গাম্বিয়ার মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় সু চি

মো. আবু রায়হান
মো. আবু রায়হান  © টিডিসি ফটো

সারা বিশ্বের শান্তি প্রিয় কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি এখন নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে। যেখানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মায়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি চলছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের জাতি বিনাশী নিপীড়ন ও নির্যাতনে স্বদেশ হতে উদ্বাস্তু হওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিগত তিন দশক ধরে মায়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থান করছে।

এ মুহূর্তে সব মিলিয়ে কক্সবাজারে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া মায়ানমারের আরাকানে ৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা মানবেতর জীবন যাপন করছে। গণহত্যা বলতে বোঝায়, জাতিগত, বর্ণগত, ধর্মীয় বা নৃতত্ত্বীয় গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত মানুষজনকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার ইচ্ছাকৃত কার্য।

মায়ানমার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সব অপরাধই সংঘটিত করেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি বিদ্বেষী গণহত্যার বিরুদ্ধে ১১ নভেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গাম্বিয়া মায়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে)মামলা দায়ের করে। একই সাথে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের ওপর বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, নিপীড়ন, জীবিকা ধ্বংস ও নিপীড়ন বন্ধে ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালতের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ চেয়েছে। মামলার পর গাম্বিয়া বিশ্বমিডিয়ার আলোচনায়।আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে প্রথম জেনোসাইড কনভেনশন মামলা হয়েছিল সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যকার সমস্যা। হঠাৎ করে গাম্বিয়া কেন মামলা করল? প্রথমত এর দুটো কারণ রয়েছে। এক: আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার সুযোগ রয়েছে। আর সে সুযোগটি গ্রহণ করেছে গাম্বিয়া। কেননা গাম্বিয়া ও মায়ানমার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সদস্য। বাংলাদেশ সদস্য রাষ্ট্র নয়।

দুই: ওআইসির ১৪তম সম্মেলনে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। ওআইসির পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান ছিল গাম্বিয়া। যার ফলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গাম্বিয়া।

এছাড়া গাম্বিয়ার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মায়ানমারকে দোষী প্রমাণিত করার চেষ্টায় গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিজের দেশে ২২ বছরের স্বৈরশাসন, রুয়ান্ডার গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের আদালতে কাজের অভিজ্ঞতা আর সবার শেষে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়ার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন।

এছাড়া বাংলাদেশের কৌশলগত ভূমিকার কারণে গাম্বিয়ার এই মামলা দায়ের। এর আগে আর্জেন্টিনার আদালতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), যেখানে মায়ানমারের বিরুদ্ধে এর আগে উত্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।

মালয়েশিয়া অবশ্য শুরু থেকেই রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কুয়ালালামপুরের পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামের একটি আন্তর্জাতিক গণআদালতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি, সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার করে দোষী সাব্যস্ত করে। ইসলামী দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির ৫৭টি সদস্য দেশ গাম্বিয়ার মাধ্যমে মায়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলার কাজে সহায়তা করে।

পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম ক্ষুদ্র মুসলিম প্রধান দেশ গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে জাতিসংঘে সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজে-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করে।গাম্বিয়া অভিযোগে বলেছে, মায়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘন করেছে। ১৯৪৮ সালের, সেই সনদটা ইন্টারন্যাশনাল ল’র একটি মূল অংশে পরিণত হয়েছে। কোন একটা রাষ্ট্র যদি মনে করে যে আরেকটা রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন মান্য করছে না তখন তারা আইসিজে'র শরণাপন্ন হতে পারে।

ইতোমধ্যে গতকাল বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে যা তিনদিন পর্যন্ত চলবে। এদিকে মায়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় সন্তুষ্ট নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। গতকাল তারা বাংলাদেশে তাদের শরণার্থী শিবিরে ন্যায় বিচারের আশায় প্রার্থনাও করেছেন। সারা বিশ্বের শান্তিকামী জনগণ নড়েচড়ে বসেছে। বসে নেই রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গ্রুপ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

বিশ্বের ১০টি দেশের ৩০টি মানবাধিকার, একাডেমিক ও অন্যান্য সংস্থা যৌথভাবে বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য মায়ানমারকে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে চাপে ফেলানো। এই আদালতের শুনানিতে বাংলাদেশ সরাসরি অংশ নিতে পারবে না তাই বাংলাদেশ তথ্য উপাত্ত দিয়ে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানিতে মিয়ানমার যাতে মিথ্যা তথ্য দিতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার বাদী গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে’তে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানিতে বাদী গাম্বিয়াকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল দ্য হেগে অবস্থান করছেন। তারা পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে উপস্থিত থাকছেন আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানিতে। এই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও রয়েছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসও সেই শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করছে।মায়ানমারের পক্ষে এই শুনানির জন্য অং সান সু চি নিজেই নেদারল্যান্ডের হেগে গেছেন।সুচির সমর্থনে মায়ানমারের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছে সেদেশের জনগণ।রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে গাম্বিয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।

গাম্বিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। গাম্বিয়ার রাষ্ট্রীয় নাম গাম্বিয়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র। আয়তন প্রায় ১০,৩৮০ বর্গ কি.মি. বা ৪,০০৭ বর্গমাইল। দেশটির আয়তন বাংলাদেশের ১২ ভাগের এক ভাগ এবং দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। গাম্বিয়ার ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলিম। জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। জনসংখ্যার বাকি ৫ ভাগ খ্রিস্টান বা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। তবে সংখ্যালঘুরা তাদের ধর্ম বাধাহীনভাবে পালন করতে পারে।

দেশটি আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ডের ক্ষুদ্রতম দেশ। এটি উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সেনেগাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। গাম্বিয়া একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র। গাম্বিয়া ১৯শ শতকে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে দেশটি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর দেশটি একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্র হিসেবে গণ্য হয়।

১৯৮২ সালে সেনেগালের সাথে একত্রিত হয়ে ‘সেনেগাম্বিয়া’ নামের একটি কনফেডারেশন গঠন করে। কিন্তু ১৯৮৯ সালে সে কনফেডারেশন ভেঙ্গে যায়। ১৯৯৪ সালে একটি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করে সামরিক নেতা লেফট্যানেন্ট ইয়াহিয়া জামেহ। জামেহ পরবর্তীতে গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হন। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর দেশটি শাসন করেন। ২০১৫ সালে গাম্বিয়াকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন তিনি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আরাকানের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢল নামে এরপর থেকেই এ সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আর আলোচনায় থেকেছে গাম্বিয়া। গত বছরের মে মাসে ঢাকায় মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের সংস্থা ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু তার দেশের নেতৃত্ব দেন। ঢাকায় বৈঠকে বসার আগে তিনি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন।

পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন রুয়ান্ডার গণহত্যার সঙ্গে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। কাজেই মিয়ানমারকে আদালতে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পর থেকেই মায়ানমারের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপের কথা ভাবতে শুরু করে ওআইসি।

এজন্য ইসলামি দেশগুলোর বৃহত্তম জোটটি আসিয়ানভুক্ত মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেইকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এসব দেশ সেভাবে এগিয়ে আসেনি। অথচ রোহিঙ্গা ঢলের পরপরই মায়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার নিয়ে উচ্চকণ্ঠে রয়েছে গাম্বিয়া।

তাই ওআইসি মায়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনি পদক্ষেপ নিতে গাম্বিয়াকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়।গত বছরে বাংলাদেশে ৩০ ও ৩১ মে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে শেষে গৃহীত ঢাকা ঘোষণার ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদে ওআইসির পক্ষে গাম্বিয়াকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

মূলত গত বছরের শুরু থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে গাম্বিয়া বিষয়টি ওআইসির বিভিন্ন ফোরামে তোলে। এরপর ওআইসি গাম্বিয়াকে মায়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করার দায়িত্ব দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়।রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি গাম্বিয়ার বানজুলে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গঠিত ওআইসির মন্ত্রীসভা বিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি এ নিয়ে আলোচনা করে।

বাংলাদেশ, সুদান, তুরস্ক ও জিবুতি, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, নিয়ে গড়া ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওই কমিটির বৈঠকে একটি খসড়া প্রস্তাব আনে গাম্বিয়া। সেই প্রস্তাব মার্চে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।এবছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠিত ওআইসি’র ১৪তম সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজে-এ তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য ওআইসি’র এড-হক মিনিস্ট্রিয়াল কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গাম্বিয়া এ কমিটির নেতৃত্বে থাকে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ওআইসির পক্ষে মায়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় গাম্বিয়া। ওই দিন নিউইয়র্কের বাংলাদেশের দূতাবাসে কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় গাম্বিয়া তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা উপস্থিত কূটনীতিকদের জানিয়ে তাদের সহযোগিতা কামনা করেছিলেন। অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা তাদের বেশি প্রয়োজন।

চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবাকার মারি তামবাদু একটি সেমিনারে বলেন, তামবাদুকে উখিয়ার জরাজীর্ণ শরণার্থী শিবিরে যারা তাঁকে দেখেছেন, তারা তার চোখের পানিও দেখেছিলেন। বক্তৃতায় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা আবার জানিয়েছেন ‘আমি যখন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাই, তখন দূর থেকেই গণহত্যার দুর্গন্ধ পেয়েছি আমি।

রুয়ান্ডায় চালানো গণধর্ষণ, হত্যা এবং গণহত্যার এক দশক পর রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার এই দুর্গন্ধ আমার কাছে পরিচিতই মনে হয়েছে।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধ আর গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত নুরেমবার্গ বিচারসভা বিচার শেষে খুব বড় গলায় বলেছিল ‘‘আর কখনোই না’’। আর কখনোই গণহত্যা হবে না, আমাদেরও আর বিচারে বসতে হবে না। বলা বাহুল্য, গণহত্যা বন্ধ হয়নি।

বাংলাদেশ বসনিয়া, কসোভো, রুয়ান্ডা, মিয়ানমার, গাজা, পশ্চিম তীর, সিরিয়া, কুর্দিস্তান, হালআফজা কিছু নাম জানা যায়, কিছু গোপন থাকে, বন্ধ হয় না গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ। এ বিচার কার্যক্রম চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।মামলার রায় পেতে স্বল্পতম আট সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ