ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর

  © ফাইল ফটো

ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত,
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতেরই রক্ত।

কবি আল মাহমুদের এ কবিতার মাঝে ফুটে ওঠে ২১ ফেব্রুয়ারির মাহাত্ম্য।

আগামীকাল মহান ২১ ফেব্রুয়ারি, ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এ দিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ভয়-ভীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল।

১৯৫২ থেকে ২০২০; ভাষা আন্দোলন গিয়ে দাড়ালো ৬৮ বছরে।

সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন নাম না জানা অনেকে। তাদের জীবনের ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি তার ভাষার অধিকার পেয়েছে।

মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও শাসকগোষ্ঠির প্রভূত্বসূলভ মানসিকতার বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং ভাষার ভিত্তিতে বাঙালির প্রথম বিদ্রোহ। নব উদ্যমে ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন আন্দোলনে গর্জে উঠে।

এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালি বাচঁতে শিখেছে, শিখেছে অধিকার আদায় করার পন্থা।

এই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন এবং সর্বশেষ ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ। পরবর্তী নয় মাস পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যদিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে সংযোজিত হয় নতুন এক স্বাধীন সার্বভৌম, সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যমলা স্বপ্নের সেই দেশ যার নাম মানচিত্রে অঙ্কিত হয় ‘বাংলাদেশ’।

এদিকে, মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পূর্ণ হবে আগামীকাল। একুশে ফেব্রুয়ারি শোকাবহ হলেও এর যে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় তা পৃথিবীর বুকে অনন্য। কারণ বিশ্বে এ যাবতকালে একমাত্র বাঙালি জাতিই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে দেখা গেছে, ৬৮ বছরের ২১ একুশকে বরণ করে নিতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনের সৌন্দর্যবৃদ্ধির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল বেদি, স্তম্ভসহ মিনার প্রাঙ্গনের ধোয়া-মোছা ও নতুন করে রং করা হয়েছে। সকল স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ আজ রাতে একুশের প্রথম প্রহর ১২টা ০১ মিনিটে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর পরপরই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

ইতোমধ্যেই অমর একুশে পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাত ফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ।

আজ বৃহস্পতিবার রাত ৭টা থেকে এটি কার্যকর হবে। সন্ধ্যার পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় সর্বসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শুধুমাত্র সুর্নিদিষ্ট স্ট্রিকার সম্বলিত যানবাহন ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে।

অন্যদিকে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাত ১২টা ৪১ মিনিটের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শহীদ মিনার এলাকায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রোধে ছদ্মবেশে ও সাদা পোশাকে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা নজরদারী করবে। তাছাড়া র‌্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও র‌্যাব ডগ স্কোয়াড শহীদ মিনার এলাকায় প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রস্তুত থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্সও।

২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক -সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক বাণী প্রদান করবেন।

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ