সরকারি তিতুমীর কলেজ

চিরচেনা ক্যাম্পাস তার রূপ হারিয়েছে

  © ফাইল ফটো

কিছুদিন আগেও যে ক্যাম্পাসের শহীদ বরকত মিলনায়তন শিক্ষার্থীদের অট্টহাসি, আড্ডা আর কোলাহলে মুখরিত থাকত, আজ সেখানে সুনসান নিরবতা। কেমন যেনো এক শূন্যতা, বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটার মত। থেমে থেমে আসে পৃথিবী। এখন পুরো ক্যাম্পাসে শুনশান নিরবতা। নেই কোনো কোলাহল। এ যেনো একেবারে নীরব নিস্তব্ধ রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ।

রিক্স থেকে নেমে দু’পা এগোতেই প্রধান ফটক; মহাখালী-গুলশান রোডের একেবারে গা ঘেষা। কলেজ ক্যাম্পাসের বিশালাকার প্রধান ফটক টপকাতেই দুজন গেটম্যান দাঁড়িয়ে। দায়িত্ব পালন করছেন। যাতে করে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে যে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য সাথে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আছেন।

এরপর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক পার হলেই দেখা যাবে মূল দুই পাশের গাছগুলো। নিরব নিস্তব্ধতায় ফুলে ফেপে মোটা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কোন পরিত্যক্তি বাড়ি বা বাগান। যেমন করে পড়ে থাকে অনেককাল আগের কোনো রাজবাড়ি, তেমনই মনে হয় দেখে। আরেকটু সামনে এগুতেই বিজ্ঞান ভবন। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে ইচ্ছে খুশি ভেতরে ঢুকতে পারে যে কোনো শিক্ষার্থী। কেউ চাইলেই সেখানে ডুকতে পারবে না। কোনোমতে কলেজ কার্ড দেখিয়ে, গেট ম্যানের অনুমতি নিয়ে ভেতরে শুধু যা প্রবেশ করেছে। বিজ্ঞান ভবনের ভিতরের গাছগুলোও ডালপালা শান্তিতে ছেড়ে দিয়ে বড় হয়েছে।

আর অনার্স ভবনের সামনের রেন ট্রি গাছ দাঁড়িয়ে আছে নীরবে। কাছে গেলে মনে হবে এ এক ভুতুড়ে এলাকা। অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা। রাগ আর অভিমানে কাছে গেলেও তাকাচ্ছে না। ঘাড় বাকিয়ে শাট হয়ে টান টান করে দাঁড়িয়ে আছে।

তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ শেখ রাসেল পুষ্প কানন। বাগানের ভেতরের ফুল গাছগুলো যেন স্বস্তিতে বড় হচ্ছে। তবে প্রকৃতির উচ্ছ্বাসের মধ্যেও ক্যাম্পাসের নিরবতা জানান দেয় ভালো নেই সে। তার আসল খোরাক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি ভূতুড়ে করে তুলেছে। আলোর জ্বলকানি স্থানগুলোও দিনের বেলায়ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভূতেড়ে লাগছে। মাঠের গাসগুলোও বেশ নাদুস নুদুস।

সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস

শিক্ষার্থী শূন্যে খাঁ খাঁ করছে শিক্ষার্থীদের প্রিয় আড্ডার এইসব জায়গাগুলো। যে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীরা বাসে করে ক্যাম্পাসে আসার জন্য দীর্ঘ প্রতিযোগিতা, সেই বাসে সিট ধরার জন্য নেই তাড়াহুড়ো। কলেজের গ্যারেজে, শহীদ মিনারের পেছনে মাথা কুঁজো করে দাড়িয়ে আছে সম্পর্ক, অগ্নিবীণা, সোনারতরী সহ সব ক’টি বাস।

তারুণ্যের অনুপস্থিতিতে স্পন্দনহীন হয়ে পড়ে আছে শত সহস্র প্রাণের কলরবে মুখরিত রাজধানীর তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস।

মন খারাপ নিয়ে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শুভ্রা চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে চিরচেনা ক্যাম্পাস তার রূপ হারিয়েছে। জানি না কতদিন পর ক্যাম্পাস তার আগের অবস্থা ফিরে পাবে। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় কলেজের শিক্ষকসহ সকল বন্ধুদের মিস করছি। আর ক্যাম্পাসে গেলে যে ভালো লাগা কাজ করতো সেগুলো এখন যেনো সব স্মৃতি আর মুঠোফোনের ছবি।’

ক্যাম্পাস ঘুরে এসে আহমেদ ফেরদাউস খান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে মেইনগেট পার হয়েই দেখতে পাওয়া দুই পাশের গাছগুলো নিরব নিস্তব্ধতায় ফুলে ফেপে মোটা হয়েছে। আমাদের প্রিয় এই ক্যাম্পাস দেখে মনে হচ্ছে কোন পরিত্যক্তি বাড়ি বা বাগান। এখন আমি চাইলেই কোনো ভবনে, ক্লাসরুমে ঢুকতে পারছি না। বন্ধুদের দেখা পাচ্ছি না।’

করোনা ভাইরাস শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের মাঝে বিস্তৃত দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা আবারো ক্যাম্পাসকে করে তুলবে প্রাণোচ্ছল। ক্যাম্পাসের নির্জনতা ও নিস্তব্ধতা চিরতরে ঢেকে দিয়ে শিগগিরি শিক্ষার্থীরা ফিরবে বলে প্রত্যাশা করছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ