১ লাখ ৩১ হাজার রোগীর চিকিৎসায় একজন ডাক্তার

  © সংগৃহীত

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে কয়েক বছর আগে। ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও হাসপাতালে বাড়েনি বেডের সংখ্যা। প্রায় ২১ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা দেন মাত্র ১৬ জন ডাক্তার। সে হিসাবে এক লাখ ৩১ হাজার ২৫০ জন রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য রয়েছেন একজন ডাক্তার। তবে খাতা-কলমে ২১ জন ডাক্তার থাকলেও পাঁচজন আছেন প্রেষণে। শুধু বেতন-ভাতা তুলছেন এ পাঁচজন।

ফলে ১৬ জন ডাক্তার প্রতিদিন সেবা দিচ্ছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক রোগীর। এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন ডাক্তাররা। এখানে আছেন একজন মাত্র সার্জারি ডাক্তার। তিনিই প্রতিদিন একাধিক রোগীর অপারেশন করছেন। পাশাপাশি ৫০-১০০ জন রোগীও দেখছেন তিনি। হাসপাতালে জরুরি প্রসূতি সেবাকেন্দ্র চালু থাকলেও নেই গাইনি ডাক্তার।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা (ইএমও) দেবাশীষ দাশ বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে গড়ে ৩০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসা নেন আরও ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী। এক্ষেত্রে জরুরি বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এখানে ২৪ ঘণ্টাই একজন ডাক্তার থাকা প্রয়োজন। এখানে অন্যান্য পদের ডাক্তারদের এনে সেবা দিতে হয়। জরুরি বিভাগের ডাক্তারদেরই সার্জারি করতে হয়, আবার ওয়ার্ডেও ডিউটি করতে হয়। রেস্টলেস কাজ করতে হয় আমাদের। কারও পক্ষে তেমন ছুটি কাটানোর সুযোগ হয় না।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার রথীন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, একটি হাসপাতালের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ মেডিসিন ও গাইনি। কিন্তু এসব পদের ডাক্তার এখানে নেই। জরুরি প্রসূতি সেবা পর্যন্ত বাইরে থেকে ডাক্তার এনে দিতে হয়। কর্মরত ডাক্তাররা সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ডাক্তার সংকটের বিষয়টি জানিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। সম্প্রতি আবারও চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত ৪০টি পদের মধ্যে ১৯টি পদই খালি। হাসপাতালে কর্মরত ২১ জনের মধ্যে পাঁচজন প্রেষণে কাজ করছেন। ফলে ১৬ জন ডাক্তার আছেন। রোগীদের সেবা দিতে বেগ পেতে হয় তাদের।

হাসপাতালের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হাসপাতালে মোট ৪০ জন ডাক্তারের পদ আছে। এর বিপরীতে ২১ জন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু) বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল ঢাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে সংযুক্ত আছেন। মেডিকেল অফিসার ১৪টি পদের বিপরীতে আটজন কর্মরত থাকলেও তাদের মধ্যে দুইজন হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে সংযুক্ত আছেন। বাস্তবে হাসপাতালে কর্মরত আছেন মাত্র ছয়জন।

মেডিকেল অফিসার আয়ুর্বেদ নরসিংদী জেলা হাসপাতাল এবং সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা বরিশাল সিএস অফিসে প্রেষণে আছেন। সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া), অ্যানেসথেটিস্ট, প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, মেডিকেল অফিসার (রক্ত) ও হেলথ এডুকেশন কর্মকর্তার পদশূন্য রয়েছে। এসব পদের ডাক্তার নেই। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তিনটি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে দুটি। অথচ সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ৫৮টি ডাক্তারের পদ রয়েছে।

হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার জানান, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ডাক্তারের ভয়াবহ সংকট। একজন ডাক্তারকে সার্জারি, ওয়ার্ডে ডিউটি এবং আউটডোরে রোগী দেখতে হয়। অথচ সার্জারির পর একজন ডাক্তারের মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু সময় রেস্ট নিতে হয়। এখানে ইওসি (জরুরি প্রসূতি সেবাকেন্দ্র) চালু আছে। এখানে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি সেবা দেয়ার কথা। কিন্তু গাইনি ডাক্তার নেই।

প্রতিদিন অসংখ্য প্রসূতি রোগীকে সেবা দিতে হয়। অনেকগুলো ডেলিভারি রোগী থাকেন। সিজারও করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব দেয়ার জন্য বাইরে থেকে ডাক্তার আনতে হয়। অথবা অন্যান্য বিভাগের ডাক্তারদের এসব সেবা দিতে হয়। এ অবস্থায় রোগীদের সেবাদানে ডাক্তারদের বেশ বেগ পেতে হয়। জরুরি কয়েকটি পদ পূরণ করা গেলে সেবা কার্যক্রমে গতি আনা সম্ভব হবে।


সর্বশেষ সংবাদ