বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নয়, ভর্তি যুদ্ধ ও একটি স্বপ্ন

আজকের দিনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে না এমন ছেলে–মেয়ে খুজে পাওয়া কঠিন। প্রত্যেকের পরিবারও এমন স্বপ্ন দেখে, আমার ছেলে-আমার মেয়ে নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক, পরিবারের ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করুক। আমিও সবার মতই স্বপ্ন দেখেছিলাম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।

এজন্য এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই দেরি না করে কোচিংয়ের জন্য রাজশাহী গিয়েছিলাম; কিন্তু বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা না থাকায় খুব বেশিদিন টিকতে পারিনি আমি। যার ফলে সম্পূর্ণ কোচিং শেষ না করে চলে আসতে হয়েছিল আমাকে।

এদিকে রেজাল্ট ও প্রকাশ হয়ে গেছে। আল্লাহর রহমতে ভালভাবেই পাশ করেছিলাম। ঐ সময়ে চুয়েট, কুয়েট, রুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার মতো যোগ্যতা হয়েছিল আমার। যাই হোক এর কিছুদিন পর শুরু হয়ে গেল ভর্তি পরীক্ষা। আর তখন মাথায় ঘুরপাক খাওয়া শুরু করল কোথায় ফর্ম উঠাবো? কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালো? কোথায় গিয়ে থাকব? কীভাবে যাব? ইত্যাদি নানা রকমের চিন্তা। কিন্তু দুরভাগ্য বশতঃ রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট-এর কোনটিতেই আমার পরীক্ষা দেয়া হয়নি। হয়ে গেল আমার প্রথম স্বপ্নের অপমৃত্যু। এরপর ডিপ্রেশন আর হতাশা নিয়েই মেডিকেল, ঢাবি আর রাবির ফর্ম তুলেছিলাম; কিন্তু সেখানেও সফলতা দেখা হয়নি আমার। হয়ে গেল আমার দ্বিতীয় স্বপ্নের অপমৃত্যু।

আর এরমধ্যেই অনেক বন্ধুর চান্স হয়ে গেছে, পরে রইলাম শুধু আমি আর আমার বাকী কিছু বন্ধু। এদিকে মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবি ও হাবিপ্রবি ছাড়া। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও ফর্ম ছাড়ছে ইচ্ছাকৃতভাবেই আমি জাতীয় ফর্ম উঠাইনি। জাতীয়র পরীক্ষা হয়ে গেল; যে বন্ধুরা বাকি ছিল তাদেরও চান্স হয়ে গেল। পরে রইলাম শুধু আমি। আমার মনে হয় ভাগ্য ভালো ছিল সেসময়, কোন কারণে বেরোবি আর হাবিপ্রবিতে তখনও ভর্তি পরীক্ষা হয়নি, যার ফলে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হলো আর আল্লাহর রহমতে চান্সও পেয়ে গেলাম।

বেরোবি ছেড়ে হাবিপ্রবিতে ভর্তি হলাম আর স্বপ্নগুলোকে এখানেই সাজাতে লাগলাম এই বলে যে তুমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারনি তো কি হয়েছে- প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আছো। মেডিকেলে পড়তে পারনি তো কি হয়েছে গাছের রোগ-ব্যাধি চিকিৎসা তো জানতে পারছো?

আমি এখন অনেক খুশি যে আমি উত্তর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচার সাবজেক্টে পড়ি; যে বিষয়ের সাথে জড়িয়ে আছে এদেশের মাটি ও মানুষের অস্তিত্ব।

তাই তোমরা যারা ভর্তি পরীক্ষা দিবে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, তোমরা নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস রাখো, নিজের লক্ষ্য ও স্বপ্নের প্রতি অবিচল থাকো বিজয় আসবে ইনশাআল্লাহ। আর থাকা আর যাওয়ার যে বিষয় সেটা দেখবে; যখন রাস্তায় বের হয়েছো তখন অটোমেটিক হয়ে গেছে এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমাদের বড় ভাইয়া আর আপুরা তো আছেনই। সুতরাং এ বিষয়ে চিন্তা ছেড়ে দাও; আর মনে রাখবে ভর্তি পরীক্ষা শুধু একটা পরীক্ষাই নয়; একটা যুদ্ধও বটে। এ যুদ্ধই তোমাকে জানিয়ে দিবে তুমি কীভাবে বাচতে পারবে?

প্রতি বছর যতগুলো প্লাসধারী ছাত্র-ছাত্রী বের হয়; ততগুলো আসন-ই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, অন্য গ্রেডধারীরাতো আছেন।তার মানে বুঝতেই পারছো কত কঠিন এ যুদ্ধ । সুতরাং, নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করে সামনে এগিয়ে যাও । সবার জন্য শুভ কামনা রইল।- সংগৃহীত

আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির শুরুতে যা করণীয়

আরো পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় নতুন নিয়ম, নতুন মান বন্টন


সর্বশেষ সংবাদ