কেমন আছে কাশ্মীর, আসল পরিস্থিতি আড়াল করছে ভারত

কাশ্মীরের নেতৃস্থানীয় সব নেতাকর্মীকেই কারাগারে ঢুকিয়েছে মোদি সরকার। পুরো উপত্যকায় গিজগিজ করছে লাখ লাখ সেনা-পুলিশ। মোড়ে মোড়ে শত শত চেকপোস্ট। টানা চার দিন ধরে চলছে অঘোষিত কারফিউ।

এর ভেতরেই ফুঁসছে সেখানকার জনসাধারণ। ভারতের সরাসরি শাসন মানতে নারাজ ‘বিশেষ মর্যাদা’ হারানো এই উপত্যকা। পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার অধিকার। গলাচিপে ধরা হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যমের কণ্ঠ। চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে সোমবার থেকে কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরভিত্তিক অধিকাংশ ইংরেজি ও উর্দু ভাষার সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে না। এ ঘটনায় হতাশ সাংবাদিকরা পরিস্থিতিকে ‘অভূতপূর্ব’ আখ্যা দিয়েছেন।

সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে।

স্থানীয়দের আশঙ্কা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির চেহারা এখন বদলে যাবে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল হওয়ায় ভারতীয়রা এখন অঞ্চলটিতে জায়গা কিনতে পারবে ও সরকারি চাকরি করতে পারবে। যা আগে সম্ভব ছিল না। মিডিয়ার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরভিত্তিক অধিকাংশ ইংরেজি ও উর্দু ভাষার সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে না।

প্রতিবেদক মাতিন (ছদ্মনাম) বলেন, আমি সেখানকার ঐতিহাসিক ক্লোক টাওয়ারের একটি ভিডিও ধারণ করতে বিখ্যাত লালচক থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে যেতে সক্ষম হই। তবে কনসার্টিনা তার (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) দিয়ে নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আমাকে থামিয়ে দিয়েছিল সেনারা। কাশ্মীরের বাইরের সংবাদমাধ্যমে কাজ করা স্থানীয় প্রতিনিধিরা ইউএসবি ড্রাইভের

মাধ্যমে তাদের প্রতিবেদন ও ছবি পাঠিয়েছেন। অন্য সাংবাদিকরা নিরাপত্তাজনিত কড়াকড়ির বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তাদের কাজ বাধা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এক সপ্তাহ আগে কাশ্মীর পৌঁছেছেন এক বিদেশি সাংবাদিক। শনিবার পুলিশ শ্রীনগর তার হোটেলে গিয়ে সেই মুহূর্তেই এলাকা ত্যাগ করতে বলেছে। তিনি বলেন, আমার এখানে অবস্থানের বিষয় পূর্বনির্ধারিত ছিল।

তবে জোরপূর্বক টিকিট কেটে রোববার সকালে আমাকে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করে তারা। স্থানীয় সংবাদ সংস্থায় কাজ করা সাংবাদিক সান্না এরশাদ মাত্তো বলেন, পরিস্থিতি দেখতে ও সংবাদ করতে গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বের হয়েছি। বিভিন্ন চেকপোস্টে আমাকে বাধা দেয়া হয়েছে।

মাত্তো বলেন, সাংবাদিকদের তাদের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারতীয় সরকার। আমরা অসহায়, এমনকি আমরা জানি না সেখানে কী ঘটছে। স্থানীয়দের জন্য এটা আরও খারাপ পরিস্থিতি। আমরা জানি না সেখানকার মানুষদের হত্যা করা বা বন্দি করা হচ্ছে কি না।


সর্বশেষ সংবাদ