দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা ৩৩%

শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যার মধ্যে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ৩৩ শতাংশের বেশি বেকারত্বের ডিগ্রি নিয়ে ঘুরছেন বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা বিআইডিসের এক গবেষণায় দেখা গেছে।  

বেতনের পরিমাণও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, পূর্ণকালীন বেতনভিত্তিক কর্মসংস্থানের মধ্যে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন এসএসসি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ৪৪ শতাংশ। মাস্টার্স পর্যায়ে সবচেয়ে কম- ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকার। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। শিক্ষিতদের মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। বিবিএসের জরিপের তুলনায় বিআইডিএসের অনলাইন জরিপে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি পাওয়া গেল।

গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এদের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক চাকরিতে এবং ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। জাতীয় যুবনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের শিক্ষিতদের নিয়ে ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে এই অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শিদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এই গবেষণা করেছে।

বিআইডিএসের এ বছরের গবেষণা নিয়ে গবেষণা সম্মেলনে অন্যান্য গবেষণার সঙ্গে এই গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করা হয়। দু'দিনের এ সম্মেলন গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল লেকশোতে শুরু হয়েছে। গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শিদ। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশে সাধারণত শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা থাকে। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, শিক্ষিতদের বড় একটা অংশ যদি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তাহলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

গবেষণায় চাকরিরতদের প্রসঙ্গে বলা হয়, বেতন পান এমন সার্বক্ষণিক কাজে নিয়োজিত ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ। পূর্ণকালীন আত্মকর্মসংস্থানে আছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। খণ্ডকালীন বেতনভিত্তিক কাজে নিয়োজিত ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। খণ্ডকালীন আত্মকর্মসংস্থানে আছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কর্মসংস্থানে গ্রাম-শহর পার্থক্যটা বেশ স্পষ্ট। বেতনভিত্তিক চাকরিতে গ্রামের তুলনায় শহরে কাজের সুযোগ বেশি। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন শহর এগিয়ে। তবে আত্মকর্মসংস্থানে শহরের তুলনায় গ্রাম এগিয়ে। গ্রামে বেকারত্বের হার বেশি।

জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষা শেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত বেকার ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দুই বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে বেকার ১৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বেকার ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ছয় মাসের কম সময় ধরে বেকার ৫০ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

জরিপে অংশ নিয়েছেন আট হাজার ৭৭১ তরুণ-তরুণী। এর মধ্যে বেকারের সংখ্যা দুই হাজার ৯১১ জন, যার মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৮৮৯। পুরুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩১ দশমিক ১ শতাংশ। নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বলা হয়, পূর্ণকালীন বেতনভিত্তিক কর্মসংস্থান সর্বোচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের ওপরের দিকেই বেশি। এর মধ্যে মাস্টার্স পর্যায়ের হার সবচেয়ে বেশি- ৫৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। স্নাতকে এই হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এইচএসসিতে আবার এসএসসির তুলনায় কিছুটা কম। এইচএসসি পর্যায়ে পূূর্ণকালীন বেতনভিত্তিক কর্মসংস্থান ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এসএসসি পর্যায়ে এ হার ৩৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ টি এম নুরুল আমিন এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। প্যানেল আলোচক ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বাশার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অতনু রাব্বানী।


সর্বশেষ সংবাদ