বিশ্বে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়বে—গবেষণা

  © ফাইল ফটো

সারাবিশ্বে এখন দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা প্রায় ২২০ কোটি, যাদের মধ্যে অন্তত ১০০ কোটি এমন ধরনের দৃষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত যেটা সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এড়ানো করা যেত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

রবিবার বাংলাদেশে প্রকাশিত ‘দ্য ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অন ভিশন’ বা দৃষ্টি বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সমস্যা সারাবিশ্বে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং এ সমস্যায় ভোগা বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ওয়েস্টিন ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর দ্যা প্রিভেনশন অব ব্লাইন্ডনেস (আইএপিবি), আইএনজিও ফোরাম ইন আই হেল্‌থ এবং বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।  

একই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ‘দৃষ্টি বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন: বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক দু’দিনের এক কর্মশালা উদ্বোধন করেন। প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মাঠপর‌্যায়ে চক্ষুসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের সব উপজেলায় ‘ভিশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা দেবে সরকার।

দেশের ৭০টি উপজেলায় ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০২২ সাল নাগাদ আরও ১৩০টি উপজেলায় এমন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে -স্বাস্থ্য খাতের প্রতিনিধিদের এমন বিবৃতির পর মন্ত্রী এই আশ্বাস দেন। 

আয়োজকরা বলছেন, ভিশন সেন্টারে প্রাথমিক চক্ষুসেবা, চশমা ও ওষুধ দেওয়া হয় এবং শল্যচিকিৎসার মতো চিকিৎসা দরকার হলে সেখান থেকে জেলা পর‌্যায়ের হাসপাতালে রোগীকে রেফার করা হয়। এছাড়া জেলা পর‌্যায়ে কর্মরত চিকিৎসদের মাধ্যমে এখান থেকে টেলিমেডিসিন সেবাও দেওয়া হয়।

জাহিদ মালেক বলেন, সাড়ে ৪ হাজার চিকিৎসক সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেস এবং দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার জন্য শিগগির আরও  সাড়ে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ করা হবে।

মন্ত্রী জানান, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে তিরিশের অধিক জনসংখ্যার মধ্যে অন্ধত্বের হার কয়েক বছর আগের ৪ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্ধত্ব ও অন্যান্য চক্ষু সমস্যা মোকাবিলায় তিনি আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ কর্মী এবং এ সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বয়োবৃদ্ধি, জীবনধারা পরিবর্তন এবং নগরায়ন আগামী দশকগুলোতে চক্ষু সমস্যা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ও অন্ধত্বে ভোগা মানুষের সংখ্যা ‘নাটকীয়ভাবে’ বৃদ্ধি করবে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী আগামী দশকগুলোতে চক্ষুচিকিৎসার প্রয়োজনও ‘নাটকীয়ভাবে’ বাড়বে এবং এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যথেষ্ট পরিমাণ চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দৃষ্টিত্রুটি ও ছানির চিকিৎসা না করার কারণে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তার আর্থিক মূল্য আনুমানিক ১ হাজার ৪শ ৩০ কোটি টাকা। এতে বলা হয়েছে, চক্ষুরোগ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার বোঝা সবখানে এবং সবার ক্ষেত্রে সমান নয় - স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ এবং নারী, অভিবাসী, আদিবাসী, বিশেষ ধরনের প্রতিবন্ধী ও গ্রামীণ মানুষের মতো জনগোষ্ঠির ক্ষেত্রে এ বোঝা তুলনামূলকভাবে বেশি।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশে আইএপিবি’র কান্ট্রি চেয়ার ও চিকিৎসাশিক্ষার মহাপরিচালক অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

আইএপিবি’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের চেয়ার ডা. তারাপ্রসাদ দাস কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাকাডেমি অব অফথালমোলোজির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আভা হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, অফথালমোলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, ন্যাশনাল আই কেয়ারের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফা, আইএনজিও ফোরামের চেয়ার মোহাম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা বাংলাদেশে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নাঈমুল ইসলাম খান প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালার প্রথম দিন তারা চক্ষুরোগ এবং এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেন।

তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে সাড়ে সাত লাখ মানুষ অন্ধ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ৬০ লাখেরও বেশি।

চক্ষুরোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে বক্তারা বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, চক্ষুসেবাকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করা; স্বাস্থ্যব্যবস্থায় জনগণ-কেন্দ্রিক সমন্বিত চক্ষুসেবা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা; স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় উচ্চমানের গবেষণা চালানো; এবং চক্ষুসেবার প্রয়োজনের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।


সর্বশেষ সংবাদ