আম্ফানের তাণ্ডব: ভাঙন পাড়ের হাঁটু পানিতেই ঈদের নামাজ গ্রামবাসীর

  © সংগৃহীত

ভাঙা বেড়িবাঁধের হাঁটু পানিতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন খুলনা জেলার কয়রার বানভাসিরা। নামাজ শেষে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য রান্না করা সেমাই খেয়ে একসঙ্গে নেমে পড়েন সাইক্লোন আম্ফানে তছনছ হওয়া বাঁধ মেরামতের কাজে। দুপুরেও তাদের জন্য আয়োজনে ছিল খিচুড়ির।

গত ২০ মে সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবলীলায় নদী ও সমুদ্রের নোনা জলে বিলীন হয়ে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। কয়রায় ১২১ কি. মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১ জায়গায় ৪০ কি. মি. অধিক বাঁধ ভেঙে গেছে। অস্বাস্থ্যকর দুষিত নোনা পানির তলে অবস্থান করছে উপজেলাটির ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬২টি গ্রাম। এখন কয়রার মানুষ নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ঈদের দিনও তার ব্যতিক্রম নয়। সকাল হতেই হাজারো মানুষ দল বেঁধে চলে এসেছে বাঁধ রক্ষার কাজে। মাঝে ঝুড়ি কোদাল রেখেই হাঁটু পানিতে পড়ে নিতে হলো ঈদের নামাজ। কারো মুখে নেই হাসি, নেই আনন্দ ভাগাভাগি করার চিত্র। সবার মুখে ফুটে উঠেছে হতাশার এক করুন দৃশ্য। প্রকৃতির এমন ভয়াবহ আচরণের কাছে অসহায় এসব মানুষ। তবে ঈদের নামাজে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে কান্না মেখে সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইলেন মুক্তি।

কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবিরের ভাষ্যে, নোনা জলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে বসবাস করছে। আজ ঈদের নামাজ সদরে বাঁধ ভাঙনের পাশে হাটু পানিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং নামাজ শেষে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

২০০৭ সালের প্রলয়ংকারী সিডর ও ২০০৯ সালের সর্বনাশী আইলায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দক্ষিণের অনগ্রসর জনপদটি। গত দশকের প্রাকৃতিক ধ্বংসাত্মক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সুপার সাইক্লোন আম্ফান নোনা জলে তলিয়ে দিলো সমগ্র উপজেলাটি। অতি মানবেতর জীবন যাপন করছে এ অঞ্চলের অসহায়, দুস্থ এবং প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা মানুষগুলো।

কয়রা উপজেলার চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফলতি ও নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে নির্মিত বাঁধসমূহ আম্ফানে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তিনি টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে আহবান করেন।

১ লাখ ৮৪ হাজারেরও অধিক মানুষ হয়েছে গৃহহীন, তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। নোনা পানিতে ডুবে গেছে সাড়ে ৪ হেক্টর চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। নষ্ট হওয়া ১০-১১ মেট্রিক টন চিংড়ি ও সাদা মাছের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নেই খাওয়া ও থাকার জায়গা, নোনা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সুন্দরবন কোল ঘেঁষা উপজেলার মানুষেরা।

কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা বেড়িবাধঁ নির্মাণ প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করতে ওপর মহলকে জানিয়েছি। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনও ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি।

সার্বিকি বিষয়ে কয়রা-পাইকগাছা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু জানান, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করলেও আজ অবধি টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। শুধু পুরানো বাঁধগুলো মেরামত করা হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ খাইতে চায় না, চায় না পরতে। তারা করোনার মতো মহাদুর্যোগে শুধু টেকসই বাঁধ চায়।