আত্মপক্ষ সমর্থন করে যা বললেন প্রিয়া সাহা (ভিডিও)

ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সাহা
ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সাহা  © সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে করা অভিযোগ নিয়ে জনসম্মুখে কথা বললেন প্রিয়া সাহা। সাংবাদিককে দেওয়া তার এক সাক্ষাৎকার ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। যাতে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এমনকি সরকার তার পাশে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। এছাড়া কোন সংগঠন নয়, মার্কিন সরকারের আমন্ত্রণে সেখান যান বলেও জানান তিনি।

নিজের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘শার’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ৩৫ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সাহা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রিয়া সাহা জানান, তিনি ভালো নেই, তার পরিবার হুমকিতে আছেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাননি বলে জানান তিনি। ট্রাম্পকে বলা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনসংখ্যা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি তার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন। ভিডিওতে ওপাশ থেকে লাইভে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সাহা জানান, গত মাসের ১৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ইমেইল করা হয়। সেই ইমেইল পেয়ে তিনি ১৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে যান।

কেমন আছেন সেই প্রশ্নে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি ভালো নেই। আপনারা দেশে আছেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন পরিস্থিতি কোথায় যাচ্ছে। আমার পরিবার ভীষণ সমস্যায় আছে। গতকাল আমার বাসার তালা ভাঙতে চেষ্টা করা হয়েছে। বাসার সামনে মিছিল করা হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমার পরিবারের ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কথা বলেছি আমি, তারা আমার ছবি ছাপাতে পারতো। এর মাধ্যমে পরিবারের সবার জীবনকে বিপন্ন করা হয়েছে। আমার পরিবারের কেউ আমার কাজের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত নয়।’

ভিডিও বার্তায় তিনি নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন করা হয় তা উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পকে আপনি কেন এমন অভিযোগ দিলেন সেই প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া বলেন, ‘এই কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও ওপর নির্বাচনোত্তর চরম নির্যাতন চলছিল ৯৪ দিন ধরে। আজকের প্রধানমন্ত্রী তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে, তার অনুসরণ করে এসব কথা বলেছি। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় বলা যায়, এটা আমি তার কাছে শিখেছি।’

ট্রাম্পকে বলা তার ৩৭ মিলিয়ন গুম হয়ে যাওয়া পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক। এ বিষয়ে প্রিয়া যে ব্যাখ্যা দেন, ‘২০০১ সালের পরিসংখ্যান বইয়ের সংখ্যালঘু যে চাপ্টার রয়েছে সেখানে এ বিষয়গুলো লেখা রয়েছে। প্রতি বছর সরকার যে আদমশুমারি বের করে সেই রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় জনসংখ্যা (সংখ্যালঘু) ছিল ২৯ দশমিক ৭ ভাগ। আর এখনকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হচ্ছে ৯ দশমিক ৭ ভাগ। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়নের মতো। তো সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা একইভাবে বৃদ্ধি পায়নি। ফলে আমি ক্রমাগতভাবে হারিয়ে গেছে বলে যে সংখ্যা বলেছি সেটা মিলে যায়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আবুল বারকাত গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় উনি দেখিয়েছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে। আমি ২০১১ সালে স্যারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছিলাম এ কারণে এ বিষয়ে অবহিত।’

তিনি উদাহরণ দেন, ‘আমার নিজের গ্রামের কথা বলেছি। সেখানে ২০০৪ সালে ৪০টি পরিবার ছিল। এখন ১৩টি পরিবার আছে। এই মানুষগুলো কোথায় গেল, কোথায় আছে সেটা রাষ্ট্রের দেখার কথা।’ তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিতে চাইনি।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক সফলতা দেখিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রও মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই আমি চেয়েছি, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের সরকার একসঙ্গে কাজ করুক যাতে দেশে মৌলবাদের উত্থান না হয়। বাংলাদেশ মৌলবাদের কবলে না পড়ে, একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেজন্য আমি মার্কিন প্রশাসনকে এ কথা বলেছি।

মার্কিন সরকারের কাছে এমন অভিযোগের করায় বাংলাদেশের মানুষ তার ব্যাপক সমালোচনা করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে আমি মানুষের দোষ দেখি না। কিছু সংখ্যক মানুষ বিষয়টিকে ভিন্নদিকে নিয়ে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য এ কথাগুলো বলছে। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যুদ্ধ করছে। আমি মনে করি, সরকার আমাকে ও আমার পরিবারকে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে। কারণ সরকার যে কাজটি করছে আমি সেই কাজটিকে শক্তিশালী করা জন্য এই কথাগুলো বলছি।

তার বিরুদ্ধে সরকার আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, সরকার যখন আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য জানবে তখন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে- মনে করি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারি নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিষয়টি তোলা হলে আমার উদ্দেশ্য কী তা তারা খতিয়ে দেখবেন। তখন তারা প্রকৃত সত্য বুঝতে পারবেন এবং আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আমাকে সাথে নিয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন।

সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে তিনি বলেন বলেন, মুসলমান হিন্দুদের শত্রু না, মুসলমান সম্প্রদায়ের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষই অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে একসঙ্গে থাকে কিন্তু কিছু দুষ্টু লোক আছে যারা এই ঘটনা ঘটায়।’


সর্বশেষ সংবাদ