১০ বছরের নিতির আত্মহত্যা

শেষ বিদায়ে জুটল না সমাজের সহানুভূতিও

  © ফাইল ফটো

বাঁশ ঝাড়ের নিচে নতুন কাঁচা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছোট্ট কবরটা। ১০ বছরের নিতি শুয়ে আছে এখানে। বেঁচে থাকতে মা-বাবা নানা-নানীর ভালোবাসা পায়নি মেয়েটি। একমাত্র দাদি তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। নিতির কবরটা দেখতে হলে তাকেও এখন হাঁটতে হবে অনেকটা পথ। কারণ প্রতিবেশী ও সমাজ পতিদের বাধায় বাড়িতে কিংবা বাড়ির পাশে সামাজিক কবরস্থানে আশ্রয়টুকুও হয়নি নিতির।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী আড়পাড়া গ্রামের ছোট্ট মেয়ে নিতি অভিমানে গত মঙ্গলবার ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে বলে জানায় পুলিশ। বিচ্ছেদের পর আলাদা নতুন সংসার পেতেছেন নিতির মা-বাবা। কারো সংসারেই ঠাই হয়নি নিতির, নিতিকে রাখতে চাননি তাঁর নানা-নানীও। দাদির কাছে বড় হচ্ছিল সে।

আত্মহত্যার আগে নীতি লিখে গেছে ‘মা বাবা তোমরা আমাকে ভালোবাসো না, নানী-নানাও ভালোবাসে না, তোমরা কেউ আমার কথা মনে করো না, ভালোবাসো না। তাই তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি’।

নিতির মৃত্যুর খবর পেয়ে এসেছেন বাবা আলামিন সহ কয়েকজন চাচা এবং ফুফু। সবার চোখে পানি। সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হলোনা কেন জানতে চাইলে স্বজনরা জানান, ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্য়ায় পরিবার নিয়ে গ্রামে আসার পর কিছু লোক জানাজা ও দাফনে বাধা দেন। বাড়িতে কবর দিতে চাইলে প্রতিবেশীরা বাধা দেয়। এরপর বাড়ির পাশে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করতে চাইলে তাদের বাধা দেযয়া হয়। তাই বাধ্য হয়েই নিতির ফুফুর বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

নিতির দাদি লাল বানু বলেন, এরকম একটা শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তারা সাত্বনা তো পাননি বরং শোকের মধ্যেও বাচ্চাটার জন্য গ্রামের লোকজনের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছে। তবুও বাড়িতে কিংবা বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করতে পারেননি।

স্বজনরা জানান শিশুটির দাফনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন প্রতিবেশী এবং নারী ইউপি সদস্য। পোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের ওই নারী ইউপি সদস্যের নাম ফিরোজা বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার মৃত্যুতে লোকজন ভয় পায়, তাই সামাজিক কবরস্থানে দাফনে এলাকাবাসী বাধা দেন। যার কারণে শিশুটিকে সেখানে দাফন করা যায়নি।

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশির আহমেদ বলেন, বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি জানালে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হতো একটি শিশুর বেলায় কেন এরকম করা হলো তা জানতে খোঁজ নেবে পুলিশ। সূত্র: প্রথম আলো


সর্বশেষ সংবাদ