দানের ফজিলত ও দুটি ঘটনা

প্রতিকী দান
প্রতিকী দান  © ফাইল ফটো

ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সাদকা বা দান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।দান করা একটি অতি মহৎ কাজ। ধনী গরীব ব্যবধান দূরীভূত করে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে দানের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। দান করতে বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক হতে হয় না। অল্প পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও দান করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট।দানের জন্য বিত্তের চেয়ে চিত্তের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও উদারতা বেশি প্রয়োজন। অনেকের ধারণা দান করলে সম্পদ কমে যায় এটি একটি ভুল ধারণা বরং সম্পদ বৃদ্ধি ও বরকত প্রাপ্ত হয়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সাদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।দানের ফলে বিপদ আপদ দূর হয়।মানুষের কল্যাণে নিজের অর্থ-সম্পদ ব্যয় বা প্রদান করাকে দান বলা হয়।Cambridge Dictionary তে দানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,"money or goods that are given to help a person or organization."

হযরত সালেম (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, শুধুমাত্র দু’জন লোকের ওপর ঈর্ষা করা যায়। একজন হলন সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন আর সে রাত দিন তা চর্চা করে। অপরজন হলেন যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন আর রাতদিন সে তা মানব কল্যাণে খরচ করে। (বুখারী)
দানের প্রতিদান আল্লাহ প্রদান করেন, কেননা আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন এবং তোমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করবে উহার প্রতিদান তোমাদেরকে পুরাপুরি দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি কোনপ্রকার জুলুম করা হবে না।

(সুরা আনফাল, আয়াত-৬০ ) দান করলে যে বালা মুসিবত থেকে মুক্ত থাকা যায় সেরকম একটি ঘটনা এবার বর্ণনা করছি। হযরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগের একটি ঘটনা।জনৈক এক ব্যক্তির বাড়ির পাশে ছিল একটি গাছ। সেই গাছে ছিল একটি পাখির বাসা।সেই বাসায় পাখিটি যখনই ডিম দিত তখনই লোকটি তা নিয়ে খেয়ে ফেলত। লোকটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন পাখিটি হযরত সোলায়মান (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করল। সোলায়মান (আ.) লোকটিকে ডেকে নিষেধ করে বললেন, আর কোনো দিন যেন ঐই পাখির ডিম সে না খায়। হযরত সোলায়মান( আ.)এর নিষেধ অমান্য করে লোকটি আবারো পাখির ডিম খেয়ে ফেলল।নিরুপায় হয়ে পাখিটি পুনরায় হযরত সোলায়মান (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করল। সোলায়মান (আ.) এক জিনকে নির্দেশ দিলেন- লোকটি এবার যখন গাছে চড়বে, তখন খুব জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে যেন নিচে ফেলে দেয়, যাতে লোকটি আর কোনো দিন গাছে চড়তে না পারে। এর পর একদিন লোকটি পাখির ডিমের জন্য গাছে উঠতে যাবে, এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে হাঁক দিল বাবা! কিছু ভিক্ষা দিন। তখন লোকটি প্রথমে ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করল। তারপর শান্ত মনে গাছে থেকে ডিম নামিয়ে খেয়ে ফেলল। পাখিটি আবার সোলায়মান (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করল। সোলায়মান (আ.) সেই জিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নির্দেশ পালন করলে না কেন? তখন জিন জবাব দিল, আমি আপনার নির্দেশ পালন করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।

এমন সময় পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুজন ফেরেস্তা এসে আমাকে অনেক দূরে ফেলে দিল। সোলায়মান (আ.) বিস্মিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, জিনটি বলল, আমি দেখলাম, লোকটি গাছে ওঠার আগে জনৈক ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করল। সম্ভবত এর বরকতে আল্লাহপাক তাকে আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। সোলায়মান (আ.) বললেন, হ্যাঁ সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। এ কারণেই সে তখন মহাবিপদ থেকে বেঁচে গেছে।( তাযকেরাতুল আম্বিয়া)
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা আয়াত - ২৬১ )এই আয়াতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ঘটনা এবার বর্ণনা করবো।হযরত আবু বকর (রা.) এর খিলাফত কালে একবার দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়। খাদ্যদ্রব্য একেবারেই দুর্লভ হয়ে পড়ে এবং মানুষের দুঃখ দুর্দশা চরম আকার ধারণ করে।সেই সময় হযরত ওসমান (রা.) এর প্রায় এক হাজার মন গমের একটি চালান বিদেশ হতে মদীনায় পৌঁছলো। শহরের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী হযরত ওসমান (রা.) এর কাছে এলেন। তারা তাঁর সমস্ত গমের চালান ৫০% লাভে ক্রয় করার প্রস্তাব দিলেন। সেই সাথে তারা এটাও প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, তারা দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণের দুর্দশা লাঘবের জন্যই এই গম ক্রয় করতে চান।

হযরত ওসমান (রা.) বললেন, “তোমরা যদি আমাকে এক হাজার গুণ লাভ দিতে পারো, তবে আমি দিতে পারি। কেননা অন্য একজন আমাকে সাতশো গুণ লাভ দিতে চেয়েছেন।”

ব্যবসায়ীরা বললো, “বলেন কি? চালান মদীনায় আসার পর তো আমরাই প্রথম এলাম আপনার কাছে। সাতশো গুণ লাভের প্রস্তাব কে কখন দিয়েছেন?”
হযরত ওসমান বললেন, “এই প্রস্তাব আমি পেয়েছি আল্লাহর কাছ থেকে। আমি এই চালানের সমস্ত গম বিনামূল্যে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করবো। এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে সাতশো গুণ বেশি পূণ্য দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।তখন হযরত ওসমান( রা.)কুরআনের সেই আয়াত তাদের স্মরণ করিয়ে দেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন -

মানুষ বলে আমার সম্পদ আমার সম্পদ অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। যা খেয়ে শেষ করেছে, যা পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং যা দান করে জমা করেছে- তাই শুধু তার। আর অবশিষ্ট সম্পদ সে ছেড়ে যাবে, মানুষ তা শুধু নিয়ে যাবে।” (মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, “প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন দানকারীর জন্য দু’আ করে বলো, হে আল্লাহ দানকারীর মালে বিনিময় দান কর। (বিনিময় সম্পদ বৃদ্ধি কর)” আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দু’আ করে বলেন, হে আল্লাহ কৃপণের মালে ধ্বংস দাও।” (বুখারী ও মুসলিম) আসুন বেশি বেশি দান সাদকা করে পূণ্য ভারী করি ও পরজীবনে কামিয়াবি অর্জন করি।আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তা চর্চা করে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের পালন কর্তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হবে না।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত -২৬২)।দান করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা আমাদের চিত্তকে উদার করে দেক। আমাদের দানগুলো হে আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।


সর্বশেষ সংবাদ