মর্গে ছোঁয়ার লাশ, ঢাকার পথে বাবা-মা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের লাশঘরে পড়ে রয়েছে তিন বছরের ছোঁয়া মনির নিথর দেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও ছিল মা আর বাবার কোলে। এই দুজনকে ছেড়ে এক মুহূর্তও তাকে রাখা যেত না কারো কাছে। অথচ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আর আব্বু-আম্মুর জন্য ছোঁয়া মনির কণ্ঠে কোনো আকুতি নেই!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় তূর্ণা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির মধ্যে সংর্ঘের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছোঁয়া মনির বাবার নাম সোহেল মিয়া, মা নাজমা বেগম। সোমবার ভোর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে মর্মান্তির ট্রেন দুর্ঘটনায় তারা উভয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত হয়েছিল তাদের কোলে থাকা শিশু সন্তান ছোঁয়া মনিও। অন্যদের মতো তাদের তিনজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান উদ্ধারকারীরা।

ছোঁয়া মনির ছোট দেহ এত বড় দুর্ঘটনার দকল বইতে পারেনি। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক জানান ছোঁয়া মনি আর বেঁচে নেই। অন্যদিকে সোহলে ও নাজমার অবস্থা বেশি গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে।

এদিকে সোহলে ও নাজমাকে নিয়ে যখন ঢাকায় যাওয়া হচ্ছিল তখন ছোঁয়া মনির মামা জামাল মিয়া ভাগ্নির লাশ বুঝে নিতে হাসপাতালের মর্গ আর পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছেন। ছোঁয়া মনির লাশটি ময়নাতদন্ত ছাড়া বাড়ি নিয়ে যেতে চান জামাল।

আজ মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন মামা জামাল। লিখেছেন, ‘আমার ভাগ্নি ছোঁয়া মনি মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হইলে তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মনিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বর্তমান আমার ভাগ্নির লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে আছে। এ ব্যাপারে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ভাগ্নির মৃত্যুর ব্যাপারে কোন অভিযোগ নাই বা কোনো প্রকার মামলা মোকদ্দমা করব না।’

ছোট্ট মনি মা-বাবাকে সামনে না দেখলে জুড়ে দিতো কান্না। অথচ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আর আব্বু-আম্মুর জন্য ছোঁয়া মনির কণ্ঠে কোনো আকুতি নেই! অ্যাম্বুলেন্সে করে ছোঁয়া মনির কাছ থেকে শত মাইল দূরে, আরও দূরে ঢাকার উন্নত কোনো হাসপাতালের দিকে এগোচ্ছেন আব্বু-আম্মু। আর ছোঁয়া মনির নিথর দেহ পড়ে আছে আরেক হাসপাতালে লাশঘরে।


সর্বশেষ সংবাদ