নাম রফিকুল হওয়ায় জেল খাটছেন এই চা বিক্রেতা!

চা বিক্রেতা রফিকুল
চা বিক্রেতা রফিকুল

বাংলা ছবি আয়নাবাজিতে টাকার বিনিময়ে একজনের জেল অন্যজন খেটে দিয়েছিল। তবে চা বিক্রেতা রফিকুলের গল্পটা ভিন্ন। নিরপরাধ হয়েও আসামী তিনি। হয়েছেন গ্রেপ্তারও। জেলা খাটছেন গত পাঁচ দিন ধরে। নামের মিল থাকায় করাতকলের মালিকের পরিবর্তে এই চা বিক্রেতাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

তথ্যমতে, বন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত এক আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলহাজতে থাকা ওই যুবক গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর সভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড দারগারচালা (মসজিদ মোড়) এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে রফিকুল ইসলাম। ১৭ই জানুয়ারি বিকেলে শ্রীপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কফিল উদ্দিন উক্ত যুবককে তার চা স্টল থেকে গ্রেপ্তার করেন।

জানা যায়, মামলার মূল আসামির জাতীয় পরিচয় পত্র (১৯৮০৩৩২৮৬০৮০৪১৮৯৭) অনুযায়ী রফিকুল ইসলামের জন্ম তারিখ ১৬ই জানুয়ারি ১৯৮০, বাবা-নুর মোহাম্মদ, মা-রহিমা খাতুন এবং ভোটার সিরিয়াল নং-১৬১১। পুলিশের ভুলে গ্রেপ্তার হওয়া কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের দারগারচালা (মসজিদ মোড়) এলাকার নুর মোহম্মদের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম। জাতীয় পরিচয় পত্র (৩৩২৮৬০৮০৪৪১৫২) অনুযায়ী তার জন্ম ২রা এপ্রিল ১৯৭৭। তার বাবার নামও নূর মোহাম্মদ, মায়ের নাম জামিনা খাতুন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের বাবা নূর মোহাম্মদ জানান, আমার ছেলের নামে কখনও কোনো মামলা নেই। তার চা বিক্রি দিয়েই আমাদের সংসার চলে। কথা নেই, বার্তা নেই শুক্রবার বিকেলে পুলিশ এসে তার কাছে তার নাম ও বাবার নাম জানতে চায়। এটি শুনেই তার নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে বলে তার হাতে পুলিশ হাতকড়া লাগিয়ে দেয়। এলাকার লোকজন বারবার বিষয়টি বলার পরও চা বিক্রেতা রফিকুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। রফিকও এ সময় অনেকবার আকুতি মিনতি ও কান্নাকাটি করে বলেন, তার নামে কোনো মামলা নেই। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই কফিল কোন কথা আমলে না নিয়ে এমনকি যাচাই না করে তাকে থানায় নিয়ে যায়।

শ্রীপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্সবিহীন করাতকলে গজারি গাছ চেরাই করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ই জুলাই শ্রীপুর সদর বন বিট অফিসার সহিদুর রহমান কেওয়া পশ্চিম খন্ডের বেগুন বাড়ি এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে রফিকুল ইসলামকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বন) আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলায় রফিকুলের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে শ্রীপুর থানাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ পাঠানো হয়।

অপরদিকে, এ মামলার প্রকৃত আসামি নূর মোহাম্মদের ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি করাতকলের ব্যবসা করেন। মামলাটি তার বিরুদ্ধেই করা হয়েছিল। উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, পুলিশের একটু ভুলের কারণে একজন সাধারণ নিরপরাধ মানুষ জেল খাটছেন। এর দায় কে নেবে?

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, মামলাটি আদালতে দায়ের করা। দু’জনের নাম, বাবার নাম ও এলাকা একই। থানার মামলা হলে সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার ছিল। এখন আদালত ডিসাইড করবে সে প্রকৃত আসামি কি না। তবে যতদূর জানতে পেরেছি গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল চা বিক্রেতা। অপর রফিকুল করাতকলের মালিক।


সর্বশেষ সংবাদ