হাজার বার শুনেছি- তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না!

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম

আমি এক জীবনে কতবার যে শুনেছি, ‘তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না!’ সে কেবল আমিই জানি। একটা সময় প্রায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম- আমাকে দিয়ে বোধকরি কিছু হবে না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে, আশপাশের সবাইকে দেখলে মনে হতো- এরা আমার সকল খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতেই পছন্দ করে। এইসব শুনে আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম- আমার মনে হয় কোন ভালো কিছু নেই।

ভাগ্যিস ভালো আমার মা ছিলেন। তিনি অবশ্য সব সময় ভালো দিকগুলো নিয়ে কথা বলতেন। সংখ্যাটা ১২। সবাই সবাইকে ভালো করেই চিনি-জানি। বছর তিনেক কিংবা এর চাইতেও বেশি সময় ধরে বালটিক সাগরের পাশে ছোট্ট একটা দেশে আমরা থাকছি। কেউ ব্যাচেলরে পড়ছে কিংবা মাস্টার্সে অথবা পাস করে ফেলেছে।

এক জনের জীবনের সকল ধ্যান-জ্ঞান হচ্ছে সুন্দরী একটা মেয়ে বিয়ে করা। ভালো ছাত্র। কোন রকম সমস্যা ছাড়াই মাস্টার্স পাস করে ভালো চাকরি করছে। জীবনে আর কোন সমস্যা নেই। তাই ডেকে ডেকে সমস্যা হাজির করে। আমি তাকে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে পরিষ্কার বলা যেতে পারে- সৌন্দর্য আসলে ওর বেলায় খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। কারন আমি খেয়াল করে দেখেছি, যে কোন মানুষের চারিত্রিক গুণাবলীকে ছেলেটা প্রাধান্য দিচ্ছে। সে নিজেও মনে প্রাণে চায় চমৎকার চারিত্রিক গুণাবলীর একজন মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হতে। অথচ সে দিব্যি মনে করে বসে আছে- একটা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারলেই ওর জীবন সার্থক। তো আমি তাকে বললাম- তোমার বরং উচিত হবে- মানুষটা কেমন সেটা আগে বিবেচনা করা। নইলে একটা সময় সমস্যা হবে।

আরেকজন ভাবছে হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজের মাঝেই জগতের সকল আনন্দ। অথচ এই ছেলের সাথে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে কোন বিষয়ের দর্শন কিংবা তাত্ত্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে কাটিয়ে দিতে পারবেন। কারন ওর চিন্তার জগতটা অনেক বিস্তৃত এবং গভীর। দেশে একটা মাস্টার্স করে বছর তিনেক আগে যখন এখানে মাস্টার্স করতে এসেছে, ওর সঙ্গে কথা বলে আমি তাকে বলেছিলাম- তোমার আলাদা করে ডিগ্রীর জন্য পড়াশুনা করার একদম দরকার নেই। তুমি বরং তোমার সাথে যায়, এমন কোথাও চাকরির জন্য আবেদন করে ফেল এখানে। চেষ্টা করলেই পেয়ে যাবে। শিক্ষক হয়ে আমি কিনা বলছি- আলাদা করে পড়াশুনা করার দরকার নেই! সে হয়ত অবাক হয়েছে! উত্তরে সে বলেছে- আমার তো রেস্টুরেন্টে কাজ করতে ভালো লাগছে। অথচ আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি- ওর হয়ত বেশি দিন এই কাজ করতে ভালো লাগবে না। একটা সময় সে ভাববে- এইসব আমি কি করছি!

ওরই আরেক ক্লাসমেট, সে অবশ্য রান্নার বিষয়গুলোকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। এমনিতে সে খুব একটা কথা বলে না। যে কোন আড্ডায় চুপচাপ কথা শুনে। কিন্তু হোটেল রেস্টুরেন্টের রান্না কিংবা ম্যানেজমেন্টের যে কোন বিষয় নিয়ে আড্ডা দেবার সময়, সে এতো আগ্রহ নিয়ে কথা বলে যে পরিষ্কার বুঝা যায়- যে কাজটা সে করছে, খুব আনন্দ নিয়ে করছে এবং সে এই কাজটাকে ভালোবাসে। সেও পাশ করে বের হয়ে গিয়েছে। আমি তাকে কখনো বলতে যাইনি- মাস্টার্স করে ফেলেছ। বিদেশে এসে উচ্চ শিক্ষা নিলে; এখন ভালো একটা চাকরি করো! নাহ, এটা আমি তাকে কখনো বলতে যাইনি। কারন আমার মনে হয়েছে- ও যে কাজটা করছে; সেটাতেই সে ভালো করবে। জগতের কোন কাজ'ই তো খারাপ না। নির্ভর করছে- নিজেদের উপর। তো কাল আমি তাকে বলেছি- আমার ধারণা তুমি সবার আগে একটা রেস্টুরেন্টের মালিক হবে এবং তখনও তুমি সে কাজ উপভোগ করবে ও সফল হবে।

এক ছাত্রী, ঢাকার নামকরা হলিক্রল কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে এসছে। এখানে যেহেতু পড়াশুনার সিস্টেম একদম ভিন্ন, সে প্রথম থেকেই বলে এসছে- আমি খুবই খারাপ ছাত্রী। আমাকে দিয়ে কি কিছু হবে? ওর ধারণা ওকে দিয়ে কিছু হবে না। পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমি ওকে বললাম- তুমি এখানকার স্কুল গুলোতে চেষ্টা করো। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে স্কুলের শিক্ষকতা তোমাকে দিয়ে হবে। সে এইবারও প্রশ্ন করেছে-আমাকে দিয়ে কি হবে? অথচ ওর কথা বলার ধরণ এবং আচরণ দেখে আমার মনে হয়েছে- স্কুল লেভেলে একটা চাকরি ও জুটিয়ে নিতে পারবে চেষ্টা করলে। সেটাও যদি না পারে কেয়ার গিভার হিসবে সহজেই কোথাও না কোথাও হয়ে যাবে। বাংলায় মাস্টার্স করা আমার এই ছাত্রীটা বুঝতে পারছে না- সে আসলে ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো। বাংলায় পড়ে এসে এমবিএ করে ফেলা যে চারটে খানি কথা না; সেটা তাকে কে বুঝাবে! আমি হলে নির্ঘাত ফেল করতাম। অথচ, সে ধরেই নিয়েছে- তাকে দিয়ে কিছু হবে না। একা একা একটা মেয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে আসা এবং জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে মানিয়ে নিয়ে এরপরও থেমে না যাওয়ার কি চমৎকার উদাহরণ'ই না হতে পারে এই মেয়েটা। আমার এই ছাত্রীকে নিয়ে অন্য কোন সময় বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে।

অন্য একজন অবশ্য মনের আনন্দে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে ভালো চাকরি করছে এখানে। গ্রাফিক ডিজাইনিং কিংবা প্রোগ্রামিং টাইপ ব্যাপার গুলো বোধকরি সে ভালো পারে। পড়াশুনা ছেড়ে দেয়াতে আমার আসলে সেই অর্থে কোন আপত্তি নেই। আমার কখনোই মনে হয়নি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দরকার সব সময় আছে। ওর সমস্যাটা হচ্ছে- সে নিজেকে বিরাট হ্যান্ডসাম মানুষ হিসেবে দেখতে চায়। অথচ সে বুঝেই উঠতে পারছে না- প্রেমিক মানুষ হিসেবেই ওকে ভালো মানাচ্ছে। আমার ধারণা ওর বউ খুবই সৌভাগ্যবান এই অর্থে- এই ছেলে আর যা'ই হোক বউ ছাড়া অন্য কোন দিকে নেই! তার হ্যান্ডসাম হবার সকল প্রচেষ্টাও বৌয়ের জন্য!

মফস্বল শহর থেকে উঠে আসা আরেকজন মাস্টার্স পাশ করে ফেলেছে। ওকে দেখলেই আমার মনে হয়- ওর জন্য হচ্ছে দেশে ৯টা থেকে ৫টা সরকারি চাকরি কিংবা ব্যাংক টাইপ চাকরি। আমি তাকে বলেছি- তোমার বিদেশে থেকে কাজ নেই। তুমি বরং দেশে চলে গিয়ে ভালো একটা চাকরি জুটিয়ে নাও। ৯টা-৫টা চাকরি করো সেখানে গিয়ে। আমার মনে আছে আজ থেকে ১০ বছর আগে যখন সুইডেনে ছিলাম, তখন এক ছেলের পড়াশুনা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাকে বলেছিলাম- বিদেশে থেকে আর কাজ নেই। দেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করাই ভালো হবে। ছেলেটা এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে।

আরেক ছাত্র হচ্ছে পুরোপুরি বুদ্ধিজীবী টাইপ। সে ব্যাচেলর পড়ার আগে থেকেই নিজেকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এখন অবশ্য ব্যাচেলর পাশ করে ফেলেছে। মাস্টার্স করার আগেই এই মুহূর্তে পিএচডি কিভাবে করবে সে নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। আজকাল আবার আঁকাআকি শিখছে! আমি তাকে তার কোন কিছু নিয়েই কিছু বলতে যাইনি। কারন আমার ধারণা সে এক সময় পিএইচডি করেই ফেলবে। যেটা আমার কাছে সমস্যার মনে হয়েছিলো সেটা বরং বলেছি। আমার কেন যেন মনে হয়েছে- অন্যদের ছোট করে দেখার একটা প্রবণতা ওর মাঝে আছে। বছর তিনেক আগে ওকে বলেছিলাম- এই ব্যাপারটা বোধকরি পরিবর্তন করা যেতে পারে। ছেলেটা এখন বেশ চমৎকার ভাবেই সবার সাথে মিশতে পারছে।

অন্য দুইজন অবশ্য নিজেরাই জানে না, ঠিক কোন কারণে ওরা বিদেশে এসছে! কেনই বা মাস্টার্স পাশ করে বসে আছে! কি করে বেড়াচ্ছে! এদের দুইজনকে দেখে মনে হবে- এরা মনের আনন্দে নিজেদের জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। এদের মাঝে একজন মাস্টার্সে রোহিঙ্গাদের নিয়ে থিসিস করেছে। আমার অধীনেই করেছে। সে যে কিভাবে এই থিসিস করেছে, আমার জানা নেই। কিন্তু থিসিসটা বেশ চমৎকার হয়েছে। আমি একদিন ওকে বললাম- তুমি বরং পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারো আরও উচ্চ পর্যায়ে। কারণ তোমার থিসিসটা কিন্তু বেশ ভালো হয়েছে। এই ছেলে চোখ কপালে তুলে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছে- দেখে আমার নিজের কাছেই নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছিলো আমি এরপর নিজেই আবিষ্কার করেছি- ওর জন্য রবং এটাই ভালো। অনেকটা- যেভাবে যাচ্ছে যাক! জীবনে খুব একটা উচ্চাভিলাষ নেই। এতো চিন্তা ভাবনাও নেই। তাই পড়াশুনা করে হোটেলে কাজ করলেও ওর সমস্যা নেই। আবার পিএচডি করতে গেলেও সমস্যা নেই। ওর বরং এভাবে থাকাই ভালো।

অন্য আরেকজনের অবস্থাও অনেকটা এমনই। তবে সে এক স্কেল উপরে। তাকে দেখলেই আপনার মনে হবে- সে মহা আনন্দে আছে। এই ছেলে সেবার মাস্টার্স থিসিসের আগে পড়লো মহা সমস্যায়। তখন তার চোখে জল দেখেছিলাম। শেষমেশ অবশ্য সব ভালো ভাবে শেষ হয়েছে। ওর ব্যাপারটা হচ্ছে- আপনি ওর আশপাশে থাকলে এক ধরনের এনার্জি পাবেন। কারন ওর কথা-বার্তার ধরণই এমন, যে কোন কিছুতে বাগড়া বাঁধিয়েই ছাড়বে! এই কাজ সে মনের আনন্দে ইচ্ছে করে'ই করে বেড়ায়! সে ভাবছে- দিলাম একটা বাগড়া বাঁধিয়ে। এদিকে আমি ভাবছি- যাক বাবা, কেউ একজন তো আছে এনার্জি ক্রিয়েট করার। সে বুঝতেই পারছে না এটাও একটা ভালো গুণ।

রইলো বাকী দুই! আমি এবং অন্য আরেকজন। গতকাল আমরা সবাই মিলে এখানে পিকনিকের মতো করেছি। সেখানে আলোচনা চলছে- মুরগী বেকিং করা হবে নাকি গ্রিল করা হবে। সেকি তুমুল আলোচনা! তো ব্যাচেলর পাশ করে ফেলা মানুষটা আমাকে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসেছে -আচ্ছা বেকিং আর গ্রিলের মাঝে পার্থক্য কি?

প্রশ্নটা শুনে আমি রীতিমত ভড়কে গিয়েছি। কারন আমি এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। যার কথা বলছি, গত চার বছর ধরে দেখে আসছি, যে কোন বিষয় নিয়ে খুব সহজে প্রশ্ন করে ফেলার এক আশ্চর্য ক্ষমতা আছে ওর। সে যে কোন অদ্ভুত প্রশ্ন একদম নির্বিকার ভাবে আপনাকে করে ফেলতে পারবে। আমি আজীবন বিশ্বাস করে এসছি- জ্ঞান-বিজ্ঞান-সভ্যতার মূল বিকাশ আসলে তখনই সম্ভব, যখন আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন। আপনি যদি প্রশ্ন করতে না পারেন; তাহলে আপনি জানবেন কি করে? বুঝবেন কি করে?

আমি এবং আমার ধারণা আমার মতো বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের পক্ষেই যে কোন পরিস্থিতে যে কোন প্রশ্ন করে ফেলা সম্ভব হয় না। কারণ রাজ্যের সঙ্কোচবোধ এসে হাজির হয়। যার কথা বলছি তাকে আমার সব সময় এই জন্য অন্য আর সবার চেয়ে আলাদা মনে হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সে একটা সময় এমন কিছু করবে, যার কারনে শুধু তার পরিবার কিংবা প্রিয়জন না; দেশের মানুষরাও গর্ব অনুভব করবে। সমস্যা হচ্ছে, সে নিজেই বুঝতে পারছে না তার এই অসাধারণ ক্ষমতার ব্যাপারটা। আপনি তার সামনে যে কোন অদ্ভুত বিষয় নিয়ে হাজির হন, সেটা সে খুব স্বাভাবিকভাবে ধারণ করার চেষ্টা করবে।

আমার নিজের কথা তো কিছু বলাই হলো না। আমি বরং গতকাল রাত থেকে নিজেই নিজের উপর মুগ্ধ হয়ে বসে আছি! বেকিং এবং গ্রিলের পার্থক্য যে আমি তাৎক্ষনিক ভাবে বলতে পেরেছি (সঠিক-বেঠিক, সেটা অবশ্য জানি না!) এটা ভেবেই ভালো লাগছে!

ও আচ্ছা, আমরা আসলে ১২জন নই ১৩ জন। একজন গিয়েছে ফিনল্যান্ডে সামার জব করতে তিন মাসের জন্য। অনেকেই হয়ত বলবে আনলাকি ১৩! নাহ, আসলে ১৪ জন। আমার ছাত্রীটির জামাইও যুক্ত হয়েছে আমাদের দলে। সে এখানে এসছে মাস ছয়েক হয়। অথচ দেখে শুনে মনে হচ্ছে- আমাদের দলে সে প্রথম থেকেই ছিল সব সময়।

উপরের যাদের কথা বর্ণনা করেছি; এরা সবাই আমার এখানকার ছাত্র-ছাত্রী। এদের মাঝে একজন আমার অতি প্রিয়জন এবং বলতে সঙ্কোচ নেই, আমি তাকে ভয়ানক ভালোও বাসি। তাকে হয়ত ছাত্র হিসেবে সেই অর্থে দেখার সুযোগ আমার দিক থেকে নেই। বাদ বাকীদের সম্পর্কটা একদমই ছাত্র-শিক্ষকের, সেই সঙ্গে বন্ধুত্বেরও বটে। আমরা আড্ডা দেই এক সঙ্গে, পিকনিক করি, ঘুরতে যাই এবং বলি না, এমন কোন ব্যাপার নেই। কিন্তু সেটা অতি অবশ্যই সব রকম সভ্যতা-ভদ্রতা এবং শালীনতা বজায় রেখে।

আপনারা যারাই লেখার এতটুকু পর্যন্ত পড়েছেন, তারা হয়ত ভাবতে পারেন- আমার ছাত্র-ছাত্রী কিংবা প্রিয়জনের বর্ণনা কেন আমি এতো আয়োজন করে লিখতে গেলাম।

সামাজিক মনোবিজ্ঞানের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে আমার মনে হয়েছে- আমারা এমন একটা সমাজে বাস করি; যেই সমাজে আমরা কখনোই কারো ভালো দিক গুলো তুলে ধরি না। সেটা দেশে থাকা মানুষজন বলেন কিংবা বিদেশে চলে আসা বাংলাদেশিদের কথাই বলেন। আমাদের কাজ হচ্ছে- অন্যকে ছোট করে বেড়ানো কিংবা যে করেই হোক অন্যদের অনুৎসাহিত করা। আমি নিজেই ছোট থেকে বড় হবার সময় হাজার বার শুনেছি- ‘তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না!’ আর বিদেশে এসে অন্য বাংলাদেশিদের কাছে শুনি নাই, এমন কিছু নেই! আমাদের কাজই হচ্ছে অন্যদের ছোট করে দেখা!

আমি হয়ত সফল মানুষ হয়নি কিন্তু সেই আমিই তো এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। মানুষ হিসবে জন্মানোর সব চাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে- প্রতিটা মানুষের মাঝে রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। আবার সকল মানুষের মাঝেই ভালো-খারাপ গুণ আছে। যেই মানুষটা সিরিয়াল কিলার কিংবা খুনি; তার কি সবই খারাপ? তারও হয়ত ভালো গুণ আছে। সকল মানুষের মাঝেই ভালো গুণ রয়েছে।

সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের সমাজে আমরা কেবল মানুষজনের খারাপটাই দেখি। ভালো গুণগুলো বের করে আনি না কিংবা আনার চেষ্টা করি না। সবার মাঝেই তো সম্ভাবনা আছে। সেটা গ্রামের সাধারণ স্কুলে পড়া ছাত্র কিংবা ঢাকা শহরের নামকরা স্কুলে পড়া ছাত্র হোক। নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হোক কিংবা অতি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কেউ হোক।

কেবল দরকার চারপাশে এমন সব মানুষ- যারা কেবল খারাপ দিক গুলোই ধরিয়ে দেবে না। ভালো বিষয় গুলোও তুলে ধরবে। নইলে মানুষ হিসবে জন্ম নেয়া এতো সব অসীম সম্ভাবনা গুলোর যে অকালেই হারিয়ে যাবার ভয় থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ