গেস্টরুমের চাপে অজ্ঞান ইউনুস, কাপড় ধুতে দিলেন স্যার

মারুফ হোসেন
মারুফ হোসেন  © ফাইল ফটো

চলে এলাম মুহসীন হল ছেড়ে। ওবায়দুর ভাই গেস্ট হিসেবে আমাকে আরও কিছুদিন রাখতে পারতেন, কিন্তু আমি থাকিনি। নিজের হল বলে কথা। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে আমার ঠিকানা জিয়া হল সেখানে কেনো আমি অযথা মুহসীন হলে উপযাজক হয়ে যাযাবরের মতো থাকব?

পরেরদিন খুব সকালে ব্যাগ আর বেডিং নিয়ে ১১০ নং রুমে উঠে গেলাম। বলা বাহুল্য, আগের রাতেই আলামিন ভাই আমাকে ১১০ নং রুমে গেস্টরুম শুরুর আগে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে উঠেই দেখি ফ্লোরে প্রায় চল্লিশ জন গাদাগাদি করে শুয়ে আছে। এটাই গণরুম। অত সকালে ঘুম থেকে অনেকেই ওঠেনি। সবারই ঘুমের ঘোরে বেহাল দশা। একজনের নাকের সাথে আরেকজনের নাক লেগে আছে। একজনের নাক ডাকে তো, আরেকজনের অন্যকিছু ডাকে।

পড়ুন: ঢাবির হল জীবন পর্ব-১: ভাইরে কি ‘ধইঞ্চা’ মনে হয়?

১১০ নং রুমের সামনে আমি তখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে। ব্যাগ, বেডিং রাখার কোনো জায়গা নেই। এরই মাঝে সাতক্ষীরার শহীদুল্লাহ এসে হাজির।সে বুঝেছে আমি নতুন। তাই অনেকটা বড়ভাই স্টাইলের ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করল..
-‘কোন রুমে এ্যাটাচ?’
আমি থতমত হয়ে সালাম দিয়ে একমিনিটে অন্তত দশবার ভাই বলে সম্বোধন করলাম। অবস্থা বেগতিক দেখে শহীদুল্লাহ নিজেই স্বাভাবিক হয়ে বলল
-‘আমি তোমার বন্ধু।’ কিছুটা স্বস্তি পেলাম। রাগও হল। বন্ধু বড় ভাইয়ের ভাব নিলে তার কানের নিচে দিতে ইচ্ছে হয়। নিজেকে সামলে নিলাম। এরই মধ্যে শহীদুল্লাহ্ গণরুমের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করতে শুরু করল। এক পর্যায়ে সেও কেঁদে ফেলল। আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি । শহীদুল্লাহ্ বলেই চলেছে....

এই রুমে সাতচল্লিশ জনের এ্যাটাচ জানো?
-বাকিরা কোথায়?
কেউ টিভিরুমে, কেউ মসজিদের বারান্দায়।
-আমি থাকব কোথায়?
আপাতত ব্যাগ এখানে রাখো কেউ নেবে না, রাতে যেখানে জায়গা পাও ঘুমিয়ে যেও।
রাতের অপেক্ষায় রইলাম।

রাত দশটায় গেস্টরুম। সন্ধ্যার পরপরই বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভব করছি। গতরাতের দুঃসহ স্মৃতি বারবার মনে পড়ছে আর হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। সেদিন একটু তাড়াতাড়ি রাত দশটা বেজে গেলো। দোয়া ইউনুস, আয়াতুল কুরসি, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত এবং আরও যেসব দোয়া একজীবনে শিখেছি সবগুলো পাঠ করে বুকে ফুঁ দিয়ে গেস্টরুমে প্রবেশ করলাম।

গেস্টরুমে আজও গতরাতের মতো একই দৃশ্যের অবতারণা। প্রথমে গতরাতের স্টাইলে আজকে যারা নতুন হলে উঠেছে তাদের র‌্যাগিং থেরাপি দেওয়া হল। তারপর গতকাল যারা উঠেছে তাদের পালা। আমি গেস্টরুমে সবার পিছনে দেওয়ালের সাথে পিঠে ঠেঁস দিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম যাতে সোফায় বসা পলিটিক্যাল থেরাপিস্টরা আমাকে দেখতে না পায়। এবার গত এক সপ্তাহে যারা হলে উঠেছে তাদের থেরাপি নেবার পালা, তারাও নিল। তারপর পনের দিন ওয়ালাদের পালা। সবার একেবারে জবুথুবু অবস্থা। সবাই ভয়ে ঘামছে। আমাকে এই সময় বন্ধু ফাহিম খোঁচা দিয়ে বলল...

‘তুই না কালকে হলে উঠেছিস, সামনে যাসনা কেন?’
পরের অপমান দেখার নেশা সবার ভিতরেই কমবেশি আছে। সেটা বুঝে ওকে বললাম চুপ থাক, আমি পনের দিন আগে রুমে বেডিং রেখে গেছিলাম ।

এরই মধ্যে আমাদের ইউনুস গেস্টরুম থেরাপির ভয়াবহতা দেখে ভয়ে গেস্ট রুমের ভেতরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। ওকে তাড়াতাড়ি ধরাধরি করে বাইরে আনা হল। ওদিকে গেস্টরুম চলতে থাকল অবলীলায়। আজ গেস্টরুমে অতি উর্ধ্বতন বড় ভাইয়ের আগমন ঘটেছে। তাই গেস্টরুম চলবে রাত একটা কিংবা দুইটা পর্যন্ত। সে পর্যন্ত আমরা থাকব ঠাঁই দাঁড়িয়ে...। পা-গুলো বুঝবে ঢাবিয়ান হওয়ার কী জ্বালা!

গেস্টরুম শেষ করে শোবার পালা। কোথায় ঘুমাবো কিছুই জানিনা। শহীদুল্লাহ বলল তুমি বেডিং নিয়ে টিভিরুমে চলে যাও। মসজিদের বারান্দাও পূর্ণ। এরই মাঝে যশোরের একটা ছেলে পেলাম নাম খালিদ। সেও টিভিরুমের বাসিন্দা। খালিদকে পেয়ে জীবন ধন্য হয়ে গেলো আমার, এই প্রথম জীবনে এলাকা ইজমের স্বাদ পেলাম। সবার একই হাল, ক্যাম্পাসে এলাকাভিত্তিক সম্পর্কটা গাঢ় হয় বেশি।

টিভিরুমে গিয়ে দেখি সেখানেও প্রায় ভর্তি দরজার পাশে দুইটা বেঞ্চ জোড়া দিয়ে তার উপর শুয়ে গেলাম। জিয়া হলে আজ আমার প্রথম রাত। খুব আব্বার কথা মনে কথা পড়তে লাগল তখন। আব্বা, মা টম এন্ড জেরির মতন সারাদিন ঠুকাঠুকি বাঁধায় আর আমি রেফারি করি। সেসব ভাবছি আর ঘুমানোর চেষ্টা করছি। সারাদিনে এই প্রথম গা এলিয়ে দিয়ে নিজেকে তখন মনে হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান।

রাত তিনটায় লা লিগার ম্যাচ, রিয়াল-বার্সা। টিভিরুমে জোর আলোচনা মেসি সেরা নাকি রোনালদো? আমি ক্রিকেটভক্ত মানুষ। ওরা বলে মেসুত ওজিল, আমি শুনি ক্রিস গেইল। সেই রাতে মেসি, রোনালদো যতবার গোল দিলো ততবার টিভিরুমের দর্শকদের গগনবিদারী চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। মেসি, রোনালদোকে সেদিন থেকে মনে মনে খুব অভিশাপ দিতে থাকলাম ওদের পা ভাঙেনা কেন? ওদের কারণেই তো আমার ঘুম হয় না।

রাতের ঘুমটা শুরু হয়েছিলো ভোর পাঁচটায়। নয়টায় ঘুম ভেঙে দেখি মাথার উপরে একটা বিড়াল হাই তুলছে আর চেয়ারের নিচে একটা কুকুর ক্যান্টিনের পিছনের পঁচা ড্রেন থেকে একটা গো-হাঁড় নিয়ে এসে মনের সুখে চাটছে....

‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাস: এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা’
ঘুম থেকে উঠেই তড়িঘড়ি করে ক্লাসে চলে গেলাম। সকালে নাস্তা হয়নি। মনে হয় এই জীবনে প্রথম সকালে নাস্তা হল না। বাড়িতে মা প্রায়ই জোর করে সকালে খাওয়াতেন কিন্তু হল ক্যান্টিনের ডাবল মা’ ( মামা) রা কাউকে কোনোদিনই জোর করে না খেতে। এটা একটা ভালো দিক, খাওয়ার কোনো ঝামেলা নেই। খেতে ইচ্ছা হলে খাও না হলে মরো, কেউ কিছু বলবে না। এইখানে বলে রাখি, আমার পুরো হল জীবনে সকালে না খাওয়ার অভ্যাসটা ওই প্রথমদিনই হয়ে গেল। তারপর আস্তে আস্তে পুরো তিতাস গ্যাসের খনি হয়ে গেলাম আমি। ক্যাম্পাসে এমন অনেকেরই হয়।

লেকচার থিয়েটারের দুই তলায় ক্লাস। ক্লাস রুটিনে লেখা আছে লেথি-৩, লেথি-২ এরকম। মহা ঝামেলায় পড়লাম ক্লাস করতে গিয়ে। এই লেথির কোনো মিনিং করতে পারলাম না আমি। কলাভবনের নিচতলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা কুটে মরছি লেথির মিনিং উদ্ধার করতে। প্রথমত ভাবলাম লেথি দিয়ে হয়ত কোর্সের নাম বুঝাচ্ছে। এই যেমন লেথি-১ = লেমিনেটিং থিওরি-১ কিংবা লেটার থিওরি-১ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম চিন্তা হল।

পরক্ষণেই আবার ভাবলাম রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেমিনেটিং করা বা প্রেমপত্র লেখা শেখাবে কেন? তাহলে এই লেথি মানে নিশ্চয়ই স্যারদের নাম বুঝাচ্ছে। যেমন লেথি = লেকচারার থিওডর বা থিসারা। কিন্তু সব স্যারের নামই বা একরকম হবে কেন? তাও আবার নামগুলো বৃটিশ, সিংহলিজ মিলিয়ে আসছে। বাঙালি টাইপ হচ্ছে না কেন? নাহ এগুলো একটাও যুক্তিযুক্ত মনে হলনা। একটা অজানা ভীতি ভর করেছে আমার ভিতর, তাহলে কী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসটা আমার করা হবেনা? ভাবতে ভাবতে কলাভবন থেকে নিচে নামছি এমন সময় কে যেনো বলল ভাই লেকচার থিয়েটারটা কোনদিকে? তৎক্ষনাৎ আমার মাথায় ক্লিক করল লেথি = লেকচার থিয়েটার৷ ওয়াও.... পেয়ে গেছি।

চলে গেলাম ক্লাসে। স্যার এলেন। একটা ক্লাস হল প্রায় এক ঘন্টা ধরে। স্যার পুরো ক্লাসে ইংরেজিতে লেকচার দিলেন। বেশ ভালো লাগল। স্যারের সব কথা যে বুঝেছি এমন না, তবে ইংরেজি শুনে মনে হল আমিও একদিন এরকম ইংরেজি বলব। ক্লাস শেষের দিকে স্যার কেন জানি আমার দিকে এগিয়ে এলেন। ইনি নিয়মিত পানভোজী মানুষ। কানপুরী জর্দার একটা সেন্ট পেলাম। সাদা ধবধবে মধ্যবয়সী মানুষটা কাছে এসে আমার চোয়াল দুটো টিপলেন বেশ জোরে, তারপর বললেন ‘তুই অনেক কিউট, ক্লাসের পর চেম্বারে আমার সাথে দেখা করিস।’

স্যারের সাথে চেম্বারে দেখা করার কথা শুনে ভয়ে পুরো আধমরা হয়ে গেলাম আমি। গেস্টরুম থেরাপির কথা আবার মনে পড়তে লাগল। তাহলে কী এবার ডিপার্টমেন্টেও থেরাপি পাবো? পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কী এইসব থেরাপির উপর ভর করে চলে? ইত্যাদি নানান চিন্তা করছি আর ভয়ে চিটে চেপ্টা হয়ে যাচ্ছি। ভয়ে ভয়ে স্যারের পিছনে হাঁটছি। কলাভবনের নিচতলায় স্যারের চেম্বার। স্যার তালা খুললেন, আমি কাঁপছি। ঘরটা একটু অন্ধকার। ফাইলগুলোর উপর ধুলার চর পড়েছে। যেনো দেখার কেউ নেই। একটা চেয়ার দেখিয়ে স্যার বললেন এখানে বস...

তুই কী ভয় পাচ্ছিস?
-না স্যার।
তাহলে এক কাজ কর, বিজনেস ফ্যাকাল্টির সামনে থেকে এক ঠোঙা ঝাল মুড়ি নিয়ে আয়, সাথে একটা পান আনবি কিন্তু।
-জি স্যার।
টাকা নিয়ে যা।
-না স্যার।

বেয়াদোব ছেলে, টাকা নে, আমি কারো থেকে ফাউ খাওয়া লোক না। এসব করে আমার কাছ থেকে বেশি মার্কসের আশা করবি না কোনোদিন।
- জ্বি স্যার।
টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম, মনে মনে ভাবছি আমার সাথে নতুন করে আবার কী ঘটতে যাচ্ছে আল্লাহ মালুম।

ঝালমুড়ি আর পান নিয়ে ফিরেছি। স্যার বললেন বস..
তুইও খা।
- না স্যার।
বেয়াদোব ছেলে, আমি বলছি খা।
এক মুঠো মুড়ি খেলাম।
তুই গান গাইতে পারিস?
-জ্বি স্যার, মায়ের গান গাইতে পারি।
চুপ কর৷ আমার মা একটা ডাইনি, আমাকে এখনো শাসন করে। কোনো মায়ের গান শুনবনা আমি।
আমি চুপ।
তোর নাম কী?
মারুফ হোসেন, স্যার।
ওকে, তোকে একটা কাজ করতে হবে মারুফ।
- বলেন স্যার।
আমার এই শার্ট আর প্যান্টগুলো তোর হলে নিয়ে গিয়ে কেচে নিয়ে আসবি। পারবি তো?
- জ্বি স্যার।
এতক্ষণে বুঝলাম আমি কিউট না ঢেঁকি! আমার চেহারা নিশ্চয় ভৃত্য বা চাকরের মতো। তা না হলে স্যার অতোগুলো ছেলের ভিতর থেকে আমাকেই কেন বাছাই করবেন কাপড় কাচতে!

বললাম স্যার, তবে কাপড়গুলো আমি আজকে নিয়ে যেতে পারব না। কাল আসব নিতে। আজকে আমার একটু কাজ আছে।
-ওকে চল।
স্যার আর আমি কলাভবন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফুলার রোডের দিকে যেতে থাকলাম। পথে স্যার আমাকে বললেন, ভালোভাবে পড়ালেখা করবি আমি তোর পিছনে আছি।

স্যারকে বিদায় দিয়ে ভিসি চত্ত্বর পার হয়ে মল চত্ত্বরের বুকচিরে হলের দিকে যাচ্ছি। মনটা চরমভাবে আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার তাঁর ছাত্রকে দিয়ে কাপড় কাচিয়ে নেবে এ কোন সংস্কৃতি? শুনেছি অনেক শিক্ষার্থী এইসব শিক্ষকদের বাড়ির বাজার পর্যন্ত করে দেয়। কিন্তু আমি তো তা পারব না। তোষামোদি বা চাটুকারিতার বিষয়গুলো সারাজীবন চরমভাবে ঘৃণা করি আমি। মল চত্ত্বরে দাঁড়িয়েই আমার শিক্ষাগুরু এবং দীক্ষাগুরু আমার প্রাণপ্রিয় বাবাকে ফোন দিলাম। পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। বাবা বললেন তুই খবরদার আর কখনো ওই শিক্ষকের রুমে যাবিনা। আমাদের দিয়ে এসব তোষামোদি কোনোদিনই সম্ভবনা, এতে আমাদের কোনো লাভ তো হয়ই না বরং আরো ক্ষতি হয়।

চলে এলাম হলে। পরের দিন বাবার কথামত স্যারের চেম্বারে যায়নি। তারপর টানা দুই সপ্তাহ ওই শিক্ষকের ক্লাসও করা হলো না। ভাবলাম স্যার যেনো আমার চেহারাটা ভুলে যায়। এসবের প্রভাব এ্যাটেনডেন্সের খাতায় পড়ল। কোন রকমে ৬০% উপস্থিতি। প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল দিলাম। ৩.২৫ পেলাম। ডাবল গোল্ডেন পাওয়া ছেলেটা প্রথম সেমিস্টারেই শেষ হয়ে গেলো। অথচ এই ছেলেটাই ঢাবিতে ভর্তির দিন বাবাকে বলেছিলো ‘বাবা দেখো আমি একদিন ভার্সিটির টিচার হবো।’ বাবা সেদিন শুধু মুচকি হেসেছিলেন...

বলা বাহুল্য তারপর ওই শিক্ষক আমাদের আরও পাঁচটি সেমিস্টারে পড়িয়েছিলেন। এবং প্রতিটা সেমিস্টারেই স্যারের সামনে মুখ লুকিয়ে রাখতে হতো আমাকে, এই জানি চিনে ফেলে এই ভয়ে।

এরই মাঝে একটি আশাপূর্ণ দুঃখের ঘটনা হল, স্যার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত হলেন। পিএইচডি থেসিস জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগে স্যারকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। তার আগে স্যার আমাকে আমার জীবন থেকে বহিস্কার করে দিয়েছিলেন। স্যারের নামটি নাইবা বললাম। তবে আপনারা আলো দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে খুঁজলে স্যারের নামটি এখনও পেতে পারেন...

ফিরে আসি হলে। রাত দিন মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে এখন আমার দুটো কাজ। এক. ডিপার্টমেন্টে ক্লাস করা দুই. রাতে গেস্টরুম করা। দুটো কাজই ভয়ানক প্যারাময় হয়ে উঠল। তাই পড়ালেখাও শিকেয় তুলে রাখলাম। আর তিলে তিলে নিজেকে নিঃশেষ হতে দেখতে থাকলাম, ব্যপারগুলো কিছুটা এনজয়ও করতে শুরু করলাম৷ এরই মাঝে টিভিরুমে থাকতে বেশ কষ্ট হচ্ছে, দিনের পর দিন ঘুম হয় না। আমি শুকিয়ে যাচ্ছি সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু নিরুপায়।

এভাবে কয়েকমাস কেটে গেলো, মনে হলো যেনো একটু চালাক চতুর হয়ে উঠেছি। টিভিরুম ছাড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছি। এরই মধ্যে মসজিদের বারান্দা থেকে কে একজন বাড়ি গেছে বেড়াতে, খবর পেয়ে ব্যাগ, বেডিং সেখানে রেখে আসলাম। প্রথমে অনেকেই বাধা দিলো পরে কেউ কেউ রাজি হল। আমি মসজিদের বারান্দায় থাকতে পেরে নিজেকে এবার সত্যিই জান্নাতু নাইমের মেহমান মনে করতে লাগলাম।

জিয়া হল মসজিদের বারান্দার দিনগুলো আমার পুরো জীবনের সেরা সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং অসাধারণ কিছু মুহূর্তের সমষ্টি । পরবর্তী পর্ব শুরু হবে এই মসজিদের বারান্দা থেকে.... সে পর্যন্ত ভালো থাকুন।
চলবে...

লেখক: মারুফ হোসাইন, সাবেক শিক্ষার্থী, জিয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ