করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বলছেন সাকিব

  © সংগৃহীত

আমি এখন আছি যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন স্টেটের ম্যাডিসন শহরে। আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সে জন্যই এখানে আসা। তবে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগে আমি এই শহরেরই একটি হোটেলে ১৪ দিন স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। যেহেতু দেশ থেকে ফ্লাইটে এসেছি, আমি চাইনি আমার জন্য আমার পরিবার বা আর কেউ ঝুঁকিতে পড়ুক।

করোনাভাইরাসের কারণে নিউইয়র্কের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি এখনো উইসকনসিনে হয়নি। যেটুকু জানি, ম্যাডিসন শহরে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৯ জন। আর পুরো উইসকনসিন স্টেটে মারা গেছেন ৮০ জনের মতো।

এই স্টেটে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যাওয়ার কারণ আমার মনে হয় মানুষের নিয়ম মেনে চলা। ম্যাডিসন শহরে তো মানুষজন বাইরে বের হচ্ছে না বললেই চলে। হাসপাতালে যেতে হলেও শুধু রোগী যাবে, অন্য কারও যাওয়ার অনুমতি নেই। একমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানেই মানুষ এখনো একটু যাওয়া-আসা করছে। সে ক্ষেত্রেও একজনের কাছ থেকে আরেকজন অনেক দূরে দূরে থাকে। আমি হয়তো দেখলাম আমার দিকে কেউ আসছে, আমি নিজে থেকেই দূরে সরে যাচ্ছি। ঘর থেকে যদি কেউ একটু হাঁটতেও বের হয়, একজন আরেকজনকে দেখলে রাস্তার উল্টো পাশে চলে যায়।

তবে নিউইয়র্কের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ওখানে থাকেন, এ রকম পরিচিত অনেকের সঙ্গে কথা হয়। জানার চেষ্টা করি তাঁদের অবস্থা। নিউইয়র্কে অনেক বাংলাদেশি মারা যাচ্ছেন। আমার সঙ্গে পরিচয় ছিল বা দু-একবার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, এ রকম দু-একজনেরও মৃত্যুসংবাদ শুনেছি।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশও কেন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামলাতে পারল না, প্রশ্নটা অনেকেরই। আমিও মনে মনে ভেবেছি, এ রকম কেন হলো! এখানে অনেকের সঙ্গে কথা বলে বা পরিস্থিতি দেখে যেটা মনে হচ্ছে, যে সময়ে এখানকার মানুষের করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক হওয়া দরকার ছিল, তখন তারা সতর্ক হয়নি বলেই আজ এই বিপর্যয়। এখানে সবাই বলছেন, আরও আগে থেকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বা আরও আগেই সবকিছু লকডাউন করা দরকার ছিল। শুরুতে এটাকে কেউ অতটা গুরুত্ব দেয়নি। আরেকটু আগে উদ্যোগগুলো নিলে হয়তো বিপর্যয় কম হতো।

আমাদের দেশের মানুষও সেই ভুলটাই করবে, নাকি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের বাঁচাতে সতর্ক হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই সময়। বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর সময়টা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। অন্য দেশের অভিজ্ঞতা আমাদের সতর্ক করছে, এখন সংক্রমণ বাড়বে। বাড়বে মৃত্যুর হার। আমাদের তাই ভুল করা চলবে না।

যেহেতু কোভিড-১৯-এর কোনো ওষুধ এখনো বের হয়নি, এই মহামারি থেকে বাঁচার একটাই উপায়—সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। ঘর থেকে বের না হওয়া। মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া মানেই রোগটা আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা। ছোঁয়াচে এই রোগ যত বেশি ছড়িয়ে পড়বে, তত বেশি এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

আমি এখানে থেকেও শুনেছি, বাংলাদেশের অনেক মানুষ ঘরে থাকার বা জনসমাগম এড়িয়ে চলার বিধিনিষেধ মানছে না। সরকার তো সব রকম ব্যবস্থাই নিচ্ছে। এখন আমরা নিজেরা দায়িত্বশীল না হলে আর কীভাবে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব! প্রত্যেক মানুষকেই ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হতে হবে নিজেকে এবং দেশকে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য।

তবে এখনো সময় আছে। আসুন, নিজের এবং আমাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও আমরা সবাই সচেতন হই। আমাদের সামনে উদাহরণের তো অভাব নেই। সময়মতো সচেতন না হওয়ায় অনেক বড় বড় দেশও মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে পারছে না। সেসব দেখে হলেও আমাদের শেখা উচিত।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা কারও একার নয়, এটা সবার। তবে সেই লড়াইটা আমরা করব যার যার ঘরে থেকে।

লেখক: জাতীয় দলের ক্রিকেটার


সর্বশেষ সংবাদ