করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি দ্রুত এন্টিবডি টেস্টের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন

  © ফাইল ফটো

শরীরে যখন কোনও জীবাণু বা ভাইরাস ঢুকার পর সেটিকে নষ্ট করার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেটি তৈরি হয় তার নাম এন্টিবডি। প্রথম যে এন্টিবডি তৈরি হয় তার নাম IgM. করোনার ক্ষেত্রে সেটি রক্তে পাওয়া যায় ৭ম দিন থেকে। এরপর তৈরি হয় IgG যা মূলত শরীরে প্রতিরক্ষার কাজ করে এবং এতে করে পুনরায় আক্রান্ত হতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়। আর একবার এই ক্ষমতা তৈরি হলে সাধারণত তিনি আরেকজনের জন্য ক্ষতির কারণ হন না।

বাংলাদেশে করোনার রোগী শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ পাশাপাশি বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপও৷ বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় লকডাউনের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল এই এক মাসে অর্থনীতিতে এক লাখ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ আর কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা৷ এই অবস্থায় অর্থনীতির চাকা সচল করার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব?

আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৭৭ হাজার রিকভারি করছেন। এছাড়াও হাজার হাজার মানুষ আছে যারা করোনায় আক্রান্ত ছিল কিন্তু শরীরে টেস্ট করা হয়নি কিংবা করোনা উপসর্গ দেখা যায়নি। এদের বেশির ভাগের শরীরেই এন্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা। হয়তো তা হয়েছেও কারন গত কয়েক দিন যাবত দেখতেছি যে, ঢাকা শহরে নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। যেহেতু ঢাকা শহরে কার্যকরভাবে লকডাউন চালু করা যায়নি, তার মানে এখন ঢাকা শহরের মানুষ হার্ড ইমিউনিটি সিস্টেমের দিকে ধীরে ধীরে দাবিত হচ্ছে। এখানে বলা প্রয়োজন যে, যখন একই এলাকার অনেক মানুষের (৭০% এর বেশি) দেহে একইসঙ্গে এন্টিবডি তৈরি হয়, তখন তা ওই ভাইরাসটিকে বিস্তারে বাধা দেয় বা নিঃশেষ করে ফেলে। Epidemiology তে এই ধারণাকেই বলা হয় হার্ড ইমিউনিটি (herd Immunity )।

যাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে তারা নির্দ্বিধায় কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারে। এতে করে একদিকে জীবনের ঝুঁকি কমে আসবে, অন্যদিকে অর্থনীতির চাকা সচল করতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তাহলে এখন দেখতে হবে এদের শরীরে সত্যিকারে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা? আর এই জন্যই প্রয়োজন এন্টিবডি টেস্ট। যিনি এন্টিবডি টেস্টে পজিটিভ আসবেন, তিনি Immunity Certificate পাবেন এবং Immunity Certificate ধারি ব্যক্তিই নিরবিঘ্নে কাজ করতে পারবেন।

আমাদের ডাক্তার এবং নার্সদের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এখন পর্যন্ত বহু স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় পজিটিভ হয়েছেন। এদের এন্টিবডি টেস্ট করা খুবেই জরুরী। যাদের এন্টিবডি টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ আসবে তারা অনেক নির্ভয়ে করোনা রোগীর সেবায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আর অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে লাগানো যেতে পারে করোনা ছাড়া অন্য রোগের রোগীদের সেবায়। তাহলে কোনও রোগীর চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটবে না।

পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন এন্টিবডি টেস্টের উপর জোর দিচ্ছে। এমন কি, দক্ষিণ কোরিয়া একেবারে প্রথম থেকেই এন্টিবডি টেস্টের দিকে মনোযোগ দিয়েছিল বলে তাদের লকডাউনে যেতে হয়নি তেমনভাবে। তাই আমাদের দেশে সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এবং অর্থনীতির চাকা সচল করতে সরকারীভাবে করোনা টেস্টের পাশাপাশি আমাদের এখন দ্রুত এন্টিবডি টেস্টের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ