেতে পারছেন না। হঠাৎ বাসা ভাড়া বাড়ানোর জন্য তাকে নতুন বাসায় উঠতে হয়েছে।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি কখনও ভাবতে পারিনি এই পরিস্থিতিতে আমাকে বাসা পাল্টানোর জন্য ঢাকায় আসতে হবে। আমার ভার্সিটি বন্ধ। ইচ্ছা ছিল ঈদের পরে পরিস্থিতি বুঝে ঢাকায় আসব। বাড়িওয়ালার এমন অত্যাচারে আমাকে শুধু বাসা পাল্টানোর জন্য আসতে হলো।’

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ির মালিক প্রতিটি ফ্ল্যাটের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন তেজতুরি বাজারের একটি হোস্টেলের মালিক। তিনি জানান, সাধারণত বেশিরভাগ হোস্টেল মালিকরা বিভিন্ন বাড়ির কয়েকটি ফ্লোর বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েই আবাসিক হোস্টেল পরিচালনা করে থাকেন। তিনিও ফার্মগেটের বেশ কয়েকটি জায়গায় হোস্টেল পরিচালনা করে থাকেন। যেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী বা বর্তমান ছাত্রী বা কর্মজীবী নারীরা থাকেন।

ওই হোস্টেল মালিক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ির মালিক প্রতিটি ফ্ল্যাটের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে আমিও বিপাকে পড়ে গেছি। কারণ করোনার শুরুতেই অনেক শিক্ষার্থী হোস্টেলের সিট ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে ফ্ল্যাটের ভাড়ার ক্ষেত্রেও আমাকে ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।’


সর্বশেষ সংবাদ