সমুদ্র বিজয়কে অর্থবহ করতে গবেষকদের ভূমিকা রাখতে হবে: আরেফিন সিদ্দিক

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতায় বিশাল সমুদ্র বিজয় আমাদের অনেক বড় বিজয়। এ সমুদ্র বিজয়কে অর্থবহ করতে হবে। এটাকে অর্থবহ করতে সমুদ্র বিষয়ক গবেষকদের ভূমিকা রাখতে হবে।

মঙ্গলবার কক্সবাজারের লাবনী বিচ পয়েন্টে ন্যাশনাল বিচ ক্লিনআপ অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সেভ আওয়ার সি এবং মেরিন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক এর যৌথ আয়োজনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

আ আ স ম আরিফিন সিদ্দিক বলেন, ফ্লোরিডার মিয়ামি বিচ বিশ্বের অন্যতম একটি বিচ। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা যাচ্ছে, সিনেমার শুটিং চলছে। হাজার হাজার পর্যটকরা সেখানে যাচ্ছে। অথচ সেই বিচ আমাদের কক্সবাজারের বিচের তুলনায় কিছুই নয়। শুধুমাত্র আমাদের সমুদ্র ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাগত সমস্যার কারণে এটা হচ্ছে। এবার একটি সুযোগ এসেছে। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের জাতির জনক মুজিব শতবার্ষিকী আসছে। এটাকে সামনে রেখে আমাদেরকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কিভাবে বাংলাদেশকে বাঁচাতে চেয়েছিলো, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি সমুদ্র উন্নয়নে কি ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তিনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন গঠন করেছিলেন। মানতে কষ্ট হয় আজ যেসব স্থাপনা কক্সবাজার বিচের কাছাকাছি চলে এসেছে, তা যে কতটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করেছে। স্থাপনা থাকতে পারে সেটার একটা লিমিট থাকা উচিত। মুজিববর্ষের অঙ্গীকার নিয়ে কক্সবাজারকে সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে এসে সমুদ্রকে দেশের কল্যাণে, জনকল্যাণে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, একটি পৃথিবীতে আমরা দেশগুলো ভাগ করলেও প্রকৃতি কিন্তু বিভাজন মানে না। ভৌগোলিক সীমারেখা এটি মানে না। পাকিস্তান ও ভারতে বায়ু দূষণ ও সমুদ্র দূষণ বেড়ে গেলে বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর বায়ু দূষণের ফলে আমাদের দেশে এর প্রভাব পড়ছে। ফলে তাদেরকে যেমন সচেতন থাকতে হবে তেমনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব জলবায়ু সংক্রান্ত সম্মেলন হয় সেখানে তিনি এসব নিয়ে কথা বলেন। সারা পৃথিবী সম্মিলিতভাবে ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। তার বক্তব্যে তিনি আয়োজক সংগঠন সেভ আওয়ার সি কে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয়ে সমুদ্র বিজয় করে এনেছেন। একইভাবে তিনি সমুদ্রের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা এ সংক্রান্ত মেরিন বিভাগ খোলা হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছেন তিনি। আমি এই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বলব প্রধানমন্ত্রী আপনাদেরকে এই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তুলে দিয়েছেন। এখানে আপনাদের কার্যক্রম পরিচালনায় কারা বাধা সেটা দেখার বিষয় নয়, এক্ষেত্রে আপনাদের একটি পরিকল্পিতভাবে এই সমুদ্র সৈকতটিকে কক্সবাজার পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

কক্সবাজার জেলা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে শ্রেষ্ঠ পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর সঙ্গে ২৪০ জন জনবল নিয়োগের অনুমতিও তিনি দিয়েছেন। বর্তমানে আমাদের প্রত্যক্ষ জনগণের সংখ্যা খুবই কম, অ্যাটাচমেন্ট জনবল দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমাদের প্রত্যক্ষ জনবল নিয়োগ হবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে উদ্দেশ্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছেন তার বাস্তবায়ন হবে।

সেভ আওয়ার সি এর পৃষ্ঠপোষক আতিকুর রহমান বলেন, পর্যটকদের ফেলে রাখা ব্রজ সমুদ্রে চলে যায় ফলে সমুদ্রের প্রাণী গুলোর সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে সমুদ্রের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কোরাল দ্বীপ না বলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন কোরাল দীপ নয়, সেখানে কোরালের উপস্থিতি রয়েছে মাত্র। সেন্টমার্টিনকে ছেড়া দ্বীপ বলা যাবেনা, বিশ্বের সবগুলো দ্বীপ-ই ছেড়াদ্বীপ। শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য এটাকে এভাবে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ