চেয়ারম্যানি ছেড়ে ঢাকায় জমির দালালি

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্চ ইউনিয়ন পরিসদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এলাকা ছেড়ে মাসের পর মাস ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় না থাকার কারণে একদিকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছিল তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এলজিএসপি ও ননওয়েজ কাজে দুর্নীতির সুযোগ পাচ্ছে মেম্বাররা। অপরদিকে জন্ম সনদ ও নাগরিকত্ব সনদের জন্য এলাকার মানুষ হয়রানি ও  ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রতি মুহর্তে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার সরেজমিনে ওই ইউনিয়ন পরিষদের এলাকায় গেলে পরিষদের সদস্যদের জানান, গত দুই মাস ধরে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই তিনি সিংহ ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করতেন। দুই তিন মাস পর পর এলাকায় এসে তিন চারদিন থাকার পর আবার ঢাকায় চলে যান। তিনি ঢাকায় জমি কেনাবেচার দালালি করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে তদবির করাও তার আরেক ব্যবসা। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তিনি ওই দালালি ব্যবসা করতেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। তিন বছর আগে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে ইউনিয়ন ভবন বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে মোহনগঞ্জ বাজারে একটা ভাড়া করা ঘরে চলে পরিষদের কার্যক্রম। পরিষদের সচিবের পদও শূন্য। রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের।

চেয়ারম্যান না থাকার কারনে সচিবও পরিষদে খুব একটা যান না। ফলে পরিষদের সব ধরণের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ উদ্যোগ হতদরিদ্র পরিবারের গর্ভবতি ও প্রসূতি মা এবং শিশুদের পুষ্টি চাহিদা ও মনোদৈহিক বিকাশের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। যা বাস্তবায়ন করা হবে যত্ন প্রকল্পের অধীনে। মোহনগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান না থাকার কারণে তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম আর ঘুষ গ্রহণের ঘটনা ঘটছে। মেম্বাররা তালিকায় নাম উঠাতে পরিবার প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে গ্রহণ করছে। 

নয়াচর বাজারে কথা হয় ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর নাওশালা চরের সফিয়াল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিপদে আপদে পাশে পাবো সেই জন্য ভোট দিয়া চেয়ারম্যান বানাইলাম। কিন্তু চেয়ারম্যান মাসের পর মাস খালি ঢাকায় থাকে। কোনো কাজে চেয়ারম্যানকে কাছে পাই না।’ একই চরের মফিজ উদ্দিন নামের এক দিনমজুর বলেন, ‘চর ভাইঙ্গা খেয়া পার হইয়া আইলাম গেদার নাগরিকত্ব সনদের জন্য। আইসা দেহি চেয়ারম্যান নাই। কবে আসব তাও কে কবার পায় না। চর থিকা আইতেযাইতে দেড়শ’ টাকা খরচ হয়। আইজ নিয়া দুইদিন আইলাম কিন্তু চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিবার পাইলাম না।’ বড়বেড় চরের সাহালম মিয়া বলেন, ‘আমার বউ’র বাচ্চা অইছে। জন্ম নিবন্ধন তুলছি তাতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিবার পাইতেছি না।’

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নাগরিকত্ব সনদের জন্য নাম ঠিকানাবিহীন অনেকগুলোতে স্বাক্ষর দিয়ে এসেছি। শুধুমাত্র নাম ঠিকানা লিখে মানুষ নিয়ে যেতে পারবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা কি কাজ করি সেটা আপনাকে বলব কেন। ঢাকায় আমার কাজ আছে বলে অবস্থান করছি।’

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘মোহনগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় না থেকে ঢাকায় অবস্থান করেন- এ বিষয়টা আমার জানা আছে। তাকে সময় মতো কোনো কাজেই পাওয়া যায় না। এ কারণে তাকে একাধিকবার সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ