আমার ওপর ভরসা রাখুন— জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী

  © ফাইল ফটো

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এসব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তার কন্যা হিসেবে আমার জীবনেরও একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই।

মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী হয়ে গত বছর ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার চতুর্থবার শপথ নেয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আজ। আপনাদের সবাইকে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সালাম জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই- মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল-কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এএসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ সেই রাতের সবল শহিদকে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমা হামলায় যারা নিহত হয়েছেন আমি তাদের স্মরণ করছি। আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেছেন, আমি তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আমরা একটানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনা করছি। আর সে লক্ষ্য হল সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নসহ সকলের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানের ২৪ বছরের শোষণ এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পোড়া-মাটি নীতির ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত অকাঠামো ও অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উঠে এসেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হল। বিগত এক বছর আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। আমরা সবক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি তা দাবি করবো না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সবার সহযোগিতায় আমরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব, ইনশাআল্লাহ।