করোনা সংক্রমণকালে কোনও নির্বাচন নয়

  © ফাইল ফটো

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য নির্বাচন কমিশন আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে কোনও ধরনের ভোট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। এদিকে এর ফলে ঝুলে গেলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জাতীয় সংসদের চারটি উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নির্বাচন।

সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী ২০ জুলাইয়ে আগে কোনও ধরনের নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না কমলে নির্বাচন আরও পেছানো হবে।

বৈঠকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন আয়োজন না করার বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানানো হবে। ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে বুধবারের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া আসনগুলোর মধ্যে যেগুলোতে প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে না, সেগুলোতে পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিষয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার পাবনা-৪ আসনের প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।

সদ্য শূন্য হওয়া ঢাকা-৫ আসনে ৯০ দিনের সময়সীমা পার হতে এখনও হাতে সময় থাকায় এ আসনের উপনির্বাচন বিষয়ে কোনও প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন আপাতত পড়ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, এ পরিস্থিতির মধ্যে কোনও নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না ততদিন কোনও ধরনের ভোট হবে না।

মানুষের জীবনের মূল্য সবার আগে উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, ভোট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আইনি কোনও জটিলতার প্রশ্ন আসলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে ভোটের কোনও পরিবেশ নেই। পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো।

আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত ভোট না হওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০ জুলাই বলে কথা নয়, পরিস্থিতি যতদিন এরকম থাকবে ততদিন ভোট হবে না।

ইসির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, যশোর-৬ ও বগুড়া-১ সংসদীয় আসন ও অন্তত ৯২টি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। গত ২৯ মার্চ এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। স্থগিত হওয়া নির্বাচনগুলোর মধ্যে চাঁদপুর ও সুনামগঞ্জ পৌরসভা এবং ৮২টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হওয়ার কথা ছিল।

গত ১৮ ও ২১ জানুয়ারি শূন্য হওয়া বগুড়া-১ এবং যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের ৯০ দিন ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান এ বিষয়ে আরও যে ক্ষমতা দিয়েছে সে অনুযায়ী পরবর্তী ৯০ দিন পার হবে যথাক্রমে আগামী ১৫ ও ১৮ জুলাই। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ জুলাই পর্যন্ত কোনও নির্বাচন না হলে এ দুটি আসনে ভোটের সময় শেষ হয়ে যাবে। তখন এ দুটি আসনে নির্বাচনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পরামর্শ চাওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।

গত ২ এপ্রিল শূন্য হওয়া পাবনা-৪ আসনটির এখনও তফসিল ঘোষণা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিন হিসেবে এখানে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার পাবনা-৪ আসনে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি।

এতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১২৩ (৪) অনুচ্ছেদ এর শর্তানুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত দৈব-দুর্বিপাকের কারণে এই দফার নির্ধারিত মেয়াদ অর্থাৎ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উল্লেখিত আসনে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এমন অবস্থায় পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময়সূচি পরবর্তীতে যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে। সময় এলে হয়তো ঢাকা-৫ আসনের বিষয়েও এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত রাখা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আপাতত আইনি জটিলতা থাকছে না।

তবে কিছু ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার ক্ষেত্রে ২০ জুলাইয়ের আগে আইনের ১৮০ দিন পার হওয়ার বিষয় রয়েছে। কারণ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ আইনে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ আইনকে রেফারেন্স ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ওই চিঠিতে বলা হচ্ছে, যেসব নির্বাচনের তফসিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, ইতোমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধির পদ শূন্য হয়েছে এবং সামনে যেগুলো শূন্য হবে সেসব নির্বাচন আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়।