ডেঙ্গু: জীবন বাঁচাবে ড. আলিমুলের উদ্ভাবন

  © সংগৃহীত

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগিরা কোন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তা বের করার পদ্ধতি আবিষ্কারের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম। তিনি বলছেন, তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাত্র দুই ঘণ্টায় ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সিরোটাইপ এবং চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও সিরোটাইপ সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যাবে।

এই গবেষক ২০০২ সালে ডেঙ্গু থ্রি সিরোটাইপের জীবনরহস্য বের করেছিলেন। জানান, ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের চারটি সিরোটাইপ রয়েছে। ডেন ‘ওয়ান’, ডেন ‘টু’, ডেন ‘থ্রি’ এবং ডেন ‘ফোর’।

প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ বি এম আবদুল্লাহ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চলতি বছর যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ডেন ‘থ্রি’তে আক্রান্ত ছিলেন। তবে সব রোগী কোন সিরোটাইপে আক্রান্ত, সেটা শনাক্ত করা যায়নি।

তবে অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম বলছেন, এনএস ওয়ানের যে পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয় তেমন পরীক্ষাতেই ডেঙ্গু শনাক্তের পাশাপাশি এটি কোন টাইপের সেটা বের করা সম্ভব।

‘আমরা জানি না বাংলাদেশে ডেঙ্গু থ্রি ছাড়া আর কোনো সিরোটাইপ আছে কি না। এইটা টেস্ট করার জন্য যদি চারটা সিরোটাইপ টেস্ট করতে পারি, তাহলে চারটার জন্য চারটা আলাদা টেস্ট করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। কিন্তু আমি যে টেকনোলজি ডেভেলপ করেছি, সেখানে ডেঙ্গুর যে কোনো সিরোটাইপ, চারটাই বা চারটার মধ্যে তিনটা বা দুইটা বা একটা, যে কোনো একটা থাকুক না কেন, সব এক টেস্টেই বের হয়ে চলে আসবে। এটাই এই টেস্টের নভেলটি।’

‘চারটি টেস্ট ইনডিভিজুয়ালি (আলাদাভাবে) করেন, তাহলে একেকটায় যদি দুই হাজার টাকা করেও খরচ করেন, তাহলে খরচ হবে আট হাজার টাকা। কিন্তু এখানে আট ভাগের এক ভাগও খরচ হবে না। আমার এখানে এক হাজার টাকাও যদি দেওয়া হয়, পুরা টেস্টটা কমপ্লিট হয়ে যাবে।’

এই পদ্ধতিটি অবশ্য আবিস্কার হয়েছে কয়েক বছর আগে। জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। পরে মালয়েশিয়ায় যান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে। সে দেশের সরকার আয়োজিত বায়োলেজিস্টদের উদ্ভাবন নিয়ে এক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় তার উদ্ভাবনটি। স্বর্ণ পদক পান তিনি। মালয়েশিয়ার সরকার এই আবিস্কারটি পেটেন্ট করানোর চেষ্টা করে। সে দেশের একটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে বলে। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

এতদিন পরে কেন এটা জানাচ্ছেন, এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমি একটু বাইরে ছিলাম, আসার পর দেখলাম ডেঙ্গি মারাত্মক আকার ধারণ করেছ এবং বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির লোক জনসচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্নভাবে লেখছে। তখন আমি ভাবলাম, বাংলাদেশে ডেঙ্গি ভাইরাস আমি প্রথম ইন্ট্রোডিউস করে দিয়েছি। এবং ডেঙ্গির টাইপ থ্রি জিনোম স্ট্রাকচার আমি প্রথম উন্মোচন করেছি। তখন ভাবলাম আমার কিছু করা দরকার।’

বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে এই উদ্ভাবক নানা পর্যায়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এখানে বহু ফর্মালিটিস, আমিও অনেক কষ্ট করে টেকনোলজি ডেভেলপ করব আবার এর জন্য ঘুরব- এটা পারব না।’

উদ্ভাবক আলিমুল বলেন, ‘সিরোটাইপ ডিগ্রেশন এ কারণে করা দরকার যে, আজকে যে টাইপ দ্বারা হয়েছে, সেটা যদি আগামী বছর অন্য টাইপ হয়, তাহলে ডিজিজটা আরো বেশি সিরিয়াস হবে।’

‘সেই সতর্কতা জানার জন্য এবং ভ্যাকসিন বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করে হোক, অথবা দেশে তৈরি করে হোক, আমাদেরকে চারটা সিরোটাইপ আমাদেরকে আইডেনটিফিকেশন করতে হবে। নইলে আমরা অ্যাকশন নিতে পারব না। নইলে ভ্যাকসিন তৈরি করাও সম্ভব নয়।’

‘এই পরীক্ষায় জানা যাবে, ডেঙ্গু ওয়ান ফার্স্ট টাইম হলো নাকি সেকেন্ড টাইম হলো। এতে ডাক্তার লাইন অব ট্রিটম্যান্ট আলাদা দেবে। আপনাকে পরবর্তীতে এই এই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর চারটা টাইপের অ্যাগেইনস্টে ব্যবস্থা নিতে পারবে। ওয়ার্ল্ডে বিভিন্ন দেশে এখন ভ্যাকসিন তৈরি করছে। কেউ প্রাইমারি ভ্যাকসিন তৈরি করছে, কেউ অন্য ভ্যাকসিন করছে।’

এই পরীক্ষার সুবিধা সাধারণ মানুষ পেতে কত দিন সময় লাগতে পারে- এমন প্রশ্নে অধ্যাপক আলিমুল বলেন, ‘এটা তো রেডি। এমন না যে এটা তৈরি করব কারো অনুদান নিয়ে। আমি এটা ডব্লিউএইচওর ফান্ড নিয়ে কমপ্লিট করে ফেলেছি। এই টেস্টটা আমার দেশের জন্য ব্যয় করতে কোনো আপত্তি নেই।’

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ বি এম আবদুল্লাহ সম্প্রতি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যাদের সিরোটাইপ ওয়ান হয় বা প্রথম বার হয় তারা অতটা জটিল রোগী না। এটা হয়ত তার হয়ে গেছে কিন্তু নিজেও জানে না। জার একটু আকটু হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা মনে করেছে। সেকেন্ড, থার্ড বা ফোর্থ টাইম যাদের হয় তাদের অবস্থা জটিল হয়। এ জন্য আগেভাগে শনাক্ত করা জরুরি।

এবার যারা যারা মারা গেছে তাদের সিংহভাগই আগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানান ডাক্তার আবদুল্লাহ। বলেন, ‘মনে হচ্ছে এবার থ্রি দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। এটার সংখ্যাটা বেশি এবার। এটা সিরিয়াস বলেই এবার মৃত্যুর সংখ্যাটা বেশি।’

এবার ডেঙ্গুর ধরণটা পাল্টে গেছে বলেও জানান অধ্যাপক আবদুল্লাহ। বলেন, ‘প্রতিবার যে লক্ষণগুলো থাকে সেগুলো আমরা পাচ্ছি না। এবার জ¦র কম, পেইন নেই। এক দুইদিনের মধ্যে প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। রক্তক্ষরণের ঝুঁকি হচ্ছে। সেখান থেকে অনেক রোগীর পালস নেই, ব্লাডপ্রেসার নেই, প্রসাব নেই, রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা শকে চলে যাচ্ছে। এটায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা হওয়াতে কিছু লোকের মৃত্যু হয়ে গেছে। এবার রোগীরা বুঝতে পারছে না তাদের রোগের সিম্পটম। অথবা ডাক্তারও কেউ কেউ মিস করছে।’