‘মুজিববর্ষ’ হোক মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত সোপান

মুজিব বর্ষের লোগো
মুজিব বর্ষের লোগো  © টিডিসি ফটো

‘‘শিখবে শিশু হেসেখেলে,
শাস্তিমুক্ত পরিবেশ পেলে।’’

এই পরিবেশকে যথার্থ করতে সবার আগে প্রয়োজন স্কুলগুলোতে শিশুবান্ধব সময়সূচি। শিক্ষা একমুখী ব্যাপার নয়। এটা অবশ্যই বহুমুখী। যার একটি প্রান্তে অবস্থান করেন শিক্ষক। তাই পরিবেশ শিখন শেখানোর জন্য ইতিবাচক করতে হলে সব পক্ষেরই ন্যুনতম স্বার্থ বা সুবিধা নিশ্চিত করা অতীব জরুরী। আর শিক্ষকের জন্য ন্যূনতম সুবিধার মধ্যে একাধিক উপাদান জড়িত।

গুরুত্বের বিচারে প্রথমেই আসে শিক্ষকের বেতনভাতার কথা। বর্তমান সরকার অন্যান্য সরকারি পেশাজীবীদের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের বেতন বাড়িয়েছেন। কিন্তু নিজস্ব বিভাগেই শিক্ষকদের মধ্যে শোচনীয়ভাবে বৈষম্য করা হয়েছে। যা গত কয়েকবছর ধরেই শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে সরকারকে জানিয়ে আসছেন৷ সরকারও গত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে লিখিত ইশতেহার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অডিও কলের মাধমে এই বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বৈষম্য আগের মতেই! ফলে প্রতিটি শিক্ষকের মনে অমর্যাদা ও অপ্রাপ্তির চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ ‘মুজিববর্ষ’। তাই বিশেষভাবে আলোচিত। আর স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষকদের মনেও প্রত্যাশার পারদ উপরের দিকে। কিন্তু সেই পারদ অনেকটাই নিচের দিকে নামিয়ে দিল বিদ্যলয়ের নতুন সময়সূচি। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত রুটিনে এক শিফট ও দুই শিফট বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সকাল ৯টায় শ্রেণি পাঠদান শুরু করার বিষয়টি প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সাথে যেমন সাংঘর্ষিক তেমনি কাজের চাপে শিক্ষকদের জন্যও সময়টা প্রতিকূল। আবার পাঠদানের মধ্যে বিরতি ও বিদ্যালয়ের শেষ সময়েও এক ও দুই শিফটের বিদ্যালয়ের মধ্যে স্পষ্ট বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বেতন বৈষম্যের সাথে নতুন করে যোগ হওয়া সময় বৈষম্য গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে যে অন্যতম অন্তরায়-তা বলতে নিশ্চিতভাবেই গবেষক হতে হবে না।

আমরা শিক্ষকরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, নীতিনির্ধারকরা আমাদের সমাজ ও সংশ্লিষ্ট সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবান্ধব যৌক্তিক সময়সূচি পুনঃনির্ধারণ করবেন। এক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে সরাসরি কাজ করা শিক্ষকদের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যুক্তির আলোকে বিদ্যালয়ের সময়সূচি সকাল ৯টার পরিবর্তে ১০টা করা হোক। আর সব প্রাইমারি স্কুল ছুটির সময় করা হোক বিকেল ৩টা।

‘মুজিববর্ষ’ হোক প্রাণবন্ত, উচ্ছল ও বর্ণিল। প্রাপ্য ও প্রতিশ্রুত বেতন গ্রেড তথা সহকারী শিক্ষকের ১১তম এবং প্রধান শিক্ষকের ১০ম গ্রেড এবং বিদ্যালয়ে আগমন ও প্রস্থানের প্রত্যাশিত যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করে ‘মুজিববর্ষ’ হোক মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের কাঙ্ক্ষিত সোপান। সমৃদ্ধ হোক প্রাথমিক শিক্ষায় বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনের ক্ষেত্র। আমাদের বিশ্বাস, ‘মুজিববর্ষ’ হবে প্রাথমিকের অতীত ও বর্তমান সকল বৈষম্যের অবসানকারী।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বান্দরবান সদর


সর্বশেষ সংবাদ