সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক, জুড়ে দিল ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েমার ছবি

সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে এবার সেখানে জুড়ে দেয়া হলো যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের ছবি। মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে শাস্তি দেয়া ও নিজের মোবাইলের ক্যামেরায় সেই ছবি তোলায় সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।

এবার যশোর জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে মনিরামপুরের ট্যাবে সমালোচিত সাইয়েমা হাসানের ও কান ধরার দৃশ্য এঁটে দিয়েছে হ্যাকাররা। এই ট্যাবে ঢুকলে আগে মনিরামপুরের তথ্যের সাথে বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানগুলোর ছবি দেখা যেত।

তবে শুক্রবার রাত থেকে পেজে সাইয়েমা হাসানের সেই ছবিটি দেখা যাচ্ছে। টিম ডোনজ নামে একটি হ্যাকারগ্রুপ এই পেইজটি হ্যাক করার দাবি করে। সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে একটি বার্তা। বার্তায় হ্যাকাররা লিখেছে, 'তর্কের খাতিরে মেনেই নিলাম যে তিনি চাল ডাল কিনতে না, কাজ করতেই এসেছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার করে বাবার বয়সী একজন মুরুব্বিকে কানে ধরিয়ে সেটার ছবি এভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন না।'

'অন্তত সাইবার ক্রাইম আইন আপনাকে সেই ক্ষমতা দেয়নি। এসব ভণ্ডামি বাদ দেন আপনি সরকারি বেতন নেন রাষ্ট্রের নির্দেশে কিংবা সরকারের নির্দেশ পালনের জন্য। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বাবার বয়সী মুরুব্বিকে হেনস্তার জন্য নয়।

এর আগে যশোরের মনিরামপুরে মাস্ক না পরায় শুক্রবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তিনি কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি মুঠোফোনে ধারণ করেন। পরে এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই সেই নারী এসি ল্যান্ডের শাস্তিও দাবি করছে।

জানা যায়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন প্রথমে দুই বৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তবে তাদের মুখে মাস্ক ছিল না।

এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে সাইয়েমা হাসান শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মুঠোফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এছাড়া পরবর্তীতে অপর এক ভ্যান চলককে অনুরূপভাবে কান ধারিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

এসি ল্যান্ড সাইয়েমা হাসান এ শাস্তি দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। কান ধরিয়ে দাঁড় করানোর বিষয়টি দুঃখজনক উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী জানান, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।

পরে এ ঘটনার দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কান ধরিয়ে ছবি তুলার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল লিখেছেন, কান ধরে উঠবস করানো বৃদ্ধটি ভ্যানচালক। নাম বললাম না। পেটের দায়ে সংসারের চাল-ডাল কিনতে এসেছিলেন যশোরের মণিরামপুরের চিনেটোলা বাজারে। এই অপরাধে উপজেলার এসিল্যান্ড সাইমা হাসান জনসম্মুখে তাকে কান ধরে উঠবস করালেন। আবার মজার ঘটনা মনে করে তিনি ছবি তুললেন নিজের মোবাইলে। এসিল্যান্ড দেশের সামান্য একজন কর্মচারী। এই ছবি দেখে আমি স্থির থাকতে পারছি না। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।


সর্বশেষ সংবাদ