নিজে প্রতিবন্ধী, ভিক্ষা করে পড়ালেখা করাচ্ছেন দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে

  © সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁওয়ে একই পরিবারের তিনজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন পরিবারটি। ছোঁয়াচে রোগ মনে করে গ্রামবাসীও তেমন দূরত্ব রেখে চলে তাদের সাথে।

এ অবস্থাতে  শরীরের অক্ষমতা নিয়ে জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে কুঁড়েঘরে কোনোমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই হলেও প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত পথে যাত্রা প্রতিবন্ধী পিতা মাইনুদ্দীনের। সরকারিভাবে সামান্য সহযোগিতা মিললেও তা যথেষ্ট না। প্রতিবন্ধী সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান মাইনুদ্দীন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান তিনি। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাইনুদ্দীনকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আখানগর ইউনিয়নের বলিতা পাড়া গ্রামের মাইনুদ্দীন। নিজে শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্মের পাঁচ বছর পর টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে শরীরের হাত ও দুটি পা অকেজো হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসা করেও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।

১৯৯৫ সালে একই গ্রামের ফজিলা খাতুনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরে জন্ম নেয় একে একে তিন সন্তান। জন্মগতভাবে সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে অজ্ঞাত রোগে বড় ছেলে রাকিব উদ্দীন ও মেজ ছেলে সাকিব উদ্দীন প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। অকেজো হয়ে যায় তাদের দুই হাত ও পা। মাইনুদ্দীনের পৈতৃক সম্পত্তি না থাকায় বর্তমানে ভিক্ষা করে পরিবারের খরচসহ দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। 

মাইনুদ্দীন জানান, গ্রামের মানুষ ছোঁয়াচে রোগ মনে করে তার কাছে আসতে চায় না। প্রতিবন্ধী সন্তানদের শিক্ষিত করতে ও সংসারের খরচ যোগাতে অনেটা বাধ্য হয়েই মানুষের কাছে হাত পেতেছেন তিনি। মাইনুদ্দীন আরো জানান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তার প্রতিবন্ধী দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ বহন করতেন তাহলে তারা ভবিষ্যতে সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে। প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি চাকরি করে পরিবার ও সমাজের সেবা করতে পারবে।

এদিকে প্রতিবন্ধী সন্তানরাও সমাজের বোঝা না হয়ে লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বী হতে চায়, স্বপ্ন দেখে চিকিৎসক হয়ে সকলের সেবা করতে। 

সরকারি সহায়তার বিষয়ে স্থানীয় আখারনগন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, মাইনুদ্দীনকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সহায়তা আসলে তাকে দেওয়া হবে। 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দরিদ্র প্রতিবন্ধী শিশু দুটিকে সুশিক্ষিত করতে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও সরেজমিনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে সকল সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। 


সর্বশেষ সংবাদ