ফ্ল্যাট বিক্রি করে চলছে এন্ড্রু কিশোরের ক্যান্সার চিকিৎসা

  © সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা চালানোর জন্য গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে নিজের একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন তিনি।

কিশোরের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর ক্যানসার ধরার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন। চিকিৎসার জন্য তিনি কারও কাছ হাত পাতবেন না। তাই রাজশাহী শহরে ভদ্রা আবাসিক এলাকায় পাঁচ বছর আগে কেনা ফ্ল্যাটটি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। যিনি কিনেছেন, তাঁর কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর যাবৎ এন্ড্রু কিশোর প্রায় প্রতি মাসেই রাজশাহীতে যাওয়া-আসা করেছেন। রাজশাহীতে গিয়ে যেন তাঁর থাকার সমস্যা না হয়, সে কারণেই তিনি অনেক কষ্ট করে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। কিন্তু নিজের চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য শেষ পর্যন্ত তাঁকে সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হয়েছে।

২০১২ সালে নিজের ওস্তাদের নামে রাজশাহীতে আব্দুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদ গড়ে তোলেন এন্ড্রু কিশোর। এই সংগঠন থেকে নিয়মিত ত্রৈমাসিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন রাজশাহী ও এর আশপাশের এলাকার শিল্পীরা। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকতেন এন্ড্রু কিশোর। সংগঠনটি দুস্থ ও অসহায় শিল্পীদের নানাভাবে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া সংগঠনটি নিয়ে এন্ড্রু কিশোর নানা সামাজিক কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন। গত বছর বন্যায় নিজে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এই সংগঠনের কার্যক্রম সচল রাখার জন্য তিনি নিয়মিত রাজশাহী যাওয়া–আসা করতেন।

এন্ড্রু কিশোরের এখন একমাত্র সম্বল মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের সেনপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া তাঁর আর কোনো সম্পদ নেই।

এরই মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসা বাবদ এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। গতকাল সোমবার জানা গেছে, দেশের বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী চিকিৎসায় সহায়তার জন্য অনেকেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে এরই মধ্যে এন্ড্রু কিশোরকে কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু হয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে সেখানে থাকতে হবে। ২৬ নভেম্বর থেকে কেমোথেরাপির পরবর্তী সাইকেল শুরু হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৩টি সাইকেলে আরও ১২টি কেমোথেরাপি দেওয়া হবে। তাঁর এই চিকিৎসা সম্পন্ন করার জন্য আরও ২ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন।

এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠনের আবেদন করেছেন তাঁর স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। ‘গো ফান্ড মি’ নামের ওয়েবসাইটে এটি করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা বোর্ডের কাগজপত্র নিয়ে সিঙ্গাপুরপ্রবাসী বাংলাদেশিরা এই অনলাইন ফান্ডিংয়ের পেজ চালু করেছেন।

এন্ড্রু কিশোর বললেন, ‘এমনটি আমি চাইনি। বাধ্য হয়ে এটি খুলতে হয়েছে। আর পারছি না।’

এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন মোমিন বিশ্বাস। তিনি সরকারসহ দেশের চলচ্চিত্র, সংগীত, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের লোকজনকে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ