পার্কে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থী আটক: সমালোচনার মুখে পুলিশ

  © ফাইল ফটো

বগুড়ায় বিভিন্ন পার্ক থেকে আবারও শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে থানায় আটকে হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীদের আটকের পর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে বুধবার বগুড়া শহরের দুইটি বিনোদন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে ৩২জন শিক্ষার্থীকে আটক করে বগুড়া সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের সময় অনেক শিক্ষার্থীকে বাজে মন্তেব্য করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। এরপর অভিভাবকদের জিম্মায় শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়টি নিয়ে সারা শহর জুড়েই সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ বজলুল করিম বলেন, বিনোদন পার্কেও যদি বসা শিক্ষার্থীদের অপরাধ হয়, তবে তারা যাবে কোথায়? তাদের মানসিক বিকাশ হবে কীভাবে? স্কুল ফাঁকি দিয়ে বিনোদন পার্কে আড্ডা দিলে পুলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারে, অভিভাবক সমাবেশ করে বিষয়টি নজরে আনতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই পুলিশ দিয়ে আটক করে শিশুদের মানসিক নির্যাতন করার অধিকার তাদের নেই। পুলিশকে জবাবদিহি করতে হবে, শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত বিনোদন পার্কে বসে কী অশ্লীল কাজ করেছে যে তাদের এভাবে পুলিশ দিয়ে হেনস্তা করা হলো? শিক্ষার্থীদের অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো কেন? পুলিশ শিশু অধিকার আইনের ধারা রীতিমতো লঙ্ঘন করেছে। এতে করে ওই কিশোর-কিশোরীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

শিক্ষার্থীদের আটক করে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এস বদিউজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সমাজের অপরাধ প্রবণতা কমাতে পুলিশের এই অভিযান। দেখা গেছে যারা স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে পার্কে ঘুরে বেড়ায় তারাই বিভিন্ন অপরাধের শিকার হয় কিংবা অপরাধ করে। এই অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষার্থীরা ড্রেস পড়ে পার্কে ঘুরতে পারবে না এমন কোনো আইন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন আইন নেই। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পুলিশ এমন অভিযান পরিচালনা করতে পারে বলেও জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা শুধু শিক্ষার্থীদের আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। তাদের কোন প্রকার বাজে মন্তব্য কিংবা হেনস্থা করা হয় নি।

উল্লেখ্য এর আগে ২০১৩ সালের ১১ জুন বগুড়ার একটি বিনোদন পার্কে একজন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। ওই অভিযানে আটক করা হয়েছিল ১৪৪ জন তরুণ-তরুণীকে। বিনোদনকেন্দ্রে একসঙ্গে বসে থাকার দায়ে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। অভিযানের ভিডিওচিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।

২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শহরের রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকানে নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে আরেকবার অভিযান চালায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ৪০ শিক্ষার্থীকে আটক করার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় ছাপা হওয়ার পর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ