রমজানে ত্যাগের শিক্ষা বাস্তবায়ন হোক

জুবায়ের আহমেদ
জুবায়ের আহমেদ  © টিডিসি ফটো

করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী, বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনা। এই সময়ে সরকারী আদেশে ঘরে সময় কাটছে সকলের। দীর্ঘদিনের লকডাউনের পর সীমিত পরিসরে গার্মেন্টস, শপিং মল, মসজিদ সহ সব খোলতে পারার আদেশ দিলেও দিন দিন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকদের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে। জীবিকার তাগিদে অনেকেই ঘরের বাহিরে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না সকলে। আর করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের প্রকাশ্য কোন উপসর্গ না থাকার কারণে তাদের সংস্পর্শে আসা অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে।

গত ১৮ মে দেশে প্রথমবারের মতো একদিনে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়। একইসঙ্গে এদিন নতুন মৃত্যুরও রেকর্ড হয়। সম্প্রতি প্রতিদিন গড়ে হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর থেকে সহজেই অনুমেয় যে, করোনার প্রকোপ বাড়ছে দেশব্যাপী।

কোভিড-১৯ এর প্রভাব বজায় থাকার মাঝেই সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। রমজান সংযম, ত্যাগ, ধৈর্য্য এবং ঐক্যবদ্ধতার শিক্ষা দিলেও পবিত্র ইসলামের অনুসারী মুসলিমদের অনৈসলামিক কর্মকান্ড রমজান মাসেও বন্ধ হয়নি। সংযম ত্যাগের শিক্ষা এবং মতাত্মতা উপলব্ধি করতে পারেনি।

ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ, ত্যাগেই খুশি হন মহান আল্লাহ ও রাসুল (সঃ), তা বুঝে ব্যক্তি জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য রোজা রাখা ব্যক্তিদের অনেকেই প্রতিবেশীদের হক আদায় করতে পারছে না এবং দরিদ্র আত্মীয় স্বজনসহ মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করছে না ত্যাগ ও সংযমের মহীমা না বুঝায়। সেই সাথে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারামারি, হানাহানি এবং হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একাধিক সুযোগ সামর্থ্যবানদের সামনে। নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশীদের হক আদায় করা তার মধ্যে অন্যতম। সেই সাথে সাধ্যমত দরিদ্র মানুষদের সেবায় নিয়োজিত হওয়া এবং কর্মহীন হয়ে ঘরে জীবন-যাপন করা নিম্নআয়ের ভাড়াটিয়াদের মাসিক ভাড়া মওকুফের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের অন্যতম সুযোগ সামর্থবানদের সামনে। অনেকেই মানবতার সেবায় সাধ্যমত এগিয়ে আসলেও কঠোরতা অবলম্বন করা মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, যারা রমজানের রোজা রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টির চেষ্টা করলেও সংযম ও ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করছে না, মনকে দরিয়া বানিয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হতে পারছে না। অথচ সর্বোচ্চ সামর্থ থাকার পরও মানু্ষের বিপদে পাশে না দাঁড়ানো ব্যক্তিদের আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) পছন্দ করেন না।

রমজান শব্দটি আরবি রমজ ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ পুড়িয়ে ফেলা, দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া। সারা বছর আমাদের শরীর ও মনে যে আবর্জনার আস্তর জমে তা পুড়িয়ে ফেলে সুস্থতা আর শুদ্ধতা অর্জনের বার্তা দেয় রমজান। আর শুদ্ধতা অর্জনের জন্য স্বল্প পানাহার, রাগ, ক্ষোভ, গীবত লোভ, ক্রোধ পরিহারের মাধ্যমে সংযম করা জরুরী। যে সংযম পরবর্তী ১১ মাস বজায় থাকবে সকলের মাঝে। রাসুল (সঃ) বলেছেন, যে জীবনে রমজান মাস পেল কিন্তু তার ভুল-ত্রুটি অন্যায় পাপাচার থেকে বেরিয়ে আসতে পারল না, সে নিশ্চয়ই হতভাগা। কিন্তু রমজান আসলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের সংযমের অংশ হিসেবে রোজাদারদের জন্য সকল পণ্য সহজলভ্য করার বিপরীতে অধিক মুনাফালোভী মানসিকতা জাগিয়ে তোলেন। রমজানই ইনকামের উত্তম সময় নির্ধারণ করেন যা কাম্য নয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। আর রোজা মানেই শুধু সারাদিন অনাহারে থাকা নয়। রোজা মানে না খেয়ে থাকার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের খাদ্য কষ্ট বুঝে ভোগ বিলাসিতা পরিহার করে তাদের পাশে দাঁড়ানো। রোজা মানে গীবত, রাগ, ক্ষোভ, কাম, ক্রোধ তথা রিপু দমনের মাধ্যমে সংযত থাকা। রোজা মানে সকল ব্যবসায়ীদের পণ্য বিক্রয়ে ক্রেতাদের জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দেয়া।

রমজান অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়, খাবারের বিলাসিতা থেকে দূরে থেকে অসহায় প্রতিবেশীদের সাধ্যমত সহায়তার তাগিদ দেয়। কিন্তু রমজান আসলে রংবাহারি খারারের আয়োজন করাসহ হোটেল রেস্তোরায় ইফতার পার্টি ও সেহেরী নাইটের নামে অপচয়ে মত্ত থাকতে দেখা যায়, যা রমজানের সংযমের শিক্ষার বিপরীত। রমজানে নিজের সহজাত চাওয়া পাওয়ার হিসেব পূরণ না করে মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়া হতে পারে উত্তম কাজ। আর করোনা সংকটকালীন রমজানে নামাজ, রোজার পাশাপাশি লোভ লালসা, অশ্লীলতা, গীবত, অতিরিক্ত খাদ্য, অর্থের লোভ পরিহার করত: দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা হতে পারে সংযমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)


সর্বশেষ সংবাদ