সরকারি কর্মকর্তারা ভোক্তাদের পক্ষে কথা না বলে মারমুখী হয়ে আছেন

‘আমাদের দোষারোপের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা ভোক্তাদের পক্ষে কথা না বলে মারমুখী হয়ে আছেন। কোম্পানির পক্ষের কথা কেন সরকারি কর্মকর্তারা বলবেন। ভোক্তার প্রত্যাশা ও কোম্পানির স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় করে কথা বলেন। রাগারাগি করে এই সমস্যার সমাধান হবে না।’ কথাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের। তিনি বাজারে পাওয়া পাস্তুরিত দুধ দুই দফা পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনের উপস্থিতি পেয়েছেন।

পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছেন, ‘আমরা কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানির বিরুদ্ধে নই। আমরা চাই দেশীয় দুগ্ধশিল্প বিকশিত হোক। বিদেশি দুধের বাজার তৈরি হোক—এটা আমরা চাই না। রাতারাতি আমাদের বিদেশি এজেন্ট বানানো যাবে না।’

আজ বুধবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক ফারুক। দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘ঢাবি অধ্যাপকের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা: জনস্বার্থে করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, জনউদ্যোগ, বিসিএইচআরডি, সুবন্ধন, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, এএসবিডি ও গ্রিনফোর্স।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ লোক নই। আমি একবারও বলিনি, আপনি বা আপনারা দায় নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো দায় নেওয়ার ব্যাপার নেই। আরে কী মুশকিল! আপনাকে তো কেউ দায় নিতে বলেননি। আপনি হঠাৎ করে মাঠে এসে বললেন, দায় নিতে পারব না।’

পিআর রিভিউ জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই জনসম্মুখে গবেষণার ফল প্রকাশের সমালোচনা সম্পর্কে অধ্যাপক ফারুক বলেন, ‘পিআর রিভিউতে মৌলিক গবেষণা দিতে হয়। আমি যেটা করেছি, সেটা দুধে পানি ছিল কি না, তা বের করার গবেষণা। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে। পিআর জার্নালে গবেষণা প্রকাশ হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। সেই জার্নালে প্রকাশের পর যদি আমি এই ফলাফল প্রকাশ করতাম, তাহলে জনগণ কি আমাকে ক্ষমা করত? পৃথিবীর কোনো দেশে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ইস্যুগুলো পিআর জার্নালের মাধ্যমে আসতে হয় না।’

দুধ প্রক্রিয়াজাত করার সময়ে ত্রুটিতে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোন আসতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলোকে ব্যবস্থাপনার দিকে একটু মনোযোগ দিতে হবে। কারখানাগুলোয় মান নিয়ন্ত্রণে এবং পাস্তুরিত দুধ প্যাকেটজাত করতে আরও সতর্ক থাকলেই এই সমস্যা হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করলেই হবে।’

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক এম আবু সাইদ বলেন, দুধে যে হরমোন বা অ্যান্টিবায়োটিক এল, এটা গাভির মধ্যে কি না বা কোন পর্যায় থেকে আসছে, এটাও গবেষণা করে বের করতে হবে। একজন সচিব একজন বিজ্ঞানী ও শিক্ষককে বিষোদ্‌গার করার এই স্পর্ধা কী করে পান—এ প্রশ্ন সবার কাছে। এর মূল কোত্থেকে এল, এগুলোও বিবেচনায় আসা উচিত।

সভাপতির বক্তব্যে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘দুধের নামে কি আমরা দুধ খাচ্ছি, নাকি অন্য কিছু খাচ্ছি? খাদ্য নিয়ে আমরা প্রায় সবাই উদ্বিগ্ন। ২০০৫ সাল থেকে আমরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করছে।’


সর্বশেষ সংবাদ