১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:২২

একই দিনে ফাল্গুন-ভালোবাসা দিবস: খরচ কমবে যুগলদের

মডেল  © সংগৃহীত

ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন পালিত হতো, আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের কারণে এখন থেকে দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে পড়বে। দিবস দুটি একদিনে হওয়া মধুর সমস্যায় পড়েছেন যুগলরা। আবার কেউ কেউ সুবিধার কথাও বলছেন। তবে সাংস্কৃতিকভাবে একইদিনে দুইটি বড় দিবসে বাঙালি যুগলদের কাছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস থেকে পহেলা ফাল্গুনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ডজন খানেক যুগলের উপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ যুগল ভালোবাসা দিবস থেকে পহেলা ফাল্গুনকে এগিয়ে রাখছেন। যেখানে ৪ শতাংশ মনে করেন পহেলা ফাল্গুন নয় তাদের কাছে ভালোবাসা দিবসের গুরুত্ব বেশি। ১৬ শতাংশ যুগল মনে করেন, দুইটা গুরুত্বপূর্ণ দিবস একদিনে হওয়ায় খরচ এবং পরিশ্রমের মাত্রা দুইটাই তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। যেটা তারা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এছাড়া বাকি ১০ শতাংশ যুগল ভিন্নভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।

এ জরিপে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সক্রিয় সিঙ্গেল কমিটির সদস্যরাও অংশ নিয়েছেন। তাদের অধিকাংশ সদস্যরা ভালোবাসা দিবস থেকে পহেলা ফাল্গুনকে এগিয়ে রেখেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইমুন রাসেল বলেন, আমাদের কাপলদের খরচের অন্ত নেই। তার উপর এসব দিবস আসলে তো কথাই থাকে না। প্রেমিকের মন রক্ষায় অনেক সময় অনেক কিছু না চাইলেও করতে হয়। একইদিনে এবারের গুরুত্বপূর্ণ এসব দিবসগুলো আমাদের মত যুগলদের খরচ কমিয়ে আনবে। এছাড়া একদিনে দুই গুরুত্বপূর্ণ দিবসের সাধ নিতে পারবো। এটা ভিন্ন সুবিধা।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নুরউদ্দিন রাসেল জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে তারা তারকা খচিত যুগল। তাদের দেখে অনেকে প্রেম-ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হন। তাদের দীর্ঘদিনের প্রেমের ক্যারিয়ারে আগামীকাল তারা বাঙালী সংস্কৃতিকে ধারণ করে পহেলা ফাল্গুনের সাজে উদযাপন করবেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, প্রেম-ভালোবাসায় এসব দিবসগুলো আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দিন পর পর আসে। আমরা এসব খুব ভালোভাবে উপভোগ করি।

আগামীকাল দেশব্যাপী পালিত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে যুগলরা যেভাবে তাদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে যারা প্রেম বঞ্চিত দাবি করে আসছেন তারাও বসে নেই। দিবসটি উপলক্ষে তারাও সক্রিয় হচ্ছেন। এক এক করে দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি করে আসছেন। যাদের বিভিন্ন সময় পুঁজিবাদী প্রেমের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজকেও পুঁজিবাদী ভালোবাসার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রেম বঞ্চিতরা। তবে আগামীকাল সকাল থেকে একযোগে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের কথা জানিয়েছেন প্রেম বঞ্চিতদের দায়িত্বশীলরা।

বাংলাদেশ সিঙ্গেল সংগ্রাম পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহিন জানিয়েছেন, পবিত্র ভালোবাসার বিরুদ্ধে আমাদের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। ভালোবাসা জীবনের একটা অংশ। তবে প্রেমের নামে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে ও পুঁজিবাদী প্রেমের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোকে পবিত্র রাখতে চাই। প্রেমের নামে কাউকে ক্যাম্পাসগুলোতে অশ্লীলতা ছড়ানোর কোন সুযোগ দেওয়া হবে না।

সিঙ্গেল সংগ্রাম পরিষদ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে সিঙ্গেল কমিটির কোন সদস্য প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে কমিটি থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করে দেন। হয়েছেও তাই। প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সিঙ্গেল কমিটির সহ সভাপতি মাহফুজুর রহমান এবং ফেরদৌস সিদ্দিক সায়মনকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি।