করোনা: আগামী দুই সপ্তাহ দেশের জন্য টার্নিং পয়েন্ট

  © সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কালো থাবায় আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশও। দেশে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন করে আজ আরো ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ জনে। সেই সাথে মারা গেছে ৯ জন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী দুই সপ্তাহ দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যে সকল দেশে বর্তমানে করোনা মহামারি হয়ে দেখা দিয়েছে, সেই সকল দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্তের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর এটি মহামারি হিসাবে সামনে এসেছে। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। সে হিসেবে দেশে আজ করোনার ২৯তম দিন। তাই আগামী দুই সপ্তাহ দেশের জন্য ক্রান্তিকাল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্ল্ডওমিটার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার ৪৩তম দিনে আক্রান্তের হার ভয়াবহ আকার ধারণ করে, স্পেনে ৫০তম দিনে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫তম দিনে মহামারি রূপ নেয় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। এই দেশগুলোতে প্রথম দিকে সংক্রমণের হার বাংলাদেশের মতোই কম ছিল। তবে দিন যতই গেছে আক্রান্তের হার ততই বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সামাজিক সংক্রম শুরু হয়ে গেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত একজন থেকে তিনজন, তিনজন থেকে নয়জন এরপর নয়জন থেকে ২৭ জনে পৌঁছে যেতে পারে। এই দুই সপ্তাহ সময় খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আগামী ১৫ দিন ঘরে থাকলে করোনার আক্রান্তের হারকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

দেশে একদিনে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে আজ। সংখ্যায় তা ১৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। এ ভাইরাস মোকাবিলায় তাই সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঘনবসতির এ দেশে সামাজিক সংক্রমণ হলে মহামারি রুখে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলেও অভিমত তাদের। তারা বলছেন, এই দুই সপ্তাহ দেশের জন্য হতে পারে টার্নিং পয়েন্ট।

এ বিষয়ে আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মহামারী কখনো সময় দেখে আসেনা। আর এটি কত সময় পরে চলে যাবে সেটি অনুমান করাও হবে ভুল। তবে দেশের জনগণ সচেতন না হলে এটি আরো ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে গতকাল যেভাবে গার্মেন্টস-এ কর্মরত লোকজন ঢাকায় এসেছে সেটির পর কমিউনিটি পর্যায়ে আরো বেশি আকারে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংক্রমণ যেন কম হয় সেজন্য আরো দুই মাস আমাদের সবার সচেতন হয়ে চলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি কাজে বের হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সামনের দিনগুলোতে ঝুঁকি আরো বাড়বে। সামাজিক সংক্রমণ সীমিত পর্যায়ে হলেও বাড়ছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হঠাৎ করে একটা এলাকায় বেশি রোগী পাওয়া যেতে পারে। রাজধানীর মিরপুরে ১১ জন, বাসাবোতে ৯ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ১১ জন আক্রান্তের সংখ্যা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে পরে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।