গায়ে গা লাগিয়ে গ্রামে যাচ্ছে মানুষ, এখন কী হবে জানেন?

কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মিরপুরের ওই ব্যক্তির মেয়ে, মেয়ের জামাই এবং কাজের মেয়েও আজ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। করোনা ভাইরাস কতো সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেটা বুঝার জন্য বোধকরি এটাই যথেষ্ট। অথচ আপনারা কী করলেন? কাল ঘোষণা করলেন- সরকারি ছুটি!

পৃথিবীর আর কোন দেশ কি এমনটা করেছে? কোন দেশের মানুষজন কি মিডিয়ায় এসে বলেছে- আমরা সকারি ছুটি ঘোষণা করলাম! অথচ আপনারা এসে কি মহানন্দে ঘোষণা করলেন সরকারি ছুটি! এই যে মানুষজন এখন ট্রেন ষ্টেশন, বাস স্টেশন আর লঞ্চ ঘাটে ছুটছে, এদের কি কোন দোষ আছে? আমি তো কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না। আপনারা ছুটি দিয়েছেন, তারা ছুটি কাটাতে বাড়ি যাচ্ছে। সমস্যা কোথায়?

আপনারা ছুটি কেন দিয়েছেন, কী কী করনীয়, কোন কোন দিক-নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, এমন কোন কিছু কী ছুটি দেবার সময় বলেছেন? নাহ, বলেননি। যেখানে পৃথিবীর সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রতিদিন মিডিয়ায় এসে দেশগুলোর নাগরিকদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন, বাইরে বের হতে মানা করছেন; সেখানে আপনারা এসে কি করলেন? ছুটি ঘোষণা করলেন! এখন আবার শুনতে পাচ্ছি সব ট্রেন-বাস-লঞ্চ নাকি বন্ধ করে দিচ্ছেন আজ থেকে! এটা আগে কেন মনে হলো না? অবশ্য আপনারা নিজেরা তো আর কেউ এইসব যানবাহনে চলাচল করেন না। আপনাদের কোটি টাকা দামের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি আছে। তাই আপনারা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন- মানুষ গায়ে গায়ে লেগে ট্রেন, বাসে চড়ে গ্রামে চলে যাবে! এখন কী হবে জানেন?

এই মানুষগুলো গ্রামে যাবে, নিজ নিজ বাড়িতে যাবে; চায়ের দোকানে যাবে, হাটে-ঘাটে-বাজারে যাবে। পুরো দেশটায় করোনা ছড়িয়ে পড়বে! কারন বাংলাদেশে ঢাকাতেই সব চাইতে করোনা রোগী ধরা পড়েছে বেশি।

আপনাদের তো উচিত ছিল কাল এসে ঘোষণা করা- আমরা ঢাকা শহরকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছি। কেউ বের হতে পারবে না, ঢুকতেও পারবে না। কিংবা যেই যে জেলাগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি হতে পারে; সেই জেলাগুলোকেও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারতেন ১৪ দিনের জন্য। শুধু জরুরি চিকিৎসা এবং খাদ্য সেবা ছাড়া অন্য সব কিছু বন্ধ থাকবে। সেটা না করে আপনারা এসে মহানন্দে ছুটি ঘোষণা করলেন!

এখন শুনছি সেনাবাহিনী নামবে কাল থেকে। নেমে কি ফায়দা হবে? মানুষজন যদি ঘুরে বেড়াতেই পারে; তাহলে উনারা নেমেই বা কি করবে? আগেও বলেছি, এখনও বলি- এইসব কিছু করেই লাভ হবে না। বাংলাদেশের জন্য এক মাত্র সমাধান কারফিউ। সোজা কারফিউ জারি করুন। না হলে রক্ষা নেই!

আজ আবার শুনতে পেলাম ব্যাংকগুলো সকাল ১০টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে! আপনাদের মাথায় কি এই সামান্য বুদ্ধিটুকুও নেই? যদি খোলাই রাখেন, তাহলে পুরো দিন খোলা রাখনে, নইলে কিছু ব্যাংক খোলা রাখেন কিংবা পুরো বন্ধ করে দিন! এখন এই যে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখবেন; এতে কি হবে জানেন? মানুষজন এই দুই ঘণ্টায় শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে ব্যাংকে হাজির হবে। গায়ে গায়ে লেগে কেউ করোনা ছড়াবে, কেউ করোনা পাবে! এর চাইতে তো পুরো দিন খোলা রাখলেই ভালো। অন্তত সবাই এক সঙ্গে গিয়ে ভিড় করবে না। আপনারা যখন কোন পরিকল্পনা করবেন, আসলে আপনাদের মাথায় কী ঘুরাফেরা করে? এই সামান্য বোধবুদ্ধি টুকু কেন আপনাদের নেই?

এক্ষুনি যেটা করতে হবে, সেটাও বলে দিচ্ছি। দেশের জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম গুলোর স্থানীয় প্রতিনিধিদের বলে দিন- এই যে মানুষগুলো ঢাকা শহর থেকে কিংবা অন্যান্য শহর থেকে নিজ নিজ গ্রাম কিংবা বাড়িতে গিয়েছে- এরাও যেন ১৪ দিন হোম কোয়ারিন্টিনে থাকে। এরা যদি ঘুরে বেড়ায়, তাহলে পুরো দেশে করোনা ছড়াতে আর বেশি সময় লাগবে না।

মনে রাখবেন- করোনা এখন শুধু বিদেশিদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে না। এই যে কাজের মেয়ে, মেয়ের জামাই; এরা আক্রান্ত হয়েছে। এরাও নিশ্চয় ঘুরে বেড়িয়েছিল। এরপর এরা যাদের সংস্পর্শে এসেছে, তারাও নিশ্চয় ঘুরে'ই বেড়াচ্ছে! চক্রটা এমনই।

তাই এক্ষুনি নির্দেশনা দিন- এরাও যেন ১৪ দিন ঘরেই থাকে। আর সম্ভব হলে কারফিউ জারি করুন। না হলে এই দেশের মানুষজনকে ঘরে ঢুকানো প্রায় অসম্ভব।

লেখক: আমিনুল ইসলাম
বর্তমানে ইউরোপে শিক্ষকতা করছেন
সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ