অটল প্রিয়া সাহা, বললেন- সরকার বুঝলে আমার পাশে দাঁড়াবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষ অদৃশ্য হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। একইসঙ্গে সংখ্যালঘুদের অস্থিত্ব ঠিকে রাখার জন্য ট্রাম্পের কাছে সাহায্য চান তিনি। গণমাধ্যমে এই ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক।

অবশেষে প্রকাশ্যে এলেন দেশজুড়ে ঝড় তোলা প্রিয়া সাহা। কোনো এক সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার ইউটিউবে এসেছে। যাতে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এমনকি সরকার তার পাশে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। মার্কিন সরকারের আমন্ত্রণে সেখান যান বলে জানান।

বাংলাদেশ নিয়ে কেন এমন্য বক্তব্য দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক সফলতা দেখিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রও মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই আমি চেয়েছি, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের সরকার একসঙ্গে কাজ করুক যাতে দেশে মৌলবাদের উত্থান না হয়। বাংলাদেশ মৌলবাদের কবলে না পড়ে, একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেজন্য আমি মার্কিন প্রশাসনকে এ কথা বলেছি।

মার্কিন সরকারের কাছে এমন অভিযোগের করায় বাংলাদেশের মানুষ তার ব্যাপক সমালোচনা করছেন। এ বিষয়ে  তিনি বলেন, আসলে আমি মানুষের দোষ দেখি না। কিছু সংখ্যক মানুষ বিষয়টিকে ভিন্নদিকে নিয়ে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য এ কথাগুলো বলছে। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যুদ্ধ করছে। আমি মনে করি, সরকার আমাকে ও আমার পরিবারকে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে। কারণ সরকার যে কাজটি করছে আমি সেই কাজটিকে শক্তিশালী করা জন্য এই কথাগুলো বলছি।

তার বিরুদ্ধে সরকার আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, সরকার যখন আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য জানবে তখন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে- মনে করি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারি নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিষয়টি তোলা হলে আমার উদ্দেশ্য কী তা তারা খতিয়ে দেখবেন। তখন তারা প্রকৃত সত্য বুঝতে পারবেন এবং আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আমাকে সাথে নিয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন।

ট্রাম্পকে বলা তার ৩৭ মিলিয়ন গুম হয়ে যাওয়া পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক। এ বিষয়ে প্রিয়া যে ব্যাখ্যা দেন, ‘২০০১ সালের পরিসংখ্যান বইয়ের সংখ্যালঘু যে চাপ্টার রয়েছে সেখানে এ বিষয়গুলো লেখা রয়েছে। প্রতি বছর সরকার যে আদমশুমারি বের করে সেই রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় জনসংখ্যা (সংখ্যালঘু) ছিল ২৯ দশমিক ৭ ভাগ। আর এখনকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হচ্ছে ৯ দশমিক ৭ ভাগ। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়নের মতো। তো সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা একইভাবে বৃদ্ধি পায়নি। ফলে আমি ক্রমাগতভাবে হারিয়ে গেছে বলে যে সংখ্যা বলেছি সেটা মিলে যায়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আবুল বারকাত গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় উনি দেখিয়েছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে। আমি ২০১১ সালে স্যারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছিলাম এ কারণে এ বিষয়ে অবহিত।’

তিনি উদাহরণ দেন, ‘আমার নিজের গ্রামের কথা বলেছি। সেখানে ২০০৪ সালে ৪০টি পরিবার ছিল। এখন ১৩টি পরিবার আছে। এই মানুষগুলো কোথায় গেল, কোথায় আছে সেটা রাষ্ট্রের দেখার কথা।’

পড়ুন: ট্রাম্পকে ভয়াবহতার কথা কমই বলেছেন প্রিয়া সাহা: তাসলিমা নাসরিন

ট্রাম্পকে ভয়াবহতার কথা কমই বলেছেন প্রিয়া সাহা: তাসলিমা নাসরিন


সর্বশেষ সংবাদ