ঘাতকের ডেরা ২

উধাও হওয়ার দিন মাজেদের পিছু নেওয়া এরা কারা?

এমন চারজন সেদিন পিছু নিয়েছিল মাজেদের
এমন চারজন সেদিন পিছু নিয়েছিল মাজেদের  © বর্তমান পত্রিকা

এক ঝলক দেখলে যে কেউ ভুল করে তাঁদের কাবুলিওয়ালা ভাববেন। ষণ্ডামার্কা চেহারা। গালে ঘন কালো চাপ দাড়ি। ব্যাক ব্রাশ করা চুল। একজনের পরনে ডেনিম জিন্স আর নীল ফুল হাতা টি-শার্ট। অন্যজনের গায়ে বড় চেক শার্ট। দু’জনের হাতেই মোবাইল ফোন।

সিসিটিভি’র ফুটেজ ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর একটি ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ। সেখানে মিনিট আটেক কাটানোর পর ঠিক ১০টা ১২ মিনিটে যখন রিপন স্ট্রিটের দিকে মুখ করে ফের পথ চলতে শুরু করেন, তখন থেকেই তাঁকে অনুসরণ করা শুরু করে ওই দুই ব্যক্তি। পরে তাঁদের সঙ্গে আরও দু’জন যোগ দেন। মোট চারজন সেদিন পিছু নিয়েছিলেন মাজেদের। সিসিটিভি’র ফুটেজে সবার ছবিই ধরা আছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ও এসটিএফ-এর অফিসাররা পিছু নেওয়া ওই ষণ্ডামার্কাদের কাবুলিওয়ালা ভেবে প্রথমে ভুল করেছিল। উল্লেখ্য, মাজেদ ছোটখাট সুদের কারবারও চালাতেন।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ধরে এসে রাস্তা পার হয়ে এজেসি বোস রোডে আসেন মাজেদ। উদ্দেশ্য, বাস ধরা। গন্তব্য পিজি হাসপাতাল। এর পরের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ওই চারজন মাজেদের সঙ্গে কথা বলছে। তবে ক্যামেরা উন্নত না হওয়ায় কী কথা হয়েছিল, তা শোনার উপায় নেই। ঠিক তখনই মৌলালির দিক থেকে আসা একটি সল্টলেক-সাঁতরাগাছি রুটের বাসে উঠতে দেখা যায় মাজেদকে। যথারীতি সেই বাসে চাপেন ওই চারজনও। এরপর আর কোনও ফুটেজ নেই।

তদন্তে নেমে পুলিশ এজেসি বোস রোডের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছে। না, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বাস স্টপ থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত কোথাও বাস থেকে নামতে দেখা যায়নি আব্দুল মাজেদকে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র জানিয়েছে, মাজেদের মোবাইলের সর্বশেষ টাওয়ার লোকেশন ছিল মালদহ। যা থেকে গোয়েন্দাদের অনুমান, মাজেদকে ঘুরপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে প্রথমে গুয়াহাটি। পরে শিলং হয়ে ডাওকি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ যান তিনি। তবে তিনি স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, নাকি বাধ্য করা হয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মনে করা হচ্ছে, ট্রেন মালদহ স্টেশনের আশপাশে থাকাকালীন তিনি তাঁর মোবাইলটি একবার অন করেছিলেন।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ওই চারজন কারা? তাঁরা কি বাংলাদেশের কোনও গোয়েন্দা এজেন্সির অফিসার? সত্যিই এনিয়ে তদন্ত হাওয়া দরকার, বলছেন পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দারা।
কলকাতা পুলিশের অজান্তে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেল মাজেদকে? কেননা, আইনত কোনও বিদেশি গোয়েন্দা এজেন্সি বিনা অনুমতিতে অন্য দেশে ঢুকে অভিযান চালাতে পারে না।

বাংলাদেশ সরকারিভাবে ৭ এপ্রিল জানিয়েছে, করোনার ভয়েই মার্চ মাসের শেষদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি। বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজমের গোয়েন্দারা তাঁকে মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করেন।

এই যুক্তি অবশ্য ধোপে টিকছে না। কারণ ভারতে প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলে ৩০ জানুয়ারি। তাও আবার দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরলে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনি লুকিয়ে ছিলেন কলকাতায়। এখানে করোনা ধরা পড়ে ১৮ মার্চ। ফলে ২২ ফেব্রুয়ারি মাজেদ কলকাতা থেকে বাংলাদেশে যাবেন কেন?
আব্দুল মাজেদের নিখোঁজ হওয়া থেকে বাংলাদেশে তাঁকে গ্রেপ্তার—গোটা পর্বই রহস্যে ঘেরা। সেই রহস্যের কি আদৌ কোনওদিন কিনারা হবে? (চলবে)

পড়ুন শেষ পর্ব: নাম বদলে ভারতীয় পাসপোর্ট করেছিলেন মাজেদ, কিনেছিলেন ২৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাট

প্রথম পর্ব পড়ুন: ঘাতকের ডেরা ১: মাস্টারমশাই পরিচয়ে টিউশন করে সংসার চালাতেন খুনি মাজেদ!

-বর্তমান পত্রিকা থেকে


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence