ইফতার পার্টি না করে টাকা দান করতেন রাষ্ট্রপতি কালাম, কেন?

সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম ও প্রধানমন্ত্র নরেন্দ্র মোদী
সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম ও প্রধানমন্ত্র নরেন্দ্র মোদী

ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ইফতার পার্টির রেওয়াজ বহুকাল ধরে চলে এলেও ছন্দপতন ঘটিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালাম। তিনি যদিও ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনে তার আমলটি ছিল ইফতার পার্টিমুক্ত।

কেন তিনি রেওয়াজের ছন্দপতন ঘটিয়েছিলেন? তার ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে তাকে নিয়ে লেখা তারই সাবেক সচিব অবসরপ্রাপ্ত আইএস কর্মকর্তা পি এম নায়ারের একটি লেখা ও সাক্ষাৎকারে। ‘দি কালাম এফেক্ট, মাই ইয়ার্স উইথ দি প্রেসিডেন্ট’ শিরোনামের লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০২ সালে। আর সাক্ষাৎকারটি প্রচার হয়েছিল দূরদর্শনের তামিলভাষী আঞ্চলিক চ্যানেল ডিডিপোধিগাইয়ে।

সেখানে পি এম নায়ারে উল্লেখ করেছেন, ২০০২ সালে ড. আবদুল কালাম যখন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন, তখন রমজান এসেছিল জুলাই-আগস্টে। ভারতীয় রাষ্ট্রপতির জন্যে একটা নিয়মিত রেওয়াজ ছিল যে, তিনি রমজানে ইফতার পার্টির আয়োজন করবেন। সে অনুযায়ী এ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ড. কালাম (তার সচিব নায়ারকে) প্রশ্ন করলেন, কেন তিনি একটি পার্টির আয়োজন করবেন? এ পার্টিতে যে অতিথিরা আসবেন, তারা তো সবসময় ভালো খাবার খেয়েই অভ্যস্ত। রাষ্ট্রপতি জানতে চান, একটি ইফতার পার্টির আয়োজনে কত খরচ পড়ে? তখন বলা হয়, প্রায় ২২ লাখ রুপি। ড. কালাম তখন নির্দেশ দেন, এই অর্থ দিয়ে খাদ্য, পোশাক ও কম্বল কিনে কয়েকটি এতিমখানায় দান করতে। এরপর নির্দিষ্ট এতিমখানা বাছাইয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়।

এতিমখানা বাছাইয়ের পর ড. কালাম আমাকে (নায়ারকে) তার কক্ষে ডাকলেন এবং এক লাখ রুপির একটি চেক দিলেন। তিনি জানালেন, তিনি তার ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে কিছু অর্থ দান করছেন। কিন্তু এ তথ্য কারো কাছে প্রকাশ করা যাবে না। এতে ব্যথিত হয়ে নায়ারে বলেন, ‘স্যার, আমি এখনই বাইরে যাব এবং সবাইকে বলব। কারণ, মানুষের জানা উচিত— এখানে এমন একজন মানুষ রয়েছেন— তার যা অর্থ খরচ করা উচিত, তিনি সেটা শুধু দানই করেননি, তিনি সেই সঙ্গে নিজের অর্থও বিলিয়েছেন।’

পি এম নায়ারে আরো অনেক চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। যেমন বলেছেন, ড. এ পি জে আবদুল কালাম যখনই বিদেশ যেতেন, তখন তিনি দামি উপঢৌকন নিতে অভ্যস্ত ছিলেন। কারণ এটাই রাষ্ট্রাচার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ ও জাতিরাষ্ট্রের কাছ থেকে সফররত বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের এ ধরনের উপঢৌকন নেওয়া একটি বৈশ্বিক প্রথা হিসেবে প্রচলিত। এই উপঢৌকন প্রত্যাখ্যান করা হলে তা হতো কোনো জাতির প্রতি অসম্মান করা এবং ভারতের জন্যে তা হতো বিব্রতকর। সুতরাং তিনি বিনা বাক্য ব্যয়ে এসব উপঢৌকন নিতেন। কিন্তু ফিরে আসার পর তার নির্দেশ থাকত, সব উপহারসামগ্রীর আলোকচিত্র তুলতে হবে, এর ক্যাটালগ করতে হবে, এরপর তা মহাফেজখানায় দিতে হবে। তাকে পরে আর কখনো এসব উপহারসামগ্রীর দিকে ফিরেও তাকাতে দেখা যায়নি।

পি এম নায়ারে উল্লেখ করেছেন, আবদুল কালাম যখন রাষ্ট্রপতি ভবন ত্যাগ করেন, তখন তাকে কোনো জিনিস তো দূরে থাক— একটি পেনসিলও নিয়ে যেতে দেখা যায়নি। পি এম নায়ারে জানান, ড. কালাম তার আত্মীয়দের একবার দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানালেন। তারা সবাই রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান নিলেন। তাদের নগর পরিদর্শন করাতে তিনি একটি বাস ভাড়া করলেন এবং সে অর্থ তিনি নিজে পরিশোধ করেন। কোনো সরকারি গাড়ি তার আত্মীয়দের জন্যে ব্যবহৃত হয়নি। ড. কালামের নির্দেশনা অনুসারে তাদের থাকা-খাওয়ার খরচ হিসাব করা হলো। বিল দাঁড়াল দুই লাখ রুপি, যা তিনি নিজে পরিশোধ করেছেন। ভারতের ইতিহাসে এটা আর কেউ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ