২৩ মে ২০২০, ১০:৩৫

নিজের পরীক্ষা নিজে নেই, নিজের রেজাল্ট নিজে দেই

ড. তুহিন মালিক  © ফাইল ফটো

রমজান তো শেষের দিকে। মাসজুড়ে আত্মশুদ্ধি এবং তাকওয়ার প্রশিক্ষণ নিলাম। এবার নিজেকে একটু যাচাই করে নেই। যার যার চেকলিস্ট একটু মিলিয়ে নেই-

যাকে আমি অপছন্দ করি। চরম চক্ষুশূল। রমজান শেষে এই বিদ্বেষ ও ঘৃণার মাত্রা কতটুকু কমেছে?

•যাকে আমার হিংসা হয়। যার ভালো কিছু দেখলেই আমার অন্তরটা জ্বলে। রমজান শেষে সেই হিংসার মাত্রা কতটুকু কমেছে?

•’জীবনে একবার সুযোগ পেলে দেখে নিবো’- এই প্রতিহিংসার মাত্রা কতটুকু কমেছে?

•বিশ্বের তাবৎ বিখ্যাত বই-পুস্তক পড়ে শেষ। অথচ রমজানে আল্লাহর কিতাব কোরআন কতটুকু পড়েছি?

•নামাজ রমজানেও যেমন ফরজ। তেমনি সারাবছর ও সারা জীবনের জন্যও ফরজ। মনেপ্রানে এই উপলব্ধি ও সংকল্প কতটুকু করেছি?

•সুদ-ঘুষ-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। রমজানের পর এপথ থেকে কতটুকু সরে আসবো? নাকি বরাবরের মতই ঘুষকে স্পিডমানি, তদবির, সিস্টেম, পার্সেন্টিজ বা খরচাপাতি বলে নিশ্চিন্তে যথারীতি ‘নিজের জন্য জায়েজ’ মনে করবো?

•সুদকে ইন্টারেস্ট নাম দিয়ে সুদের অর্থনীতি, সুদের ব্যাংকিং এবং সুদভিত্তিক ব্যাবসা দেদার্ছে চালিয়ে যাবো?

•আমরা যারা আইনজীবী। আমরা কি আল্লাহ্ তা’আলার এ হুকুমকে তোয়াক্কা করবো?-— "অপরাধীদের সমর্থনে তর্ক করো না" (সুরা নিসাঃ ১০৫) -- “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং জেনে-শুনে মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।” (সূরা বাক্বারাহ: ১৮৮)

• যারা বিচারক। উপরের নির্দেশ, ফোনকল, তদবির বা ব্যক্তিগত লাভের আশায় মজলুমের হক নষ্ট করা থেকে নিজেকে কতটুকু নিবৃত্ত রাখতে পারবো?

• যারা রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। ক্ষমতাকে স্বর্ণের ডিমপাড়া রাজহাঁস মনে করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ইচ্ছামত লুটপাট করা থেকে কতটুকু সরে আসতে পারবো?

• যারা সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী। আল্লাহর এই বাণী আমাদের অন্তরে কতটুকু ভীতি সৃষ্টি করবে? ‘আর যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।’ (সুরা নিসা : ১১২) ‘নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর—এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল:৩৬)

• যারা রাষ্ট্রীয়, পেশাগত, দাপ্তরিক কিংবা যে কোন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত। নিজ নিজ দায়িত্বশীলতার জন্য আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হতে হবে- এই ভয় আমাদের মনে কতটুকু জাগ্রত হয়েছে?

•আল্লাহর হুকুম, ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও সুন্নাহর শ্রেষ্ঠত্বকে সত্যিকার অর্থে সর্বোৎকৃষ্ট মনে করে, ইসলাম বিদ্বেষীদের মনেপ্রানে ঘৃণা ও প্রতিহত করার কতটুকু সৎসাহস দেখাতে পারবো?

• যারা যুবক। ইন্টারনেটে বাজে ভিডিও দেখা, বন্ধু-বান্ধবীর সাথে অশ্লীল চ্যাটিং করা থেকে নিজেকে কতটুকু সংযত রাখতে পারবো?

•জুলুম, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, পরকীয়া, অশ্লীলতা, লুন্ঠন, অন্যায়-অবিচার ও গরীবের হক নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কতটুকু প্রতিবাদ জানানোর সাহস পাবো? হাদিসের এই কথার উপর কতটুকু আমল করতে পারবো? -— “তোমরা কোন অন্যায় দেখলে শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করবে। যদি সমর্থ না হও তাহলে কথার দ্বারা প্রতিবাদ করবে। এতেও সমর্থ না হলে মন থেকে তা ঘৃণা করবে। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।"

•জিহাদ ও হিজাবের মত কোরআনের সুস্পষ্ট বিধানকে প্রকাশ্যে আলোচনার কতটুকু সাহস অর্জন করতে পারবো?

আসুন, নিজেকে নিজে পরীক্ষা করি। নিজের পরীক্ষা নিজে নেই। নিজের পরীক্ষার রেজাল্ট নিজেই দেখি। রমজান মাসে আমরা যেভাবে জাহান্নামকে ভয় করেছি। বাকি ১১ মাসও যেন সেভাবেই জাহান্নামকে ভয় করতে পারি। আমি যেন শুধুই এক মাসের মুমিন না হই।